TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

কবিতা নির্মাণ: নেপথ্যে ১টি গাণিতিক মডেলের চেতনা | প্রথম পর্ব | রাহুল গাঙ্গুলী


প্রথম পর্ব: 

আজ অবধি, কবিতা নির্মাণের জায়গা থেকে; যে সকল লেখন-নির্মিতির ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ~ এদের মোটামুটি আমরা দুই-ভাগে ভাগ করতে পারি: (১) অটোমেটিক রাইটিং বা স্বয়ংক্রিয় লেখন এবং (২) পর্যবেক্ষণের ভিতর অতিক্রমণ নির্ভর কবিতার সৃজন নিয়ন্ত্রিত নির্মাণ বা ক্রিয়েটিভ রাইটিং থ্রু সেল্ফ-অবসার্ভেশন বা মুহূর্তের বিপরীতে কবিতা-মুহূর্ত আবিষ্কার। দ্বিতীয় পর্যায়টি আরো সহজ করে বললে; যেকোনো মুহূর্তেই বা প্রতিটি মুহূর্তই একেকটি কবিতা-মুহূর্ত। এসবের নেপথ্যে যে মনোবৈজ্ঞানিক প্রভাব ও প্রয়োগ রয়েছে, এটা সম্ভবত কেউই অস্বীকার করবেন না। অবশ্য উপরের দুটি ধারার সমান্তরাল একটি তৃতীয় ধারাও রয়েছে, যা: অনুসন্ধিৎসুতার; অর্থাৎ পর্যবেক্ষণ ও স্বয়ংক্রিয়তার যাপন মিলনে উৎপন্ন নির্মিতি। যদিও, এই সমান্তরাল তৃতীয় ধারার বিষয়টি নিয়ে বা উপরিউক্ত দুটি ধারা নিয়ে, এইপর্বে এই মুহূর্তেই বিস্তৃত আলোচনায় যাচ্ছি না। কারণ, এখানে শিরোনাম অন্য অর্থাৎ আলোচনাও ভিন্ন। এই লেখাটির উদ্দেশ্য, এমন দুটি কৌশলের কথা বলা; যার সাহায্যে আমরা দেখবো ~ কিভাবে, যেকোনো মুহূর্তেই একটি আদর্শ কবিতা রচনা করা যায়: কবিতার জন্য আলাদা করে, কোনো সময়ের অপেক্ষা ছাড়াই। হয়তো আপাতদৃষ্টিতে এখনই ধরতে অসুবিধে হবে, কিন্ত ‘সবুরে মেওয়া ফলে’— এই প্রাচীন বাংলা প্রবচনটির প্রতি ভরসা রাখলেই ভালো। 

অটোমেটিক রাইটিং বা স্বয়ংক্রিয় লেখনকে খুব সহজে বলতে গেলে, যা বলা যায় ~ কোনো একটি ঘটনা এমনভাবে ঘটলো, যে সচেতন অবস্থানটিকে ধাক্কা দিলো বা বলা ভালো জারিত করলো বিশেষভাবে। ফলস্বরূপ, অবচেতন অবস্থান এমন ১টি মুহূর্তে এমনভাবেই সক্রিয় হলো, যে সচেতন বা মূর্ত অবস্থানটির সাথে অবচেতনার সংযোগসাধন হলো একটি বিশেষ সেতু দ্বারা। এবং সেতুটির মধ্য দিয়ে পরিক্রমণকালীন পর্যবেক্ষণের প্রতিফলনটি, প্রতিফলিত হলো লেখনের মাধ্যমে। সহজ কথায় একটি বিশেষ কিছু লেখককে নিয়ে গ্যালো বিশেষ কোনো ব্যাখ্যাহীন বিমূর্ত মুহূর্তে, যেখান থেকে লেখক তাঁর বিশেষ বীক্ষণটিকে লেখায় লিপিবদ্ধ করলেন। অনেক সময়েই বহু লেখক (লেখিকা বলে আলাদা কোনো লিঙ্গভেদ রাখলাম না) বলে থাকেন, যে তাঁরা অপেক্ষা করছেন বিশেষ একটি বাক্যের বা শব্দার্থের জন্য, যা তাঁর চেতনাকে একটি বিশেষ ভাব-পর্যায়ে নিয়ে যাবে; ফলতঃ সেই উৎসটিই তাঁকে দিয়ে নির্মাণ কার্যটি সম্পন্ন করাবে। কিন্তু কিভাবে হয় এরকম? 

আসুন, আমরা একটু সহজবোধ্য উদাহরণ নিই। ধরা যাক, একটি স্বাভাবিক তাপমাত্রার ধাতুখণ্ডের প্রতি বাইরে থেকে ক্রমাগত অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ করা হলো। সে ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে ওঠবে, এবং একটা সময় এমন একটা অবস্থায় পৌঁছাবে ~ তপ্ত ধাতবখণ্ডটি নিজেই হয়ে উঠবে উজ্জ্বল এবং ক্যালোরিমিতির শর্তানুযায়ী নিজেকে চারপাশের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনতে, সে নিজেই তাপ বিকিরণ করতে শুরু করবে। এবার, এই ধাতবখণ্ডটি যদি মানুষের মন হয় / স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো তার সচেতন অবস্থান। বাহ্যিক তাপপ্রয়োগটি যদি এবার সেই বিশেষ বীক্ষণটি হয়, তবে ধাতবখণ্ডের ক্রমাগতভাবে উত্তপ্ত হওয়াটা হবে অবচেতনা অবস্থাননির্দেশক। এখন সেই তাপপ্রবাহ পরিক্রমণ পরবর্তী তার উজ্জ্বলতম অবস্থানটি যদি সেই বিশেষ স্বয়ংক্রিয় মুহূর্তটি হয়; তার বিকিরণ অবশ্যই স্বয়ংক্রিয় লেখনের নেপথ্যে থাকা চিন্তাভাবনার গঠন। এবং সেই বিকিরণ উপলব্ধ করাটা প্রতিফলিত লেখন ধরে নিতেই পারি। এই ধারণাকৃত লেখনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, নিজের চেনা স্বত্বার সময়-বলয় থেকে সম্পূর্ণ আপেক্ষিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে, এক অন্য স্বত্তার স্বতন্ত্র নির্মাণ। ত্যামনই, সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতম দিকটি হলো: রাইটার্স ব্লক। অর্থাৎ, মাঝেমাঝে শরীরের ইন্দ্রিয়গুলি যেগুলি বিকিরণের এককেকটি রিসিভার বা গ্রহীতার কাজ করে, তাঁদের বিশেষ ক্রিয়াকাজগুলি আংশিক সময়ের জন্য রুদ্ধ হয়ে যাওয়া; ফলস্বরূপ নিষ্ক্রিয় গ্রহীতার বিশেষ অনুভূতির পর্যায়ে না যাওয়া। সহজ কথায়, সেই বিশেষ শব্দার্থ/বাক্য/বাক্যাংশের তৈরি না হওয়া; যা গোটা লেখন-ক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করে তোলে। এরকম অবস্থায় আমরা বহু শিল্পী বা সাহিত্যিকদের কাছে শুনে থাকি “মাথায় কিছু আসছে না”।

এবার, একটু দ্বিতীয় ধারাটি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। এখানে, লেখন-ক্রিয়া কোনো স্বয়ংক্রিয় অবস্থায় যাবার জন্য অপেক্ষা করে না। সে নিজে থেকেই ও শুরু থেকেই স্বনির্মিতির প্রতি আগ্রহশীল। অর্থাৎ, পূর্বোক্ত ধারণায় থাকা নিজের স্থিতিশীল অবস্থানকে অস্বীকার করে, লেখন-ক্রিয়ার নেপথ্যে থাকা চিন্তাভাবনাগুলি সচেতনভাবেই শুরু থেকেই আলোড়িত/আন্দোলিত অবস্থানে থাকে। এখানে তার অবচেতনার কোনো প্রত্যক্ষ প্রভাব নেই। ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা অজস্র না-দেখাগুলিকে লেখন-ক্রিয়াটির মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করাটাই শিল্পের প্রধান ও প্রাথমিক পর্যায়। এখানে আমরা উদাহরণ হিসেবে সেই শিল্পীর কথা ধরতেই পারি; যিনি সাধারন ও অমসৃণ একটি পাথরেরখণ্ডকে বা একখণ্ড মাটির তালকে বিভিন্ন টেকনিক বা কৌশলের সাহায্যে এমন একটি বিশেষ আকার প্রদান করেন, যা পরিণত হয় জীবন্ত প্রতিচ্ছবির রূপে।

এই পর্যায়ে কোনো মুহূর্তের বিশেষ প্রভাব বা চারপাশের পরিবেশগত প্রভাব, বিরাট কিছু প্রত্যক্ষ ভূমিকা বহন করে না, কেবলমাত্র কৌশল অবলম্বনই প্রধান শর্ত। এই কৌশল হিসেবে, বর্তমানকালে প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে অনেক কাজ চলছে বিশ্বে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি প্রয়োগের কথা এখানে বলতে চাই। অর্থাৎ এমন একটি সফটওয়্যার নির্ভর প্রোগ্রামিং; যেখানে কয়েকটি শব্দের নির্বাচন এবং পূর্বে লিখিত কবিতার ধারাটি বাছাই করলেই একটু নতুন কবিতার নির্মিতি সম্ভব। অর্থাৎ আরো সহজ কথায় শিল্পী জানেন কী নির্মাণ করতে হবে এবং সেই নির্মাণটির জন্য কি কি উপকরণ প্রয়োজনীয়। এই পর্যায়ে নির্মিতির প্রকৃতি আগে থাকতে নির্দিষ্ট বা পূর্ব নির্ধারিত। অবশ্য এই পূর্ব নির্ধারিত সুনির্দিষ্টতার রূপান্তর ঘটিয়ে কিছু নতুনত্বের সম্ভাবনা এখানে অবশ্যই পরোক্ষভাবে নিহিতো। এরকমই, পূর্বোক্ত ধারণায় থাকা স্বয়ংক্রিয় লেখনকে যখন আলাদাভাবে বিভিন্ন কৌশলগত সহায়তায়, নির্মিতির রূপরেখা প্রয়োগের ভেতর দিয়ে পরিক্রমণ ঘটানো হয় ~ কিছুটা নতুনত্ব সম্ভব হয় বই কী। এই পর্যায়ে, কবি যা লেখেন সেটিই কবিতা। নতুনত্ব যদি এই ধারাটির সবচেয়ে বলিষ্ঠ দিক হয়; সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গাটি হলো ~ খুব সহজেই কোনো সুনির্দিষ্ট ধারার প্রতি প্রভাবাধীন হয়ে পড়া, যা অতি অবশ্যই স্বতন্ত্র কবিতাভাষা থেকে লেখনকে বিচ্যুত করে। তবে, এই ধারাটিকে নিয়ে কাজ করতে গেলে যে পূর্ববর্তী কবিতা-ধারণাগুলির সাথে সম্যক বা সরাসরি পরিচয় রাখতে হবে এবং তার প্রয়োগগুলি জানতে: তা নিশ্চিতভাবেই বলার অবকাশ রাখে না। এই পর্যায়ের দৈনন্দিন অভ্যাস সঠিক থাকলে, রাইটার্স ব্লকের কোনো সম্ভাবনাই নেই।

যাঁরা লিখছেন, মূলতঃ কবিতার ক্ষেত্রে অধিকাংশই এই রূপান্তরকরণটিকেই অনুসরণ করেন: স্বয়ংক্রিয় লেখন যার প্রাথমিক কাঠামো এবং তারপর পূর্বে লিখিতো কোনো কবিতাধারাকে অনুসরণ বা কখনোকখনো কৌশলগতো প্রয়োগ হিসেবে অবলম্বন করে, সেই প্রাথমিক কাঠামোটির পরবর্তী নির্মিতি পর্যায়। এই কৌশলগত বিষয়টির একটি সম্ভাব্য উৎস বলতে গেলে, স্মৃতিচারণা করা যেতে পারে ~ বিংশ শতকের ‘ডাডাবাদ’ বা উনবিংশ শতকের ইউরোপিয়ান সাহিত্যের ‘টাইপোগ্রাফি এফেক্ট’। আন্তর্জাতিক কবিতায় ‘ডাডাবাদ’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মূল বক্তব্য ছিলো “যেকোনো ধারার সৃজন থেকে, নতুন রূপকল্প প্রয়োগে ভিন্ন ধারার শিল্প সৃষ্টি।” যেমন, ১টি পূর্বলিখিত কবিতা থেকে, নতুন রূপকল্পনা ব্যবহার করে নতুন ধারার কবিতা রচনা সম্ভব। পরে, এই বক্তব্য নির্ভর করে “Found poetry” বা “অনুসন্ধিতো কবিতা”, “Black poetry” বা “কালোদৃশ্যের আবহ-কবিতা” ইত্যাদি বহু উপধারা গড়ে উঠেছিল। অপরদিকে “টাইপোগ্রাফি এফেক্ট” বলতে গেলে, ফরাসি কবি স্টিফেন মালার্মে, ইটালিয়ান কবি গ্যিলুইমে অ্যাপলোনেইর বা পরবর্তীকালে মার্কিন কবি ই ই কামিংস প্রমুখের কথা বলতে হয়। যদিও, এসব ছাড়া আরো অজস্র ধারা-উপধারা বিশ্ব সাহিত্যে রয়েছে। বাংলা কবিতাতেও আমরা শ্রুতি ও অন্যান্য বিভিন্ন ধারার কবিতা দেখেছি। যেহেতু কবিতার বিভিন্ন ধারা আলোচনা, এই লেখাটির মুখ্য উদ্দেশ্য নয়; অতএব ওপরে উল্লেখিত কয়েকটি ধারা স্রেফ উদাহরণ হিসেবেই রইলো।

এবারে, এই দুই ধারার সমান্তরাল তৃতীয় ধারাটি নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করা যাক। আগেই বলেছি, এই ধারাটি হলো “অনুসন্ধান” নির্ভর; সুতরাং এই ধারাটিকে অনুসরণ করার আগে, ওপরের দুই ধারায় লেখা ছাড়াও লেখনী-যাপনকে হওয়া দরকার সুতীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ নির্ভর। যাপনে থাকতে হবে সুনির্দিষ্টতার বিপরীত ধার থেকে নতুনকে জানার সুতীব্র খিদে এবং প্রতিমুহূর্তে প্রয়োগের মাধ্যমে আত্মীকরণের নিয়ন্ত্রণবিহীন বিকাশ, কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই।

এই ধারাটি সম্পর্কে বলার আগে আমরা একটু ফুটবলের কথা বলতে পারি। গত শতাব্দীর ৭০'র দশকে, বিশ্ব ফুটবলে আলোড়ন তুলেছিল বিখ্যাত ফুটবল চিন্তাবিদ এবং কোচ রেনেশ মিশেল উদ্ভাবিত হল্যান্ডের “টোটাল ফুটবল বা প্রেসিং ফুটবল”। যার ভিত ছিল দুটো অংশের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, বিপক্ষের পায়ে বল থাকলে সকলে মিলে তাদের তাড়া কর এবং নিজেদের পায়ে বল থাকলে, নিজেদের ভেতর পাস খেল যাতে নিজেদের বাইরে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের পায়ে বল না যায়। ফলতঃ, এই ফর্মেশন বা কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় ছিলো দ্বিতীয় অংশটি: কোনো নির্দিষ্ট পজিশন বা স্থানে কোনো খেলোয়াড় নেই এবং প্রতিটি খেলোয়াড়কে হতে হবে সৃজনশীল। অর্থাৎ, প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো খেলোয়াড়কে মাঠের যেকোনো প্রান্তে খেলতে হবে এবং তাকে হতে হবে এতোটাই দক্ষ যে; আক্রমণ ও রক্ষণে সে সমানভাবে নিপুণ। প্রসঙ্গত, আরো একটি উদাহরণ নেওয়া যায়: বিখ্যাত মার্শাল আর্টিস্ট ব্রুস-লি'র লেখা বই ‘তাও অফ জিৎ কান দো’ বইটিকে। যেখানে, মার্শাল আর্টের নেপথ্যে থাকা বৌদ্ধিক জেন-তত্ত্বের সাথে মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনের কথার সাথে তুলনায়, আলোচনা করা হয়েছে জলের নিরাকার বৈশিষ্ট্যের কথা। জল, যার নিজস্ব আকার নেই কেবল প্রবাহ আছে; আবার যে আধারে থাকে তার আকার ধারণ করতে পারে। যাকে আঘাত করা যায় না, কেবল তার আধারকে আঘাত করা যায়।

সম্প্রতি, “ক্যানো কবিতার পরিবর্তে শব্দরূপ লিখি” সম্পর্কিত ছোট্ট একটি নোট লিখেছিলাম; শিরোনাম ছিলো “শব্দরূপ: অনভ্যস্ত অতিচেতনার প্রকাশ & প্লাজমা কেন্দ্রিকতা”। সেখানে যা ছিলো: অপার অতল এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, প্রতিমুহূর্তে অগোচরে অকপটে ঘটে যাচ্ছে কতই না কিছু। কারুর শিরোনাম আছে, কারুর নেই। এই সমস্ত ঘটনাবলিকে নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকা: প্রাণ & বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব মেলবন্ধন। কবিতা এসবের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কবিতা কখন কেবলমাত্র ভাববাদী কৃত্রিমতার একক নয়। বরং তা আরো বেশি কিছু। পদার্থ য্যামন তার প্লাজমার স্তরে এসে, এমন ১টি বিশেষ বহুমাত্রিক হয়ে ওঠে, যেখানে তার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলির পরিবর্তন শুরু হয়। অর্থাৎ, তার প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের একক, নিজস্ব কিছু স্বশাসিত শর্তাবলীর ভিত্তিতে পদার্থটির নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। কবিতাও ত্যামনই। যেকারণে, কবিতার নির্মিতি সম্ভব যেকোনো সময়েই & তা মূলত পর্যবেক্ষণ ও অনুভবের সূক্ষ্মতা নির্ভর। এ ১টি বোধের পরিক্রমা; যেখানে সৃজনের ভিত্তি হলো আবিষ্কার। আর, কবি হলেন গবেষক & সাধকের যৌথ সমন্বয়ের সমসত্ত্ব আধার। আর, এর জন্য প্রয়োজন দৃষ্টি ও আলো। সেকারণে, কবিতা সৃষ্টি'র চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ “শব্দরূপ”। অতীতে, কিছু কথা বলেছি; আজও বললাম: তবে বিষয়টি বহু বিস্তৃত & বহুরৈখিক। হয়তো কখনো সম্ভবপর কারণগুলি ঠিকঠাক থাকলে, এবিষয়ে আরো কিছু কথা বলা যাবে। শব্দরূপ ১টি প্রক্রিয়া; যেখান থেকে যাপনের পরিক্রমা শুরু: নিজের অন্তরতম অংশ/অংশাণু পেরিয়ে পারমাণবিক স্তর ভেদ করে প্লাজমা-স্তরে। উপরোক্ত দুটি ধারার তুলনায় যদি বলি: দ্বিতীয় ধারাটির মতো ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি অংশই কবিতা, প্রতিটা অংশে ঘটা ক্রিয়া-বিক্রিয়া কবিতা। কেবল, সেই কবিতার আবিষ্কার সম্ভব; নতুন করে কোনো সৃষ্টি সম্ভব নয়। আর তার জন্য যাপন ও যাপনকেন্দ্রিক চেতনা এমন একটি পর্যায়ে অবস্থান জরুরী ~ অনেকটা স্থিতিশীলতাকে অস্বীকার করে, শুরু থেকেই ধাতবখণ্ডটি বিকিরণের জায়গায়।

আসলে, ওপরে উল্লিখিত প্রতিটি ধারাই একটি মনোবৈজ্ঞানিক প্রসেস বা প্রক্রিয়া নির্ভর। যদিও, এসব আলোচনা লেখাটির মূল উদ্দেশ্য নয়; মূল উদ্দেশ্যটি হলো দ্বিতীয় ধারার অন্তর্গত দুটি অভ্যস্ত কৌশল বা টেকনিক প্রয়োগ করে কবিতা রচনা করা: প্রাথমিক রূপরেখাগত কাঠামো থেকে হিউম্যান টাচ দ্বারা কীভাবে তার সম্ভাব্য বিকাশ; এটি দেখানো। তবে, কিছুটা ভূমিকা বা প্রস্তুতি না থাকলে: লেখাটির চালিকা-স্বরূপটিকে বোঝা একটু সমস্যা হতে পারতো; তাই কিছুটা প্রস্তুতির জন্যই, একটু শুরুর কথা বলা হলো। আর একটি কথাও এবার বলে রাখা দরকার: এখানে নির্মিত কবিতাদ্বয়'কে অবশ্য কেউ ইচ্ছে করলে ~ তৃতীয় ধারানুযায়ীও করা সম্ভব; তবে সেখানে টেকনিকগুলি প্রয়োগে চূড়ান্ত অভিনবত্ব রাখতে হবে। কবিতায় ঘটাতে হবে চূড়ান্ত বিবর্তন। আর আমরা এই কৌশল বা টেকনিক হিসেবে ব্যবহার করবো গণিত বিষয়টিকে।

আমরা জানি গণিত হলো এমন একটি ব্যবহারিক ভাষা-মাধ্যম, যার সাহায্যে আমরা ঘটমান যেকোনো ঘটনাবলীকে আমাদের অভ্যস্ততা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যাখ্যায় প্রকাশিত করার চেষ্টা করতে পারি। এখানে আমরা দুটি গাণিতিক মডেল নেবো এবং প্রতিটির স্ব-প্রয়োগে, আমরা দুটি কবিতা রচনা করবো। প্রথমটি গণিতের একটি জ্যামিতিক সূত্রকে নিয়ে এবং দ্বিতীয়টি ডিজিটাল প্যালেনড্রোম বা কয়েকটি সংখ্যা দিয়ে একটি প্যালেনড্রমিক মডেল তৈরি করে। এখানে, নির্মিত কবিতাগুলি একটি উদাহরণ স্রেফ। এগুলিকে যেকেউ অন্যভাবে ভাবতেই পারেন। আসলে তথ্যপ্রযুক্তি পরবর্তী এই সময়পর্বটির একটি বৈশিষ্ট্য হলো “দৃষ্টি পাল্টালে, দৃশ্য পাল্টাবে”। আসুন বন্ধুরা, আমরা এবার লেখাটির কেন্দ্রের দিকে এগোই।


    [আগামী বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে দ্বিতীয় পর্ব]       


• ‘আগামীর কবিতা কিছু নন-প্যারালাল ইনডেক্স’ পর্ব: দুই | রাহুল গাঙ্গুলী
• ‘আগামীর কবিতা কিছু নন-প্যারালাল ইনডেক্স’ পর্ব: তিন | রাহুল গাঙ্গুলী
• ‘আগামীর কবিতা কিছু নন-প্যারালাল ইনডেক্স’ পর্ব: চার | রাহুল গাঙ্গুলী
• ‘আগামীর কবিতা কিছু নন-প্যারালাল ইনডেক্স’ পর্ব: পাঁচ | রাহুল গাঙ্গুলী
• ‘আগামীর কবিতা কিছু নন-প্যারালাল ইনডেক্স’ পর্ব: ছয় | রাহুল গাঙ্গুলী
• ‘আগামীর কবিতা কিছু নন-প্যারালাল ইনডেক্স’ পর্ব: সাত | রাহুল গাঙ্গুলী



রাহুল গাঙ্গুলী। কবি ও প্রাবন্ধিক। জন্ম: ১০ই আগস্ট ১৯৮১, দুর্গাপুর, পশ্চিমবঙ্গে। পেশা: সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কিছু কথা: কোনো মহাপুরুষ হয়ে দেওয়ালে ঝুলবার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, নিজেকে আবিষ্কার তথা সময়কে আবিষ্কারের ভিতর দিয়েই যোগ ও যাপন। ভালোবাসা, প্রেম, ঘৃণা বা প্রতিবাদ ~ সময় তথা নিজের কাছে : যে কোনো সৎ সূক্ষ্ম অথবা স্থূল প্রশ্ন করার অধিকার এবং নিজের কাছেই সমাধান, সেই বিশ্বাস নিয়ে দীর্ঘ চিন্তনের প্রতিফলনে লিখে যাওয়া অনুরণিত কবিতা। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘নো ম্যানস্ ল্যান্ড’ (কবিতা পাক্ষিক) ২০১৭, ‘ব্যক্তিগত জরায়ু থেকে’ (ঐহিক) ২০১৮, ‘খাদ্য-খাদক-খাদ্য’ [অনলাইন বই] (ফেরারি) ২০১৮, ‘১ মুঠো জলীয় দূরত্ব ভেঙে’ (টার্মিনার্স) ২০১৮, ‘কবিতাবিহীন মুহূর্তগুলো’ (তাবিক) ২০১৯, ‘পরিত্যক্ত ০|র খোঁজে’ (ঘোড়াউত্রা) ২০২০।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ