TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

‘আগামীর কবিতা কিছু নন-প্যারালাল ইনডেক্স’ পর্ব: দুই | রাহুল গাঙ্গুলী


পর্ব: দুই

৮. কবিতা ও সময় কিছু আন্তরিকতা:

সময়কে প্রশ্ন করা বা সমকালীন অর্থনীতিকে কাউন্টার করেই বিভিন্ন দর্শন ও ভার্শন এসেছে। এটা শিল্পের বহুমাত্রিক দিক বিশেষ। একটা নির্দিষ্ট সীমানা পর্যন্ত বিনোদন— তারপর আরো বৃহৎ কিছু। পাঠক এটিকে বেশীরভাগ সময় ভোলেন বা প্রত্যাখ্যান করেন। তাই বলেন জটিল, অশ্লীল ইত্যাদি। কবির চেতনায় নিশ্চয়ই কোনো ট্রমা আছে— তাই কবি একটি শব্দ বা ভার্শন বলছেন— যা এই সমাজ ও সময়ে অপ্রকৃতিস্থ। কিন্তু উনি তো পাগল নন। এটুকু পাঠক বিচার করেন না। এখানেই উঠে আসে কবির ব্যক্তিগত অভিযোজনের প্রসেস।


৯. কবিতায় অরাজনৈতিকতা:

কোনো কবিতা বা বলা ভালো শিল্প— অরাজনৈতিক নয়। মগজে যতোই ঘুণপোকা থাকুক। জেহাদ শব্দটি চিরকালীন। প্রসঙ্গাতরে তার মানে প্লাটায়। সীমাবদ্ধতা পেরোলেই তা কোনো না কোনোভাবে রাষ্ট্র ও সমাজগত প্রকাশের হাতিয়ার ভাষাকে চ্যালেঞ্জ জানায়— বকলমে রাষ্ট্র ও সমাজকে। প্রসঙ্গক্রমে বাংলা কবিতার বিবর্তন একটু ঘুরে দেখা যাক।


১০. বাংলা কবিতার ক্রমবিবর্তন:

সাধারণত বাংলা সাহিত্যের প্রশ্নে নানান কথা ও ভার্শন ও ভার্চিয়সলিটি উঠে আাসে।

ধরা যাক— একজন শিক্ষকের অবস্থান...

উনি যতটুকু পড়ালেন— তা কিন্তু মোমবাতির আলোয় যতটুকু দেখা যায়। কিন্তু সেই আলোর বাইরে অজস্র কালো আছে।

এখন কোনো কবি সেই সঙ্গমরত অবস্থানে যদি কালোকে কালো বা অন্য কিছু বলতে চান— পাঠক ভাবেন তার পাজড়া খসছে— সাহিত্য শেষ।

আদৌ উনি কি ভেবে দেখেন— সঠিক সহমাত্রা কি?

নাকি সেই রাষ্টশক্তি ও সমাজ পরিচালিত "হীরক রাজার দেশ"— বেশি কথা ভালো নয়। বেশি চিন্তন আরো মারাত্মক।

১) প্রাথমিক ভাবে বিশ্ব সাহিত্যে প্রথম যে দর্শনটি আধুনিকতাবাদিদের মাঝে ছিল— অবস্থানকেন্দ্রিক ও তার রূপক প্রকাশ।

যেমন কেউ ছিলেন প্রেমের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ (মেলোডি), কেউ ছিলেন যন্ত্রণার প্রকাশ (মেলানকলিক), কেউ প্রকাশ করতেন প্রকৃতিবাদ (নেচারবাদ) প্রভৃতি।

ইংরেজি সাহিত্য যেমন শুরু হয়েছিল কয়ার ভিত্তিক তেমনি বাংলা সাহিত্যে ছিল পয়ার, পদাবলী, প্রভৃতি নানান টেক্সচারের।

ইউরোপিয়ান দার্শনিক ভিত যেমন ছিল কান্ট বা হেগেল-এর ভার্শন, বাংলা সাহিত্য ছিল বেদ ভিত্তিক। কিন্তু চূড়ান্ত রূপ ছিল না। এখানেই ২য় পর্যায় জন্ম নেয়।

২) অতীন্দ্রিয়তাবাদ:

মূলতঃ কয়েকটি দর্শনের ধারাকে আঁকড়ে ধরে বিশ্বসাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে নানান সময়ে— তা হলো পাশ্চাত্য দর্শন (অ্যানসিয়েন্ট বাইবেল ভিত্তিক), প্রাচ্য দর্শন (বেদ ভিত্তিক), ইসলামিক দর্শন (কোরান ভিত্তিক), বৌদ্ধ দর্শন (গৌতম বুদ্ধের বাণী ভিত্তিক), সমাজতান্ত্রিক দর্শন (মার্ক্সবাদ ভিত্তিক)।

যদিও এর সবকটিই শুরু এক সমান্তরাল রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশের প্রয়োজনীয়তায়।অতএব আত্মিক দর্শনমূলক অতীন্দ্রিয়তাবাদের ক্ষেত্রেও (মার্ক্সবাদী দর্শন ছাড়া) একটি সূক্ষ রাজনৈতিক অবস্থানকে অস্বীকার করা যায় না।

এদেশ থেকে রবীন্দ্রনাথ এবং পাশ্চাত্যে খলিল জিব্রাল— দুটি গুরুত্বপূর্ণ নাম, যারা অতীন্দ্রিয়তাবাদকে চূড়ান্ত প্রস্তুতি দেন।

কবিগুরুর দার্শনিক ভিত যেখানে বেদ নয়— বেদান্ত ভিত্তিক, খলিল জিব্রাল সেখানে ইসলামিক ও বাইবেলীয় ভিত দুটো নিয়েই লিখেছিলেন।

৩) উপরিউক্ত দুটি ধারার সঙ্গেই যে দুটি শিল্পধারা চোখের সামনে উপস্থিত হয়— মার্ক্সবাদী ধারা ও অ্যাভো-গার্দো ধারা, যদিও সাহিত্যে এ-দুটির আত্তিকরণ ঘটেছে বহু পরে।

৪) এরপর যে-ধারাটি আসে— দুয়েন্দ্যে ধারা। যেখানে দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে থাকবে দুটি বিষয়কে (যা দ্বন্দের মূলকথা) একটি ভিন্ন বিষয়ে উপস্থাপন, যেখানে দুটিই সমভাবে চলতে পারে।।

—উপরের (৩) এবং (৪) নং বিষয় মূলত আমাদের আধুনিক থেকে উত্তর-আধুনিক স্তরে নিয়ে যায়। এ-বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ৫০-এর দশক।

৫) ৫০-দশক বিশ্ব সাহিত্যে এক অতিব গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ এই দশকের সৃষ্টি সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদী সাহিত্যকে চ্যালেঞ্জ করে। যা অতীন্দ্রিয়তাবাদ বা অবস্থানকেন্দ্রীকরা রেখে গেছেন। যদিও এটি বিরাট যুক্তিতর্কের বিষয়। তবে একটি কথা প্রমাণিত ৫০দশক বা পরবর্তী সাহিত্যকে কখনো সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বলা হলো— সভ্যতার বৈশিষ্ট্য দুটি বিশ্বযুদ্ধের কার্য ও কারণ। দেখা হলো সমাজতান্ত্রিক রূপ।

লুথারপন্থী দর্শন স্তর ও বিট কালচার— এ বিষয়ে সকল দৃষ্টিকে সামনে নিয়ে আসে। এদেশেও সেই বিট কালচারের অ্যালেন্স গ্লিন্সবার্গএর অনুপ্রেরণা উল্লেখযোগ্য।

৬) ওদিকে বিট্ কালচার আর এদেশে সৃষ্টি হল কৃত্তিবাস। পুরনো চিন্তা (রবীন্দ্র সাহিত্য ও অতীন্দ্রিয়তাবাদ) ভেঙ্গে নতুন সৃষ্টির চিন্তন গড়ে উঠলো।

৭) কৃত্তিবাস ও পদাতিক কিন্তু নব্য দৃষ্টিতে সাহিত্যকে সৃষ্টি করলেও সীমাবদ্ধ ছিল কয়েক জায়গায়। যদিও পদাতিক কবিতার রাজনৈতিক ভার্শন ছিল চোখে পড়ার মতো।

আর এখানেই চরম কুঠারাঘাত আনলো ৬০-এর দশকে হাংরি কবিরা। এখানে অনেক কিছুই বলার মতো আছে তবে তা এই স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়।যদিও দু-একটি না বললেই নয়।

শুরু হল গোপনীয়তার আত্ম-ক্রিটিসাইজেশন। মলয় রায়চৌধুরি, সমীর রায়চৌধুরির সাথে নতুন গতি নিয়ে এল ফাল্গুনী, শৈলেশ্বর, সুবিমল।

এরা সকলে হাংরি১ জেনারেশন। ৬২–৬৩তে হাংরি আন্দোলন শেষ হয় আপাতদৃষ্টিতে। কিন্তু না। পরে আসে হাংরি ২ প্রজন্ম। এখানে উল্লেখযোগ্য সন্দীপন, অরুনেশ। সন্দীপনদার সম্পর্কে অনেক লেখা আছে বা অনেকেই অবগত। কিন্তু দু-এক কথা অরুনেশদার সম্পর্কে বলতে চাই। ওনার “শব ও সন্ন্যাসী” একটা নতুন জীবন ভঙ্গি দেখায়। কবিতায় আসে নিউ ডাইমেনশন। আত্ম-দর্শনের এতো উচ্চ স্তর উত্তরবঙ্গের এই প্রান্তিক কবির পর এসেছে কি না সেভাবে জানা নেই।

৮) ধ্বংসকালীন কবিতার জেনারেশন:

হাংরি ১ প্রবলভাবে বাংলা ভাষার ভিত নাড়িয়ে দেওয়ার কিছু সময়ের পরেই শুরু হলো এই জেনারেশন ও তার কবিতা। শ্রদ্ধেয় প্রভাতদা (প্রভাত চৌধুরি) লিখলেন— “আমি মেফিস্টোফিলিস”। শুরু হলো দ্বন্দ্বকে আত্তীকরণের নতুন অধ্যায়। যদিও হাংরি বা ধ্বংসকালীন কবিতা পাঠককে সেভাবে আকৃষ্ট না করার কারণ হিসাবে থাকতে পারে— পাঠকের মেলোডি প্রভাব থেকে মুক্ত না হয়ে ওঠা, যা আজকোও ক্রমবর্তমান। এই অবস্থায় বিশ্ব-ইতিহাসে চলছে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক শিবিরের মহাবিতর্ক— রাশিয়া বনাম চীন। ক্রুশ্চেভ বনাম কমরেড মাও। যার ফলস্বরূপ..........

৯) ১৯৬৭— বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ:

শুরু হলো পুরনো চিন্তা ও ধারণার বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলন ও প্রতিবাদ নকশালবাড়ি পথ। কলকাতা দেখলো শোধনবাদের বিরুদ্ধে রাজপথ উপচে পড়া ছাত্র আন্দোলন। সারা ভারতবর্ষ খুজে পেল এক নতুন আলো। বিশ্ব সাহিত্যে লাতিন আমেরিকা ও মধ্য এশিয়া থেকে উঠে আসলো একের পর এক সংগ্রামী কবিতা, উঠে এলো চেবাদ।

১০) সত্তরের দশক— মুক্তির দশক। বিশ্ব সাহিত্য ও ইতিহাস দেখলো রাজনৈতিক কবিতা। শহিদ হলেন কমরেড দ্রোণাচার্য ঘোষ (কবি)। কিছুকাল আগে দ্রোণাচার্য ঘোষের একটি ডায়রি প্রকাশিত হয়— পড়লে দেখা যাবে অ্যানার্কিস্ট চিন্তনের বিকাশ।

রাজনৈতিক কবিতা পরেও অনেক বদলেছে— কিভাবে? একটি উদাহরণ নেওয়া যাক।

৭০এর দেশব্রতীর কোনো সংখ্যায়,

“আমি এক রণক্লান্ত সৈনিক/চারিদিকে মোর অসংখ্য চৈনিক/হে বন্ধু একটা রাইফেল দাও/আমি লড়বো সেই বৃত্তের মধ্যে/যার মধ্যমণি কমিউনিস্ট।”

৯৮-এর বিপ্লবী যুগ সংখ্যায়,

“পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমনভাবে মার— যেন কালশিটে দাগ থাকে/কালশিটে দাগ থাকে সর্বত্র/এমন ভাবে মার— যাতে তোমার মারের পালা শেষ হলে/আমাকে দেখায় ডোরাকাটা বাঘের মতো।”

দুটি উদাহরণ থেকে বোঝা যায় রাজনৈতিক কবিতা স্টেন্টমেন্ট থেকে কিভাবে বেরিয়ে যায়।।

১১) ৮০'র দশক উত্তর-আধুনিকতা:

৭০’র রেখে যাওয়া একগুচ্ছ প্রশ্ন, অন্তহীনতা, মৌনতা যুক্তিবাদকে পাথেয় করে লিখতে শুরু করলো কিছু তরুণ কবি। উল্লেখযোগ্য হিসেবে উঠে এলো কৌরব ও কবিতা পাক্ষিক। উঠে এলো দীপঙ্করদা, বারীনদা, ফজলদা, মুরারিদা প্রমুখ। উত্তর-আধুনিকতা পথ চলতে শুরু করলো। সৃষ্টি হলো স্ট্রিট কবিতা।

১২) নবারুণ সাহিত্য ও ৯০দশক:

৯০’র দশকের দুটি গুরুত্বপূর্ন দিক— দুই জার্মানির মিলন ও সমাজতান্ত্রিক শিবিরের আপাত পতন। ছাপ রাখলো শিল্প ও সাহিত্য। চীনের তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার ঘটেছে। প্রশ্ন শুরু হলো এতো দিনের রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে। এখানেই এক ছাপ রাখলো নবারুণ ভট্টাচার্যের সাহিত্য। বাংলা সাহিত্যের অভিজাত গর্বে থাবা বসালো সাব-অল্টার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ ও রকের ভাষা। খুলে গেল নতুন দিক। যে ভাষায় কথোপকথন সে ভাষায় কবিতা কেন নয়?ঢুকলো ইংরেজি শব্দ। আগ্নেয়গিরি হলো ম্যাগনাম ওপাস।

১৩) শূন্য দশকের নতুন দিক:

এই দশকের এক নতুন দিক হলো নতুন করে রাজনৈতিক সমীক্ষণ। বিশ্ব সাহিত্যে উঠে এলো ওয়াল স্ট্রিট মুভমেন্ট। বাংলা সাহিত্য খোঁজ করলো নিউ এজ ভাষা ও ভার্শন।

বাংলা সাহিত্যে মূলত দুটি দর্শন উঠে আসে এ-সময়।প্রথমটি যদি আই.চিন্তন বা তথ্য কবিতা হয় দ্বিতীয়টি পুনরাধুনিকের পথে। রূপক নয় চললো ইমেজারি প্রয়োগ।

আই.চিন্তন বিষয়ে কবি সৌমিত্র রায়ের চ্যাটমোড এক অন্য পথের খোঁজ দেখায়। উঠে আসে ছেদ কবিতার কথা।

তেমনি নতুন কথা বললো শূন্যকাল, অন্যনিষাদ, বাক। শুরু হলো ওয়েবের যুগ— ব্লগজিন। এই দশকে অ্যাভো-গার্দো শিল্প চূড়ান্ত মাত্রা নিয়ে আমাদের সামনে উঠে আসে। বাংলা কবিতা চ্যালেঞ্জ করলো তার এতদিনের লালিত পালিত সিলেবাসকে।

শুরু হলো ভিস্যুয়াল পোয়েট্রির যুগ।

এই জায়গায় যেমন mকোলাজ (বহুজনে মিলে কবিতা) তেমনি কবিতাডিহি কাজ করলো ম্যাথ পোয়েট্রি। যেখানে মোদ্দাকথা হলো ম্যাথামেটিক্স ও ম্যাথামেটিকাল সাইন ইস নাথিং বাট দ্যান ভিস্যুয়াল লাইফ।

যদিও ম্যাথ পোয়েট্রি নিয়ে বিশ্বে বেশ কিছু কাজ হয়েছিল এবং বাংলা সাহিত্যে প্রথম কাজ করেছিলেন সম্ভবত কবি বিনয় মজুমদার।

১৪) শূন্য দশকের দ্বিতীয় অধ্যায়:

সাবেকিয়ানার দেওয়াল ভেঙ্গে নতুন শব্দের খোঁজ এই দশকের গুরুত্বপূর্ণ দিক। যেখানে শব্দ ও চিন্তনের কোনো লিনিয়ারিটি বা ডাইমেনশন্ নেই। যেখানে ভুল বানানেরও সামগ্রিক অর্থ আছে।

কবিতাডিহি দেখাল নতুন কাজ ভিস্যুয়াল পোয়েট্রির উপর।

সে শব্দ দিয়ে কবিতা ও কবিতার তুলিবদ্ধ রূপই হোক বা পাজল কবিতাই হোক। পাঠককে আর আলদা করা হলো না কবির থেকে। কবির কবিতাকে চূড়ান্ত অর্থপূর্ণ আকার দিলেন পাঠক।

এই বিষয়টি নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়। যা এই স্বল্প পরিসরে না হলেও হয়তো পরবর্তীকালে বলা যাবে।


১১. চূড়ান্ত মানববোমার প্রস্তুতি কেন:

আগেই লিখেছি শুরুতেই— কবিতার চূড়ান্ত রূপ রাষ্ট্রশক্তি ও সমাজের মূল চালিকা ভাষাকে চ্যালেঞ্জ জানানো। সে কারণেই কবিতা এখন শুধু বিনোদন নয়— আরো বেশি কিছু।

প্রয়াত ঋত্বিক ঘটকের একটি কথা মনে পড়ে যায়— “শিল্পকে পাশবালিশ করে আঁকড়ে থাকলে তা শিল্পের অপমৃত্যু ছাড়া কিছু নয়।”

কিছু স্বরচিত কথা বলাই যায়— শ্রেণিশত্রুর তকমা নিয়েই

মদ ও পর্ণ ছাড়া— এইমুহূর্তের সব কয়েকটা শুকনো ও বীর্যহীন অনুতাপে অযুত রকেটগামিতা।
তুমিও আকারহীন— যেমন এই কবিতাটাও.....


অথবা

:ফু মন্তরে— ভূমীহীন চাষিটি একলব্য।
বলদের জায়গায় মন্দাকিনীর সেই ব্রেসিয়ারটা।
তাপ্পিমারা। সবুজ হলুদ। কমলা কমলা।
ব্যাকরণ পাল্টাচ্ছে— শব্দবহ শবের নাম-কীত্তনে।

অথবা

পোয়াতির ব্যথা উঠলে— একচামচ ফলিডল দাও।
কাঙ্ক্ষিত পাগলটা— মাইরি। ডিসটেম্পার বাড়ি।
বাঘছালি মিনি স্কার্ট। সলিড মাখন থাই— ফুলোফুলো
খোলো একবার। স্বাধীন ভারতবর্ষ ও ফিলগুড দেখি।


অথবা

বেশ তো চোবাচ্ছ। চৌবাচ্চায় কুয়োর কিতকিত।
হাত মারলেই শান্তি। মাই দোলানোর পুজোয় অহেতুক চাক্কা জ্যামারের খুংশুটি— বেতারকেন্দ্রে ফুসকুড়ি নামের মহাকাব্য। কোনোটাই কবিতা নয়।।


উপরিউক্ত সবকটি লেখাই চূড়ান্ত রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতাকে কাউন্টার করে। তাই কবিতা ও কবির জটিলতা— অশ্লীলতা, এগুলোকে খোলশা করার জন্য কিছু লেখার কিছুটা প্রকাশ।


১২. শেষের কথা:

যদিও শেষের কথা বলে কিছু নেই। তবু একটা দাঁড়ি টানতেই হয়। তাই বলবো এখন কবিতা ওপেন এন্ডেড, ডেড এন্ডেড নয়। এই লেখাটি তখনই জীবন্ত যখন— চেতনা ও অনুভূতি এক মুক্ত অবস্থান নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও এর আলোচনা করবে।

কম পরিসরে ও ব্যক্তিগত সময়াভাবে শূন্য দশকের কবিতার কথা সেভাবে বলা হলো না— অনেক কথা মগজের ট্যাঙ্কারে রয়েই গেল। ইচ্ছে আছে পরবর্তীকালে সেগুলো বলার।

অনেক গুণী-মানুষের নাম করলাম না লেখায় তা লেখার স্বল্পতার কারণেই শুধু। পাঠক যা বলতে চেয়েছি বুঝবেন আশা করি।

• পর্ব: এক পড়তে এই লেখাটির উপর স্পর্শ/ক্লিক করুন


[ধারাবাহিক: আগামী শনিবার পাওয়া যাবে পর্ব: তিন]


রাহুল গাঙ্গুলী। কবি। জন্ম তারিখ: ১০ই আগস্ট ১৯৮১, দুর্গাপুর, পশ্চিম বঙ্গে।
পেশা: সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
কিছু কথা : কোনো মহাপুরুষ হয়ে দেওয়ালে ঝুলবার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, নিজেকে আবিষ্কার তথা সময়কে আবিষ্কারের ভিতর দিয়েই যোগ ও যাপন। ভালোবাসা, প্রেম, ঘৃণা বা প্রতিবাদ ~ সময় তথা নিজের কাছে : যে কোনো সৎ সূক্ষ্ম অথবা স্থূল প্রশ্ন করার অধিকার এবং নিজের কাছেই সমাধান, সেই বিশ্বাস নিয়ে দীর্ঘ চিন্তনের প্রতিফলনে লিখে যাওয়া অনুরণিত কবিতা
প্রকাশিত গ্রন্থ:
নো ম্যানস্ ল্যান্ড’ (কবিতা পাক্ষিক) ২০১৭, ‘ব্যক্তিগত জরায়ু থেকে’ (ঐহিক) ২০১৮, ‘খাদ্য - খাদক - খাদ্য’ [অনলাইন বই] (ফেরারি) ২০১৮, ‘১ মুঠো জলীয় দূরত্ব ভেঙ্গে’ (টার্মিনার্স) ২০১৮,
কবিতাবিহীন মুহূর্তগুলো’ (তাবিক) ২০১৯,
পরিত্যক্ত ০|র খোঁজে’ (ঘোড়াউত্রা) ২০২০।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. আহা! অপেক্ষা সার্থক হল। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। লেখক ও সম্পাদক দুজনকেই ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।