TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

মোক্তার হোসেনের ছড়া


 মানুষ ক্ষতি কী 

মরলে মানুষ ক্ষতি কী
মানুষের তো অভাব নাই
বাড়ছে মানুষ নিত্যদিন
মানুষ ধরার জায়গা নাই

মন ভালো না? মানুষ মার
মানুষ মারা খুউব মজা
খোশ মেজাজে মানুষ মার
তরিকাটা খুউব সোজা

মানুষ খুনে - নোবেল পায়
নোবেল টোবেল বিষয় না
দশ বিশ লাখ মুসলমান,
হিন্দু মারাও মন্দ না !

মরলে মানুষ ক্ষতি কী
মানুষের তো অভাব নাই
মুখোশ পরা খুনির দল
খুনির দলে মানুষ নাই


ফাউল-টাউট-চিটার

আমরা শালার এত্তোবড় ফাউল,
বস্তা ভইরা লবণ কিনি-
ঘরেতে নাই চাউল!

সাত টাকাতে এক জিবি খাই
চ্যানেল টিপে সানি,
তার ফাঁকে কী চুক্তি হলো
সেই খবর কি জানি!

আমরা শালার এত্তোবড় টাউট,
নিজের নাকটা কাইটা করি-
অন্যের লাইফ টু..ট!

এক লাফেতে মঙ্গলে যাই
সাব মেরিনে ঘুরি,
এক নিমেষে দেশ হয়ে যায়
এই ফাঁকেতে চুরি!

আমরা শালার এত্তোবড় চিটার,
দেশের টাকায় চামচা রাখি-
জুতার তলা চাটার!


বারে গিয়ে চা খাই

দেশটাই ক্যাসিনো—জুয়া খেলা চলছে
খেলা নাকি হলো শেষ—মতি মিয়া বলছে
যদু বলে ফাজলামি—ধোকা খেলো বোকারা
এর মাঝে ঝেড়ে কাশে—দেশ ছাড়া কাকারা
পাবলিক মহা বিজি—ভাববার টাইম নাই
এই ফাঁকে চল্ শালা—বারে গিয়ে চা খাই

কলমের খোঁচা দিয়ে—লুটপাট চলছে
ভাগ যোগ করে কেউ—দেশ নিয়ে খেলছে
ঘুনপোকা বসে আছে—বড় বড় চেয়ারে
ফেরি করে দেশ বেচে—ভিনদেশী ফেয়ারে
পাবলিক মহা বিজি—ভাববার টাইম নাই
এই ফাঁকে চল্ শালা—বারে গিয়ে চা খাই

নীতি কথা এই যুগে—বলে আর লাভ কী?
দ্যাখ দ্যাখ পাতি নেতা—ওরে বাবা ভাব কী!
দেশ আজ ভরে গেছে—সাধু বেশী বানরে
লুটপাট করে তাই—যাই পারো আনো রে
পাবলিক মহা বিজি—ভাববার টাইম নাই
এই ফাঁকে চল্ শালা—বারে গিয়ে চা খাই


লেট আস এনজয়

দেশ জুড়ে চলিতেছে 'বেশরম' সন্ধান
খবিশের-পিশাচের চলিতেছে বাগদান
চাটাচাটি-তোষামদে কার চেয়ে পটু কে
সবচেয়ে বড়টাকে কোলে তুলে চুমা দে

দেশ জুড়ে চলিতেছে ষোল প্লাস নাইট শো
চোখ বুজে মুখ বুজে কতো যায় থাকা গো
তার চেয়ে ভালো না? লেট আস এনজয়
দল বেঁধে খেলি চলো 'কানামাছি-নয় ছয়'

দেশ জুড়ে ফাতরামি চলিতেছে দিন রাত
পাবলিক ডিম পাড়ে প্রতিদিন গোটা সাত
এর মানুষ সবকিছু বেদখল হয়ে যায়
খবিশের-পিশাচের ছানা সব গিলে খায়


চিল্লাই, কিল্লাই?

কোন কিছু ঘটলেই
কোন কিছু রটলেই
তারপর দল বেঁধে কিছুদিন চিল্লাই
                                        - কিল্লাই?

আগে-পরে ঘুম যাই
ঘুম ছাড়া কাম নাই
এই ফাঁকে হরিলুট, তারপর চিল্লাই
                                        - কিল্লাই?

দিন শেষে ভুলে যাই
ভুলগুলো গিলে খাই
খানা পিনা শেষ হলে হুদা কামে চিল্লাই
                                         - কিল্লাই?

আগে এতো গলাবাজি
                        - থাকে কই?
ঘটনার পরে কেন
                        - হৈ চৈ?


লিমিট ক্রস

লিমিটেরও লিমিট করলে ক্রস
পাছায় খাবি দোররা ‘ট্রস ট্রস’

কৃষকের ধান বারো টাকায় কেজি
সেইটা কাটস ক্ষেতে গিয়া ‘পাজি’!
ফাইজলামিরও লিমিট আছে বস্
ক্রস করলেই পাছায় দোররা ‘ট্রস’

খাদ্য ওষুধ জ্ঞানের ভিতরে ভেজাল
মানুষ নামের মানুষ গুলোও জাল
ঋণ খেলাপী মাপ যদি পায় বস্
পাছায় খাবি দোররা ‘ট্রস ট্রস’

অতি ধর্মিক ভণ্ডগুলোর দেশে
আউল ফাউল দাঁত দেখাইয়া হাসে
সব কিছুরই লিমিট আছে বস্
ক্রস করলেই পাছায় দোররা ‘ট্রস’

হুজুর কহেন ‘ঠিক না বেঠিক কন’
ঠিক ঠিক ঠিক কহে মুসুল্লীগণ
গণহারে সব ঠিক বললে বস্
পাছায় খাবি দোররা ‘ট্রস ট্রস’

নদ নদী আর সাগর চুরিও শ্যাশ
আকাশ পাতাল চুরির বাংলাদেশ
বালিশেরও তো লিমিট আছে বস্
ক্রস করলেই পাছায় দোররা ‘ট্রস’

গলা চিপা দেয়ারও লিমিট আছে
নিঃশ্বাস ছাড়া মানুষ ক্যামনে বাঁচে
কণ্ঠ রোধের লিমিট করলে ক্রস
পাছায় খাবি দোররা ‘ট্রস ট্রস’

লিমিটেরও লিমিট করলে ক্রস
পাছায় খাবি দোররা ‘ট্রস ট্রস’


ইঁদুর—বাঁদর সিন্ডিকেট

ট্রেড লাইসেন্স করলো এবার
ইঁদুর—বাঁদর সিন্ডিকেট
হাটে মাঠে—গঞ্জে ঘাটে
সিন্ডিকেটের বিশাল গেট

বারো টাকায় ধান কিনবে
বেচবে বালিশ ছয় হাজার
তোশক টিভি ফ্রিজও আছে
আমজনতার—যা দরকার

লেবার, পিয়ন, আয়া, বুয়া
সব ট্রেডিংয়ের পাশ আছে
ধানটা যদি মাগনা পেতো(!)
তাই ভেবে তা—থৈ নাচে

শ্লোগান মুখে নাচছে কৃষক
তা ধিনা ধিন—ধিনাত ধিন
ইঁদুর—বাঁদর সিন্ডিকেটকে
দেশ গঠনের সুযোগ দিন


মোক্তার হোসেন। কবি, ছড়াকার ও গল্পকার।
জন্ম ১৯৮২ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে।
প্রকাশিত গ্রন্থ:
১. একটি লাল ঘুড়ি এবং আমি (কবিতা), জেব্রাক্রসিং, ২০১৭
২. মহুয়া মাতাল হলে (কবিতা), বেহুলা বাংলা, ২০১৭
৩. মগজবিহীন গাধার দল (সমসাময়িক ছড়াকবিতা) তিউড়ি, ২০১৭
৪. আইসিইউ বেড নম্বর নাইন (গল্প), বেহুলা  বাংলা, ২০১৮
৫. রোদ বৃষ্টির মিষ্টি ছড়া (শিশুতোষ ছড়া), টাপুর টুপুর, ২০১৮
৬. ধুর শালা কস কী (সমসাময়িক ছড়াকবিতা), অগ্রদূত এন্ড কোম্পানি, ২০১৯।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. সাতটি ভিন্ন স্বাদের সাতটি মজাদার গভীর সামাজিক চেতনাসমৃদ্ধ, অনাবিল অনুভূতির ছড়া পড়লাম। বাংলা ছড়া সাহিত্য এভাবেই সমৃদ্ধ হবে। লেখক ও সম্পাদক উভয়ই প্রশংসার্হ।

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।