রোবটের লেখা কবিতা
রোবটের লেখা সাম্প্রতিক কবিতাটি পড়ে যা বুঝলে তা নিজের কোডে লেখ।
সময় অনন্ত। খুশি হলে দেব একটি মানি মেশিন।
সময় অনন্ত। কুঞ্চিত উত্তরটি তোমাকে দিতে পারে সিলিকন ভ্যালির সবথেকে উঁচু ছাদ
ওই ছাদ থেকে তুমি আহ্লাদে আটখানা হয়ে ঝাঁপ দাও অভিবাসী।
মিডিয়া অপেক্ষা করে আছে তোমার আত্মহত্যার জন্য।
পাণ্ডুলিপি
পিডিএফের দেওয়াল
খসে পড়ছে অক্ষরের পলেস্তরা
সপ্ত ঋষি খসে পড়ছেন প্রশ্ন ভেঙে ভেঙে
পুবদিকের স্ক্রিনটাচ ভোর সরিয়ে দেওয়া গেল
পশ্চিমের সূর্যাস্তে
গ্যালারিতে পুরাণ উল্টে যায়
টাইমলাইন ঢুকে যাচ্ছে অসময়ের দিকে
নেটাগরিক গিলে খাচ্ছে গড়পড়তা দুজিবি ডেটা।
ছাই
এই রোবট-নগরে তুমি তিন ফসলী জমি খুঁজতে বেড়িয়েছ।
লাঙলের ফলায় আবার জানকী উঠে আসবেন।
কিন্তু কোথায় আসবেন?
এখানে বীজ নেই, বৃক্ষ নেই, ছায়া নেই
এই ইডেনেই আছে হাবিয়া দোজখের ছাই।
মিথ্যায়ন
মিথ্যেবাদী যুগের আর্টিকেল পড়ে তুমি ঠুঁটো জগন্নাথের মত চুপ।
পান থেকে চিরকালই চুন খসে—
আগে রি রি করতে, এখন জিভে সেলটেপ।
বাজারে মিথ্যের দাম অনেক।
মিথ্যে চালে সত্য আজ কাঁকর— কুলোয় ঝাড়ো, টেনে ফেলে দাও।
পেনড্রাইভ
এই গিগাবাইটের ভিতর
চলনসই লার্ভাগুলো জমা করা আছে
জমি দখলের খেলায় বেলা বয়ে যায়
সাইবারকে কোন রূপকে বাঁধবে?
নদী হলে বন্যা হবে
আকাশ হলে বিস্ফোরণ
ছড়িয়ে যাওয়া ছায়ার ভিতর
বিষাদ রঙের একটি পাখি, চুপ।
প্রিন্টার
পিউ-কাঁহা এখন বেশি বেশি কম-পিউটারে ঝুঁকছে?
নকল মেরুদণ্ডটি তার ডিলিট হয়ে গেছে
রিসাইকেল বিনে কোনও অনুসন্ধান দপ্তর নেই
সুতরাং জনক ও জোনাকির কাছে ফেরবার কোনও
রেলগাড়ি নেই।
নীল রঙের এই ওয়ার্ড ফাইলে
টুকরো টুকরো চোখের জল বসে আছে
ভাগ করা আছে অক্সিজেন আর হাইড্রোজেনের অনুপাত
এ-ফোর পাতায় পাতায়
কপি-করা ই-অনুভূতি পেস্ট হয়ে চলেছে।
চ্যাট-বক্স
বলো রোবট আর কি চাও এই মাঝরাতের
কৃত্রিম জ্যোৎস্নায়?
বেকারের ইমেল খেয়ে নিয়েছ সকাল সকাল
মটকে দিয়েছ নীতিশাস্ত্র-প্রণেতার ঘাড়
বলো রোবট বলো
এই পৃথিবীর তুমিই তৃতীয় প্রজাপতি
তোমারই ই-বুক পড়তে পড়তে
হাত পা ডানা খসে পড়ছে
নরম মাংসের পাখিটির মডেল নম্বর বদলে গেল।
উল্টো-রাত
আজ থেকে এই রোবটনগরে মানব নিষিদ্ধ হল
আজ থেকে এই রোবট নগরে প্রকৃতি নিষিদ্ধ হল
হ্যাঁ, কৃত্রিম সূর্য থেকে
অন্ধকার উৎপাদন শুরু হল
এই উল্টোরাতের গল্পে
পাতালে তলিয়ে যাওয়া নক্ষত্ররা
সবাই এক একজন জেলখানার চিঠি।
পৃথিবী
পিপাসা ও বৃক্কের মাঝখানে
দাঁড়িয়ে আছে
পৃথিবীর তিনভাগ জল
একভাগ স্থল যা বেঁচে আছে
তা মূলত বারুদে ঠাসা
যে-কোনও সময়
অন্তর্বর্তী লাভা ছড়িয়ে পড়তে পারে
আনুভূতিক দেশে।
ঊর্ণনাভ
স্পাইডার ম্যানের কব্জি থেকে কবিতা বেরিয়ে আসছে
আমরা বাঁধা পড়ছি ঊর্ণ মায়ায়
এই কবিতার মায়াজাল
একদিন ড্রাগনের মুখ বেঁধে দেবে
আর কোনদিন রোবটের মুখ থেকে আগুন বের হবে না।
লেখকের অন্যান্য লেখা:
• নৈতিকতাবিরোধী সংখ্যায়: গালিব উদ্দিন মণ্ডলের কবিতা
গালিব উদ্দিন মণ্ডল। জন্ম ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮৬। বাসস্থান পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়া গ্রামে। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘মাটির কলস’ (২০১৬), ‘সমা ও সময়যান’ (২০২০), ‘বাবাস্কোপ’ (২০২০)। সম্পাদিত ছোট কাগজ: ‘জংশন @জাঙ্গিপাড়া’।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।