TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

শুক্রপুরাণ | গালিব উদ্দিন মণ্ডলের কবিতা


শুক্রপুরাণ

এক

অন্ধকার ক্যানভাসে উৎক্ষিপ্ত উল্কাস্রোতে ভেসে  এসেছ।
প্রাকভ্রূণ যুগটির সেই কথকতাকে পরাশর ভেবে 
রেখে এসেছ দূরের বরফে। 

তখনো ধর্ম তৈরি হয়নি। সিলেবাসে 
আসেনি আচার অনুষ্ঠানের সাপ-ব্যাঙ। 
তখনো রাজনীতি পাশা খেলার 
অনলাইন ক্লাস আয়োজন করে নি। 

গতিমান নক্ষত্রজগতে আর কিছুক্ষণ 
পরেই ঘটে যাবে বিগ ব্যাং। 
মনে রেখো কয়েক কোটি নিউক্লিয়ার 
বোমার বিস্ফোরণে জন্ম জাতকের। 

সমন্বয়ের পথ খুঁজে বার করবার জন্যই 
অনন্বিত হয়ে ছিলে, 
হে আদি প্রবাহ।


দুই

এই জন্ম অনেক মৃত্যুর বিনিময়।
সহযাত্রী সেইসব শুক্রানুরা জন্মের আগেই মৃত
অথবা প্রথম গুহার গায়ে গায়ে তারা হয়তো 
কোনদিন-শেষ-না-হওয়া আখ্যানটি লিখে চলেছে।

চিরায়ুষ্মান নবজাতক পড়ে দেখবে সেই দেওয়াল?
শ্লোগান?

এই মহাজগতের গানঘরে কত সিঁড়ি  পার হয়ে এলে 
গুহামুখ খুলে যায়?


তিন

সেই অন্তবৃও। সেই আন্তঃভ্রমণ। 

পিতৃপ্রদেশ থেকে রওনা কোটি কোটি পরিব্রাজকের। 
সুষম জীবনের জন্যই এই ভিন্ন যাত্রা।

জন্মেই ভেসে চলে সাদা পালকের হাঁস।
আঁশেরও তো তৃষ্ণা থাকে, বলো?

ঐতো ওখানে সাইটোপ্লাজমের মাঠ।
ঐতো ওখানে নিউক্লিয়াসের ঘর। 

বাতাবি লেবুর ফুটবলটি গোলপোস্ট ছিঁড়ে 
পৌঁছে যাবে এক্কেবারে অন্য একটা দুনিয়ায়। 

সেই দেশের রাজধানীর নাম পরাগধানী...


চার

সন্ধ্যাভাষার দেশে পেঙ্গুইনদের মৌনমিছিল।

কুন থেকে কেয়ামতের মাঝে 
ফোটন কণারা গায়ত্রীস্তবে মগ্ন।

গ্রহণ পার হলে
খুলে যাবে 
সাত আকাশের দরজা।  


পাঁচ

পদ্মের প্রকীর্ণ পাতাদের গায়ে
প্রস্তরযুগের বিন্দু বিন্দু জল

রোবটের মেমরি কার্ডে 
সবুজ দূর্বার কেশর।


ছয়

একটি গুহায় যে ঢুকে পড়ে, অনেক গুহার 
দরজার কলিংবেল সে দেখতে পেয়ে যায়।

ও হাজার দুয়ারি স্পেস স্টেশন,
ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা, ভিক্ষা...  


সাত

তেজস্ক্রিয় তলদেশে ঘূর্ণিঝড়।
একশো রকম প্রলয়নৃত্য।

হাজার হাজার বিশ্বযুদ্ধ।
ইতিহাস বই জাদুঘরে।

পর্যটক ফসিল ছাড়া 
কি আর পাবে এই শতকে? 

বিক্রিয়া পণ্ডিতের গবেষণায়
নতুন নতুন ডি এন এ মুদ্রা

ভস্ম-পাঠকের রিডিংরুমে 
জীবন্ত সব ভ্রূণের ভেলা আর বেহুলা।


আট

ভোরের স্ফটিক ঝর্ণাটিকে পরিযায়ী শ্রমের 
বাজারে নিয়ে আসা হলে
সে কোন শব্দশ্রুতি খোদাই করবে?
সে কোন দৃশ্যস্মৃতি নন্দিত করে তুলবে?

শাপলার পোকাদের এই 
জলজ জ্যামিতি ক্লাসে 
লাল ফড়িঙের দেবযান উড়ে আসবে  

ড্রোনের চোখে ধরা থাকবে 
দ্রোণেদের দ্রবীভূত জন্মকথা।


গালিব উদ্দিন মণ্ডল। জন্ম ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮৬ । বাসস্থান পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়া গ্রামে। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘মাটির কলস’ (২০১৬), ‘সমা ও সময়যান’ (২০২০) । সম্পাদিত ছোট কাগজ: ‘জংশন @জাঙ্গিপাড়া’।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।