TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

কবিতা সংখ্যা: প্রারম্ভিকা | কিয়াস আহমেদের কবিতা


ব্রোথেলের সেই মেয়েটি

সঙ্গম শেষে
দুই ফোঁটা চোখের জল ঝরাতে  দেখে,
অবাক হয়ে তাকিয়েছিল; ব্রোথেলের সেই মেয়েটি, 

এবং দরজা খুলে চলে আসার সময়
অর্ধনগ্ন সেই নারীটি তাড়াহুড়ো করে ছুটে এসে

আমার হাত চেপে ধরে
টাকাগুলো গুঁজে দিতে দিতে বলেছিল, 
কথা দাও, আর একদিন আসবে?

*
তারপর একদিন দরজায় আমার কন্ঠস্বর শুনে
দরজা খুলে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো
কাঁদতে কাঁদতে,

আমি তাকে শান্তনা দিতে দিতে
নিয়ে যাই বিছানায়,

সে আমাকে বসিয়ে রেখে
ফ্রিজ থেকে একটা কেক বের করে বললো,
এটা আমার জন্মদিনের কেক
তোমার জন্য এখনও কাটা হয়নি।

*
আমরা দুজন ছাঁদের উপর বসে কেক কাটলাম
তারপর সে আমাকে খাওয়ালো
আমি তাকে খাওয়ালাম,

আমি তার গালে মেখে দিলাম
সে আমার গালে মেখে দিলো,

সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো
আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম,

আমাদের চুমুর শব্দে একটা পাখি উড়ে গেলো
ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে।

*
সেদিন রাতেই প্রথম আমরা দুজন বাহিরে বের হলাম,
রাতের রঙিন আলোয় সে আমার হাত ধরে
আমার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো, 

এমন সময় একজন মানুষ এসে তার হাত ধরে বললো,
তোর কাছেই যাচ্ছিলাম, ভাগ্যিস পথের মধ্যেই দেখা হলো
কি সৌভাগ্য আমার,
চল আজ আমার বাসায় নিয়ে যাবো তোকে।

মেয়েটি বললো,
না আজ আমি বিক্রি হবো না,
আজ আমি আমার বন্ধুর সাথে ঘুরতে এসেছি,

মানুষটি তার বিষ দাঁত বের করে
আকাশ কাঁপানো হাসি দিয়ে বললো,
বেশ্যার আবার দিনক্ষণ আছে না কি?
এই ছেলে তোকে যত টাকা দিয়েছে আমি তারচে অনেক বেশি দেবো,

কিন্তু মেয়েটি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে
এক দৌড়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো,
আমি ভাবলাম আজ আর তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না,
এই ভেবে আমি বাড়ি ফিরে এলাম
এবং ঘুমিয়ে পড়লাম, 

*
সকালে দরজায় করাঘাত আর চেঁচামিচি শুনে
ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার,

আমি দরজা খুলে দেখি
তিনজন পুলিশসহ অনেকেই আমাকে নিয়ে কি যেনো বলাবলি করছে,
আমাকে দেখে একজন পুলিশ এগিয়ে এসে
একটা চিঠি আমার হাতে দিয়ে বললো,
ব্রোথেলের সেই মেয়েটি আত্মহত্যার পূর্বে এই চিঠিটা তোমার জন্য লিখে গ্যাছে,

আর অন্য একটা চিঠিতে লিখেছে
তোমার সাইন ছাড়া, লাশ যেনো মরগে না যায়।

*
আমি ভয়ে ভয়ে চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করি,
সে লিখেছে,

প্রিয় মানুষ,
তোমার সাথে আমাকে কখনও মানাবে না
এমন কি তুমি কখনও আমাকে তোমাদের
মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে পারবে না,
তাই আমি চলে গেলাম,

কিন্তু আমার তো জানা হলো না
সেইরাতে সঙ্গম শেষে আমার বুক থেকে
নেমে যেতে যেতে তুমি কার কথা ভেবে কাঁদছিলে?

কিন্তু তুমি কি জানো
সেদিনই প্রথম আমি বিশ্বাস করেছিলাম মানুষ কাঁদতে পারে,

তাই আমিও প্রথম কোনো মানুষের প্রেমে পড়েছিলাম,
তারপর বুকের সবটা দিয়ে তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম,

কিন্তু আমি তো জানি আমার এই ভালোবাসা কেবল স্বপ্নমাত্র,
আর এই স্বপ্নের শেষ হলো মৃত্যু।

আমি জানি আমার এই মৃত্যুতে তোমার তেমন কিছুই আসবে যাবে না,

তবুও বলছি,  প্রিয় মানুষ, 
আমার জন্য তুমি কোনোদিন কোনো নারীর বুক থেকে নেমে যেতে যেতে 
এক ফোঁটা চোখের জলও ফেলবে না,
এ আমার দিব্যি রইলো।


তুলনা

কবরে কঠিন আজাবের সময় মনে হলো
আমি আবার মরে যাবো!
কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আজাব হওয়ার পরও
আমার মৃত্যু হলো না!

আমি এই আজাব তোমার অবহেলার সাথে তুলনা করলাম,


আমার কাঁধে একটি ধর্ম 

ভাত খেতে গিয়ে মনে হলো—
নির্মলেন্দু গুণ হিন্দু হয়ে ভাত খায়,
আমি মুসলমান হয়ে কী করে ভাত খাবো! 

ভাত রেখে দিলাম।

পানি খেতে গিয়ে মনে হলো—
নির্মলেন্দু গুণ হিন্দু হয়ে পানি খায়,
আমি মুসলমান হয়ে কী করে পানি খাবো!

পানি রেখে দিলাম।

পাঞ্জাবি পরতে গিয়ে মনে হলো—
নির্মলেন্দু গুণ হিন্দু হয়ে পাঞ্জাবি পরে,
আমি মুসলমান হয়ে কী করে পাঞ্জাবি পরবো!

পাঞ্জাবি রেখে দিলাম।

লুঙ্গি পরতে গিয়ে মনে হলো—
নির্মলেন্দু গুণ হিন্দু হয়ে লুঙ্গি পরে 
আমি মুসলমান হয়ে কী করে লুঙ্গি পরবো,

লুঙ্গি রেখে দিলাম,

স্যান্ডেল পরতে গিয়ে মনে হলো—
নির্মলেন্দু গুণ হিন্দু হয়ে স্যান্ডেল পরে,
আমি মুসলমান হয়ে কী করে স্যান্ডেল পরবো,

স্যান্ডেল রেখে দিলাম,

রাতের অন্ধকারে নগ্ন শরীরে ছাদে হাঁটতে গিয়ে মনে হলো—
নির্মলেন্দু গুণ হিন্দু হয়ে এই পৃথিবীতে থাকে,
আমি মুসলমান হয়ে এই পৃথিবীতে থাকবো কীভাবে!

তাই ছাদ থেকে আল্লাহু আকবার বলে ঝাঁপ দিলাম।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. মারাত্মক লাগল ভাই। সম্পাদক ও কবির জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা জানাই।

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।