TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

ট্যাক্সিডার্মি | সৌগত বালী

প্রচ্ছদ: নাজমুল হোসাইন 

বার্নার জ্বলছে। রানারটা আটকে গেছে। রেনকোট খুলে টাঙিয়ে দিলো রিকেল। এখনো টিপটিপ বৃষ্টি জানলা দিয়ে দূরে গাছের পাতা। হাতা দিয়ে চুঁয়ে পড়ছে জল। সে দেখলে বার্নারটা তেতে লাল। রিকেল টয়লেট সেরে চান সেরে বগলে পাউডার ছেড়ে এসে দেখলে তখনো তেতে অনেক অনেক লাল। লাল বলতে মনে পড়ল এবার তো লাল শূন্য হয়ে গেলো, এবার! 
বারমিতা নারলেকর অনেক নিচে শাড়ি পরে। ছেলেবেলা একবার সে ফ্রকের ভেতর ব্যাঙ ঢুকে যেতে টের পেয়েছিলো বিপদজনকরা কীভাবে ওঁত পেতে থাকে। তো সে আগুনে আঁতকে ওঠে তবু সে লাল কেননা রিয়া।
রিকেল হাসে রেনকোটের চুঁয়ে পড়া জল থিকথিকিয়ে যাচ্ছে। ওয়াইপারটা লাগবে। রিকেল টয়লেটের পাশের দেওয়ালের কোনা খুঁজতে থাকে কোনাকুনি। খুব খুব সূক্ষ্ম কোণও তৈরি হচ্চে বটে। এখান থেকে দেখতে দেখতে বার্নার টেবিলে স্টাফ পটাটো সাজাতে থাকে। তার বাবা বিজু নারলেকর। ঘর জুড়ে কত সব ব্যাঙাদের স্টাফ করা। লম্বা একটা শ্বাস। রিকেলকে ওভাবে একদিন ট্যাক্সিডার্মি চালিয়ে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখবে বার্নার। রিকেল রিরি করে পিছিয়ে আসে। চুঁয়ে পড়া জল জ্বলছে বার্নারটা আবার। স্টাফ আলুর ভেতর মটনের পুরটা কীভাবে বানায় মেয়েটা আশ্চর্য লাগে এখন বিকেল। আকাশ থেকে নন ডেরিভেটিভ  তলিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমে। পশ্চিমটা একটা মার্জারিন। রিকেল ব্রেডে কামড় দেয়।
রিকেল ব্যবসার নাম ও নিশান জানত না। কী করে পা হাইড্রেনে ঘুষে যায়। ওয়াশিং মেশিনের ঘড় ঘড় শব্দ টানা, ঘুমতে দেয় না। রিকেল ধাক্কা দেয় পাশ ফিরে শোও এভাবে থালা বাজিও না । খালি থালা একটা ভুখের প্রতীক। গোটা দেশ জুড়ে শূন্য থালা  হাতে ছাদে উঠে এসো না আমার ভয় করে।
বার্নার ধাক্কা দেয় কীসব বকছো ঘুমের মধ্যে। রিকেল জেগে যায় বার্নারও। এবার ওরা মাস্ক পরে নিচ্ছে। এবার ওরা অনেকটা কাছাকাছি হবে। অবিচ্ছেদ্য থেকে যাবে অনেকগুলো মিনিট। বার্নারটা জ্বলছে। কী চিৎকার!
থামিও না।
আজ বাড়িতে কেউ নেই।
সূর্যটা আকাশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গলে যাচ্ছে পশ্চিমে ঠিক একবারে মার্জারিন পাউরুটির নরমতম অংশটায় কামড় বসালো রিকেল।
এখন রাত গভীর। বারমুডার নিচে সোরাইসিস হয়ে থাকা চামড়া আরো দগদগে ও ওদের হুঙ্কার। রিকেল চুলকে রক্ত রের করে ফেলল।
ছাদের পেছন দিকে পুকুরে বৌ-টা ন্যাকড়া ধুচ্চিলো। আমি আর মনাদি। আমের আচার খেতে খেতে ওকে বললাম ওটা কিসের? মনাদি হেসে বলল ঘন জঙ্গল আর টমেটো  সস ঝরতে থাকবে দিন চারেক মোটামুটি। আমি মনাদিকে দেওয়ালে ঠেসে  ধরছিলাম। স্টাফ করে রাখব বলে।
রিকেল ভোরে উঠে দেখে বার্নার ব্যালকনি থেকে অনেকটা ঝুঁকে গেছে। ও ছুটলো। কোলে তুলে নিল। বিছানায় শুইয়ে দিলো। একটু ব্রান্ডি খাওয়ালো। বেলা বাড়তে বার্নার কর্পোরেট। তাড়াতাড়ি উবার ধরে বেরিয়ে যায়। তখন বুন  সেন আসে। বুনসেনও একটা বার্নার কিচেনের হাতা খুন্তি বাসনের মধ্যে লালসা জাগিয়ে দেয়। বুনসেন অনেক ঝুঁকে পড়ে  ঘর মোছে। রিকেল ভাবে এভাবে বুন সেনের সমস্তটা  একদিন মেঝেময় উল্টে পড়বে। রিকেল পিছলে উল্টে গিয়ে মাখামাখি হয়ে যায়। একটা চাতক যেন কতদিনের ভুখ। থালা বাজাচ্ছে ছাদে। কান ঝালাপালা লাগে। রিকেল ছাদে উঠে দেখে সিঁড়ির দেওয়াল জুড়ে মনাদি। একটা ট্যাক্সিডার্মির ক্লাস চলছে পেছনের বেঞ্চে বার্নার।
কাকলি হাঁটতে পারে বড় স্থির। কথা বলে বেখেয়াল । হাত দুটো আনন্দ পেলেই ঝুনতো। তখন এবনর্মাল কথাটার চল ছিলো। আমি মাসির বাড়ি গেলে ওর পাশে শুতাম। একদিন সবুজ ল্যাম্পের আলোয় হঠাৎ আমাকে বলল তুইকি আমাকে আই লাভ ইউ বলছিস। আমি পরদিন। ডাউন সিনড্রোমের গলি পেরিয়ে ভাবছিলাম মনাদিও আমাকে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পারে একদিন ঠিক একদিন। মনাদি বিয়ের দুবছর পর তেতে লাল। জ্বলছিলো। বার্নারটা। বার্নার আগুনে ভয় পায় তবুও সে লাল কেননা রিয়া।
বিকেলে অবিন্যস্ত বাসন করিডোর, ড্রইংরুম ধুলোয় ধুলো। বার্নার আবার গরম হতে পারে। বুন সেন আসেনি কেন? কেন বাসনের ইদিপাস? কেন ওভেনের কষ বেয়ে লালা ঝরছে? রিকেল এসব জানে না। রিকেল শুধু দেখেছিলো জেলা খবরের পাতায় একটা লাশেরর খবর, যার পেট চিরে কেউ খড় ভরে রেখে গিয়েছিলো ।
মনাদি বলেছিলো প্যান্টের পকেট থেকে লঙ্ক বের করে সেটাকে নেড়ে নেড়ে যদি এক দু ফোঁটা দই বের করতে পারিস তাহলে আজই অভিষেক হয়ে যাবে তোর। 
আবার পা হাইড্রেনে ঢুকে গেছে। লার্ভার গোঙানি। ছুঁচোর পার হওয়া। প্যান্টের ফোল্ডে ছোট ব্যাঙা একটা। আমি ব্যাঙা বলতে একজন সরু পায়ের মানুষকে চিনি। ব্যাঙা কি আসলে একটা ডিসঅর্ডার। বিজু নারলেকরের ব্যাঙা কারা। স্টাফ পটাটোর ভেতর একটা চেনা গন্ধ টের পাচ্ছে আজ রিকেল খুব চেনা। 
আরো রাতে বার্নার যখন ঘনিষ্ট একটা বোতলের ভেতর আটকে পড়া ড্রাগন ফ্লাই। বার্নার চিৎকার করে এতো ফড়ফড় কোরো না, কী হয়েছে? এবং আরো অনেক রাতে বোতল থেকে মাছি সারা ঘরময় দেওয়াল জুড়ে মনাদি, রিয়া বা অন্যান্যরা ও তাদের স্থির অবিভাজ্য চোখ রিকেলের বার্মুডার নিচের ঘা গুলো আরো দগদগে হাসছিলো ঠিক তখনই দরজায় ধাক্কা পড়ল নাকি কিচেনে বাসনের মরবিডিটি।

ধর্মাবতার রিয়া কেন লাল আমি জানি না। দুবছর আগে আমাদের দুসালের মেয়ে রিয়া লাল ফ্রক পরে নিখোঁজ হয়েছিলো এবং আমাদের ডিভানের নিচে তার দেহ স্টাফ করে রাখা আছে বা বিজু নারলেকর ডিসঅর্ডার বাচ্ছাদের স্টাফ করে রাখতেন এমন আশঙ্কা কাল্পনিক। রিয়া একটা উপগ্রহ মাত্র, শনির বলয় ভেঙে কখনো কি??!! 
ধর্মাবতার বার্নার একটা যন্ত্রাংশ বই তো নয়। আমাদের অনুষঙ্গ জ্বলতে থাকে দৈনন্দিন অথবা এখন কতদিন আমরা ছাদে আসিনি। আমাদের বাড়ির পেছনের পুকুরে একজন ডাগর ন্যাকড়া ধুচ্ছে। আমি বললাম ওটা কী? বার্নার বলল বাজে কথা বোলো না। রিকেল দেখল পাইপ লাইন ফেটে গেছে আকাশটার। রানারটা জ্যাম। রিকেল হুকে টাঙিয়ে বললে দূরে আগাছা থেকেও।
 
পকেট থেকে চুঁয়ে পড়ছে দইয়ের ঘোল। মনাদি বলল অভিষেক হয়ে গেলো তোর আজ।




সৌগত বালী। বাংলা সাহিত্যের ব্যতিক্রমী একজন গদ্যকার। তাঁর প্রকাশিত বই তিনটি ‘সিওয়ানটুসিসেভেন’, ‘কুকুর একটা সিঙ্গল ফার্টিলাইজার’  ও ‘বালীলিওর গল্প’। বর্তমানে পশ্চিম বাংলার শ্রীরামপুর নিবাসী তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ