TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

শ্রী দেব-এর ‘যে টিপ ঈশ্বরীর’ থেকে কবিতা


প্রণয়বিদ্যা

একদিন সকল পুরুষও শিখে যাবে সমূহ প্রণয়বিদ্যা,
স্পন্দিত সমস্ত প্রাণ পুরুষকে ডাকবে- পৃথিবীপুত্র নামে।
পিতৃত্বের ঋণে পৃথিবী দান করবে প্রকৃতিপাঠ।
মহিমান্বিত হবে
          এরপর ধীরে ধীরে সৃষ্টিতত্ত্ব।

নিকষ কালো আঁধার ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে
ছুঁয়ে যাওয়া প্রথম আলো—
সে ছুঁয়ে যাবে পৃথিবীর সাথে সাথে পুরুষের মন।
প্রকৃতির আরেকরূপ যে রমণী; ললাটে ধারণ করে রাঙা সূর্য।

প্রণয়ের তৃষ্ণায়—
তোমার টিপ তাই ছুঁয়ে যায় মন প্রথম আলোতেই।


ভুলমন্ত্র

যখন উপযুক্ত সময় আওড়ানোর-
         “যদেতত্ হৃদয়ং তব, তদস্তু হৃদয়ং মম
          যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।”
          ‎
যুগল আত্মা-
   একই স্বরে আওড়ায়
        এই অভিন্ন প্রতিজ্ঞামন্ত্র।

পুরুষালি স্বর-
    বৃন্দ আবৃত্তির মতন আওড়ায়
    ‎     পুরোহিতের দৃঢ় উচ্চারণের তালে।

মেয়েলি স্বর-
      লজ্জ্বার মতন মিলিয়ে দেয়
      ‎              পৌরুষ্যের অন্তরালে।

আওড়াই হঠাৎ-
         ভিন্ন স্বরে আমিও
               ভিন্ন চিত্রকল্পে
             ‎       ভিন্ন শব্দে— ভুলমন্ত্র

 যদেতত্ কুঙ্কুমং তব, তদস্তু কুঙ্কুমং মম
 ‎যদিদং তিলকং মম, তদস্তু তিলকং তব।

আওড়াও তবে-
     নিজস্ব ইচ্ছের অধীনে
       ‎   নিজস্ব চিত্রকল্পে
       ‎       নিজস্ব শব্দে— কোনো এক ভুলমন্ত্র

মূলত মন্ত্র আওড়ানো— বাহুল্যমাত্র, যেখানে হৃদয়ের দ্যাখাশোনা বাকি নেই আর।


মধ্যাকর্ষণতত্ত্ব

আপেল বাগান। মধ্যাকর্ষণতত্ত্ব শেখাতে টানছে নিজের ভেতর।

             খেই হারাই
  ঘাই মারি সমুদয় সিদ্ধান্তে
    ছুটে যাই তোমার কাছে

ও সই, তোমার টিপে শিখে যাই সমস্ত মধ্যাকর্ষণতত্ত্ব।


পাখিজন্ম

ধরো নাও, আমাদের হয়েছে পাখিজন্ম

কিচিরমিচির। ভোকাল কর্ডে উচ্চারিত হতো দুজনের

ভেবে নাও চিত্রকল্প
আহারের জন্য— ঠোঁট ও উদর
ঘুমের জন্য— জোড়া চোখ
সঙ্গমের জন্য— সহায়ক ব্যবস্থা
উড়তে সহজাত ডানা, হাঁটবো বলে পা'জোড়া।

সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে, স্তন থাকে না মেয়েলি পাখিদের;
থাকে না মাথায় কোনরূপ কুঙ্কুম আঁকার সিঁথি

আমার কি লোভ থাকতো না মানুষের মতন?ধারণা করি, মন বা মাঙস ছাড়া জোটক অসম্পূর্ণ

যেহেতু পাখি'রা স্তন্যপায়ী নয়, নিশ্চয় তোমার মাঝে আঁকা থাকতো কোনো এক কুঙ্কুমচিহ্ন!


ফ্লাশ

দই ফুচকা খেতে খেতে তুমি খেয়ে ফেলো আমার চোখ।

মনোযোগের পাঠ নাও ফুচকার দানায়।
আমি- ব্যাকবেঞ্চের ছাত্র। আনমনে প্লেটে ঢালি ঝুরিভাজা

ভাবনার গভীরে প্রবেশের আগেই কেঁপে উঠি। ওয়েটারের সফ্ট ড্রিংক্স সার্ভের ভেতর তোমাকে ফিরে পাই বাস্তবে।

অথচ- তুমি ধরা দাও আরো অধিক উষ্ণ হয়ে

সহসা- নাজমা'দির ক্যামেরার ফ্লাশও ফাঁকি দিয়ে যায়

কারণ এর চে' অধিক ধাঁধানো ফ্লাশ ধরে রাখো যেনো-বা তোমার কপালের ওপর।


বিসর্জন

সাতপাক ঘুরাবর্ত— ধীরে ধীরে নামছে মাটির কায়া।

— "দুগ্গা মাইকি জয়!
— আসছে বছর আবার হবে, আবার হবে।"

ফিরে যায় দেবী কৈলাসে।

অথচ বেখেয়াল রইলো—

সাতপাকের বন্ধন— আঁকড়ে ধরছে পঞ্চভূতো কায়া

রোজ লাল কুঙ্কুম এ সঁপে দিতে নিজনাম.....


[কবিতাগ্রন্থ: যে টিপ ঈশ্বরীর 
প্রকাশনী: চন্দ্রবিন্দু 
প্রচ্ছদ: সারাজাত সৌম
বইমেলায় স্টল নম্বর: ৬০৭]


শ্রী দেব। কবি।
জন্ম ১৯৯২ সালে চট্টগ্রামে।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘যে টিপ ঈশ্বরীর’, (চন্দ্রবিন্দু,  ২০২০)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ