একজন কবিরে ঘিরে অনেক আষাঢ় জড়ো হতে হতে
ডুবে গেছে ফণীমনসায়, সারাদিন গুঞ্জরিত ঘাস, মিথ্যা এসব? মিথ্যা নাকি কুয়াশায় ঢাকা ক্র্যানিয়াল ভোরের আঁধার?
একজন কবির দিকে অনেক অনেক পোশাক তাকিয়ে খুলে দেয় জরি-কারুকাজ, বিশ্বাসে নামছে মাছি; সারাদিন ঘাসেরা পাঠালো সৌর-ধুলি কবিতারে লক্ষ্য করে!
আপনাকে সে-রকমটাই দেখেছি আমি, আপনার কবিতায় কথা নাই প্ররোচিত কারো, হাতের লাল মাস্তুলে চাঁদ এসে ধাক্কা লেগে চুরমার, বোর্হেস ছিলো নাকি সেই রাতে আপনার ঘরে!
হাত ধরে আমাকে নেবেন কবি আপনার উর্ধ্বগামী সিলিং ফ্যানে?
রুহু
আমার কবিতা চুপ।
যেদিকে আয়না শুষে নিচ্ছে
সমস্ত রোদ্দুর আজ সেইদিকে কেউ নাই! এরপর হট্টগোল ভেবে ভুল করি টিনশেডে আতাফল ঝরা কাল, সেইদিকে ধূলি ওড়ে আর নরকংকাল লাগে ন্যাড়া গাছেদের দেখো। এভাবে নির্জন ভোর তোমাকে আধুলিধ্বনি ছুঁড়ে দিয়ে উপহাস করে নাকি, টের পাও?
এভাবে একার খেলা তোমাকে একাই হেরে জিতে যেতে হবে জীবনব্যাপী। মাঝপথে প্রাচীন সাঁকোর দেখা পেয়েছিলে নিশ্চয়ই, টের পেয়েছিলে তবে ঘাসের ঝুমুর বাদ্য!
যদি কুহু ডাক শুনে উৎস থেকে, আয়ুষ্কাল থেকে, আজানবর্ণালি থেকে নিজেকে আলাদা ভাবো, যদি অন্তহীন পথ চলা অনতিদূরের ভাবো, যদি পাষাণ সমাজ হতে ফিরে না চাইতে পারো ঝরা পাতাদের জন্য পুনরায় গাছের ডালপালা আজ তাহলে তোমার দিকে ধেয়ে আসবে নাকি মৃত্যুঞ্জয় লেখার টেবিল গোলবারান্দায়?
শেষ হলো অবশেষে হরিবাসরের সাজ। বাসার সামনে এসে আমার কবিতা চুপ-
মহাকাশে মেঘের সেতার বাজে আর তার অসীম শূন্যতা কাছে ডাকে নাকি প্রায়শঃ তোমায় রুহু?
কতখানি ডুবে গেছি দেখো মন্ত্র ও মহত্ত্ব নামের মরিচীকাতে। অথচ কান্নার অধিক মায়াটোন পৃথিবীতে জানা নাই মানুষের।
শূন্যতাকে বিফল করো না তুমি-
এর অন্ত্যমিলে আছে ঘাট, ছইতোলা নৌকা বাঁধা আছে ঘাটে, ঢেউয়ের শব্দ গিয়ে লাগে চাঁদের কপালে শোনো। কিছুদূর হেঁটে গেলে প্যাঁচানো সিঁড়ির ধাপই অস্তিত্ব, ছুঁয়েই দেখো একবার!
এইখানে গাছেরা জ্যোতিষী মুনি। নিজেকেই তবে হেস্তনেস্ত করো আজ নিজের কলমে।
আমার কবিতা হবিগঞ্জ হাট, চুপচাপ শ্যালো নৌকা।
তুমি আছো তবিয়তে ভালো, সাবলীল পাল, আমার কবিতা লাল, সারা গায়ে জ্বালা করে মানবেতর ঢেউ, দহ সামলাও মাঝি!
যাত্রা
সময় ঘনিয়ে এলো
এইবার ফিরি চলো আমরা দুজনে ঘরে। অসূর্যপরিখা, প্রাচীন দালান, থমথমে বেতফল আর অনন্ত উদ্যান শেষে ফিরি অমোঘ যাপনে!
একটা ঘর তো নিজেই অযুত বেঘোর পারি দিয়ে টিপটপ থাকে সকলের জন্য, হাই তুলে শোয়া যায়, ভোরবেলা সারা যায় নিরালা জিকির বসে!
চলো হেটে যাই লাল আলোর বারান্দা ফেলে আরো কিছুদূর ওই বনেদি ঘোড়ার গাড়ি, লাল মাশরুম, আধেক জোছনা ফেলে চলো ফিরে যাই হৃদয়-বিদ্যালয়ে, অস্তিত্বের প্রশ্নপত্র সলভ করে প্রস্তুত হই অবিনশ্বরে!
অকাট্য জানা থাকা ভালো
মৃত্যুর প্রস্তুতি দিয়ে শুরু হয়
প্রকৃত যাত্রাকাল মানুষের!
করুণাবর্ণ চোখ
১.
এভাবে ডাকছো কেনো হে করুণা? একাকীত্বের ভয়?
এমনই জট-লাগা পাথার আঁকানো থাকে হৃদয়তোরণ ছুঁয়ে; সুনসান! নদী এঁকে দেখি ঘাট নাই তার, দাঁড়াব কোথায় আজ?
থই যেখানে শেষ, মানুষের বিবাদ সেখানে শুরু, ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসে মগজে টানানো গান, পাতাদের পৌষ-ঘুম!
কলহ তোমার চেনা কেউ নাকি? মনস্তাপ?
যেন আমাকে জিজ্ঞেস করে এক সাপ পথিমধ্যে ছোবল ফিরিয়ে নিয়ে ফণাসহ নামছে পুকুরে একা!
অফিস-তাড়িত ঢঙে
ঘর-ছাড়া এমন সকাল, চেনে আমাকে;
আমি ততধিক যেন অচেনা তোমার কাছে, ঘুরে-ফিরে এসে বাদামগাছের ডালে, বসে এক মাছরাঙা, প্রতিদিন-
সাবধানে মাছের কলিজা ছিঁড়ে বের করে আনে সাঁতার-ক্যালরি!
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।