সুদীপ চট্টোপাধ্যায় | কবিতা

 

স্পর্শ

চোখ নেমে আসে অস্তের নীচে

তথাপি বলা হয় না কিছু

তথাপি জলের বিভিন্ন স্তরে তোমার সংসার ভেসে থাকে

ভেসে থাকে টুসুগান, আর দূরে দূরে 

পাহাড়ের ধাপে ধাপে ঝুমচাষ

মন নেমে আসে সন্ধের নীচে

আর অবিরত পাকখায় হাওয়ামোরগ

সে-তো ডাকে না, তাই ভোর হয় না কখনও 

তাই কিছুতেই দেখা যায় না তোমার মুখ

আমি বসে থাকি অবসন্ন

বসে থাকি পৃথিবীর সামান্য হেলে-পড়া নিয়ে

মাটি, মাটির মতো ক্ষয়ে যায়

বৃক্ষেরা কেবলই কাঁদে

কেবল আমার মাথা ভারি হতে হতে

একসময় দেহহীন গড়িয়ে যায় দিগন্তে

সিসিফাস

কাউকে ডাকতে গিয়ে তুমি থমকে আছ–-

এভাবেই কেটে গেল সারাটা জীবন

অথচ তোমার প্রাত্যহিক ব্যস্ততা

আর বন্ধুদের সময় না-দেওয়া নিয়ে 

তৈরি হল মিথ, তৈরি হল কারুকার্যময় অভিযোগ 

তুমি থমকে আছ জন্মাবধি সঠিক শব্দের অভাবে

থমকে আছে তোমার প্রকৃত জন্ম, বেড়ে-ওঠা

এমনকি আয়ু শুরু হতে-না-হতেই 

কোনও সময় পাচ্ছে না, পাচ্ছে না কোনও দিন বা রাত্রি

আর তোমার ব্যস্ততা নিয়ে, বন্ধুদের সময় না-দেওয়া নিয়ে

গজিয়ে উঠছে এক-একটা পাহাড়

সেইসব পাহাড় বেয়ে ঠেলে তুলছ তোমার 

অবোধ্য ডাক, আর প্রতিবার গড়িয়ে পড়ছে খাদে

স্নেহ

হে মৃদু লণ্ঠন, তোমার উষ্ণতায় আমাকে জড়াও

জড়াও হে অপরাহ্ণের আলো

যে-বটফল মাটিতে গড়ায়, তার লালের ভেতর 

মায়াবি কুসুম, তার ভেতর দিয়ে হেঁটে চলেছে 

আমাদের নরম শৈশব

হে মৃদু লণ্ঠন, আমাদের কবোষ্ণ আত্মা 

মাথায় নিয়ে ফেরি করছে 

অন্য পৃথিবীর এক ফেরিওয়ালা 

এই ঘনান্ধকারে তাকে তুমি পথ দেখাও

সে যেন দিনশেষে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরে

তার ঘুমন্ত সন্তানের পাশে রাখতে পারে 

আমাদের না-পাওয়া স্বপ্নের কুঁড়ি

শাপ

সে যেন অন্ধ হয়

সে যেন পশ্চিমে পাশ ফিরে শোয়

সে-নিথর মুখে যেন লেগে থাকে 

অস্তের ছাই

এ-টুকু করুণা কর, জীবনঠাকুর

যতদিন প্রাণ আছে, আছে ক্ষুধা 

তার স্মৃতি রোজ যেন 

ছিঁড়েখুড়ে খাই

শোক

দিন অবসন্ন, দিন তমসাঘোর

দিনরাত্রি মিলে আজ কতদিন

শুধুই সমবেত শোক ছেয়ে আছে

অশ্রু জমে জমে পাথর হয়ে জেগে আছে

ঊষর মরুভূমির ওপর

চারিদিকে কাঁটাগাছ আর থেকে থেকে বালুঝড়

এখন কোথায় যাব আমরা, কোন দেশে

কতদিনের তৃষ্ণা নিয়ে আমাদের শোকার্ত মন

আমরা সব গোল হয়ে বসে 

আর মাঝে আমাদের ক্ষতবিক্ষত মৃত বোন