স্বপ্ন দেখলাম৷ স্বপ্নে তোমাকে দেখলাম৷ একটা পাখি দেখলাম৷ দূরন্ত৷ ভোরের ডানায় ছুটে বেড়ায় সে পাখি৷ কী নাম তার? ঘুম ভেঙে গেল৷ এটা তো সুবিধের হলো না৷ চোখ বাঁকা হয়ে আসে৷ রিকশায়, যেন সে রিকশা নয়, পঙ্ক্ষীরাজ; হাওয়া, হাওয়ায় সে চুল উড়ছে; যেন সে চুল নয়, পঙ্ক্ষীরাজের ডানা! উড়ে আসছে! দেখলাম৷ অথবা পাখি হতে পারে৷ তুমি কী? আজ সত্যি করে বলো৷ একটা সত্যি কথা বলো৷ কী লাভ নিজেকে লুকিয়ে! কী হয়, কী হয়, কী! যদি মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়, সাথে সাথে ডেকে নিও তবে, সঙ্কোচ রেখো না মনে৷ সারারাত জাগিয়ে ঝিরঝির বৃষ্টিতে ভিজে, তোমার জ্বর আসে না? আসে না তোমার জ্বর! যাও— ঘরের ভেতরে ঢোকো৷ জামা ছেড়ে দাও৷ কারো ডাকে সাড়া দিও না৷ যে ডাকছে, ডাকুক সে— ডেকে ডেকে চুপ হয়ে যাক৷ কণ্ঠনালী ছিঁড়ে রাস্তায় উঠোনে ফুটপাতে পড়ে থাকুক, শেয়াল-কুকুরে খুবলে খাক তাকে৷ কে তাকে জন্ম দিয়েছে ফের, সেই যে জুলাই মাসের গল্প, তুমি তো জানোই সব৷ তবুও বলতে হচ্ছে৷ যদিও সবটা বলতে হয় না, জানি৷ কলম ভালো হলে আমি প্রচুর লিখতে পারি৷ জমে গেলে প্রেম, গাইতে পারি গান৷ একটা সিগারেটের জন্য কি নাচতেও পারি? রাতের সমাপ্তে এ কী হলো আমার? ভরপেট দানাপানি দিলে গুলিও করে দিবো বুঝি! সেদিন তোমার কথা বললাম৷ প্রথমবার৷ তোমার অবশ্য জানবার কথা নয়৷ কাউকে বলি না কিছুই৷ মুখ বন্ধ হয়ে যায়৷ গলা আটকে আসে৷ দমবন্ধ লাগে৷ কী অস্থির, কী অস্থির! ভাষায় প্রকাশ করা যায় না৷ তা ভাষায় প্রকাশ করা হয় না৷ আমি কি চাইলে পারতাম না সেই গানটি আবার গাইতে, কোনোদিন— কোনো একদিন, পারতাম না গাড়ি চালানো শিখে নিতে? কেন এরকম হলো? কেন এত বিষণ্ন হলো গান? আজ অব্দি একটি বাক্যও তোমাকে নিয়ে লেখা হলো না, যেখানে তোমাকে দেখা যায়, যেন আয়না৷ দেখাতে জানে সে, দ্যাখে না৷ সে বাক্য পারিনি লিখতে৷ সে দুখের কতোটা জেনেছি বলো! আমি তোমার কোন সৌন্দর্যকে অস্বীকার করবো? কোন বেদনাকে আড়াল করবো? কোন অশ্বডিম্ব দেবো উপহার? সিগারেটের স্বাদ মরে গেছে আর মদের গন্ধও, ফিকে-ম্লান হয়ে গেছে৷ তুমি আসো নাই৷ তার মানে কী? এইবার সত্যি কথাটা বলো৷ আমি জানতে চাই৷ জানতে জানতে আমি মাটিতে নুয়ে পড়তে চাই, শুয়ে পড়তে চাই, তোমার জীবনের পাশে…
একটা চিঠি লিখবো ভাবছি তোমাকে৷ আজ প্রথমবার না যদিও৷ এমনটা আমি অনেকদিন থেকেই ভাবছি৷ এ-ই ধরো দশ বছরের কাছাকাছি তো হবেই৷ যতোদিনে তোমার সন্তান বাড়তে বাড়তে তোমার সমান হতো৷ তুমি দাড়িয়েই থাকতে ডালপালা মেলে; তোমার পাখনাগুলো, যেন তুমি রিকশায় আসছো প্যারিস রোড ধরে; বাতাশে, হ্যাঁ খুব বাতাশ তখন; তোমার চুলগুলো উড়ছে৷ উড়ছে প্রজাপতি আর মৃদু জলের বুদবুদ জমছে দুরুদুরু বুকে৷ কীরকম না? আর তুমি হাসছো! অথবা তাকিয়ে দেখছো সব, জলবৎ তরলং৷ অথবা চিৎকার করে বলছো, ‘সিগারেট কমাতে হবে৷’
তোমার জন্য কোনো চিঠিই আমি লিখবো না কোনোদিন৷ অন্য সবার জন্য লিখবো কি? অন্য কাউকে লিখবো— সেই কথাটি, যা তোমাকে লেখা হয়নি! কাউকে বলবো সে কথা? জুয়ায় হেরে গেছে তুমুল কুয়াশাভোর, সব খুইয়েছে— নিঃস্ব হয়েছে৷ কাউকে লিখবো না চিঠি৷ তোমার ট্রেন ধরবার তাড়া৷ চলে যেতে হলে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হয়৷ তোমার ব্যাগে কী? ব্যাগভর্তি গুডবাই নিয়ে চললে কোথায়? ভেবে ভেবে আমার ঘুম আসে না৷ সারা রাত আমার ঘুমই আসে না৷ তাই তোমাকে কক্ষনো চিঠি লিখবো না৷
এই লেখকের অন্যান্য লেখা:
• সাম্য রাইয়ানের মুক্তগদ্য “রাত্রি একটা অনাহুত বেদনার নাম”
• সাম্য রাইয়ানের ‘চোখের ভেতরে হামিং বার্ড’ থেকে
• সাম্য রাইয়ানের মুক্তগদ্য “রাত্রি একটা অনাহুত বেদনার নাম”
• সাম্য রাইয়ানের ‘চোখের ভেতরে হামিং বার্ড’ থেকে
সাম্য রাইয়ান। কবি ও গদ্যকার। জন্ম নব্বইয়ের দশকে কুড়িগ্রামে। প্রকাশিত কবিতাপুস্তিকা: ‘বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা’, ‘মার্কস যদি জানতেন’। কবিতাগ্রন্থ: ‘চোখের ভেতরে হামিং বার্ড’। পোয়েটিক ফিকশন: ‘হলুদ পাহাড়’। প্রবন্ধ: ‘সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট’। একযুগ যাবৎ সম্পাদনা করছেন ‘বিন্দু’।
3 মন্তব্যসমূহ
বা! সাবলীল ও অনবদ্য
উত্তরমুছুনপড়তে ভাল লেগেছে। সাম্য দা ইউ চিয়ার্স
উত্তরমুছুনচীয়ার্স!
মুছুনমন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।