ঘুম ভেঙে গেলে বুঝি কান্না পায়! না হলে জন্মক্ষণে তুমি কেঁদেছিলে কেন? ইচ্ছে জানাবার মতো সময় আমাদের হাতে ছিল না কখনো; মতামতের উর্ধ্বে ছিল জন্মগ্রহণপ্রক্রিয়া। তাই অনিচ্ছুক ছেলেগুলো শুধু থামিয়ে দিতে চায় জীবনমেশিন। অনিচ্ছুক হলে কাজে উপদ্রবহীনতাকেও মনে হতে পারে অসহ্য উপদ্রব; নিরাময় পাই না তখন কাছেকূলে। চোখের সীমায় শুধু দেবদ্যুতের হাতল হয়ে ঝুলতে থাকে একান্ত রেললাইন; হাতল টানলে দুইশ’ টাকা জরিমানা...
পাতার শরীর থেকে জল গড়িয়ে পড়া দেখতে দেখতে
কোনো একদিন আমিও হয়ে যাই জল, গড়িয়ে পড়েছি
পাতার শরীর থেকে, মাতৃগর্ভ ছেড়েছি দারুণ একাকী!
(পাতার শরীর থেকে জল গড়িয়ে পড়া দেখতে দেখতে)
মধ্যরাতে জগতবিদীর্ণ ডাক শুধু শেয়ালই জন্ম দিতে পারে; এমন ধারনা করতাম একসময়। সময় আর আমি পরস্পর দুই পায়ের মতো পাশাপাশি চলতে চলতে জেনেছি, প্রকৃত বিচারে- কিছুই এখনো জানা হয় নাই। শুধু রূপবতী খন্ড বৈচিত্রের প্রেম জিইয়ে রেখেছে; সত্যি বলছি- অকারণ। শৈশবে বইতে ভালোবাসা আর মমতার কথা জেনেছি। সেইসব পাক-পবিত্র ট্যাবুকে খুঁজতে অনেকটা দিন বৃথা হয়রানি শেষে জানলাম, এখন হৃদয়পুরে মমতা নেই কোনো। প্রকৃতপ্রস্তাবে, মমতা একটি পেত্মীর নাম।
এখন নতুন ভয় নিয়ে ঘুমাতে যাই প্রতি রাতে
শিকারী প্রাণীর মতো তাড়া করে, ঘুমাতে পারি না।একেকটা দিনের সম্ভাবনা নিমেষে উড়িয়ে দ্যায়অজস্র সশস্ত্র ভূত... মানুষ ভূত হিংস্রতা নিয়ে।আমি রাত্রি ভয় পেতাম, মানুষ পাশে থাকলে ভয়কেটে যেত, ঘুমাতে পারতাম নিশ্চিন্তে, নির্ভার হয়ে।এখন আমি মানুষ ভয় পাই! এই ভয় নিয়েপালিয়ে বেড়াই ঘরময়, সারা শহরে দিনরাত্রি!(রাত্রির সাথে সখ্যতা ছিল না আমার কোনোকালে)
পরবর্তী জীবনের জন্য অনাড়ম্বর নির্জনতাটুকুই শুধু জমা আছে। উত্তরের পথ ধরে শীতের আসা-যাওয়া জমা আছে। জমা খরচের খাতা মনে আছে একবার দেখতে গিয়েছিলাম। নিদারুণ সেই জামংরুল বন, শুকনো পায়ের হাওয়া, বুকের ভেতরে নদী; অগণন স্রোতচিহ্নে নদীতীর ভরে আছে। জলের শব্দে শরীর ভেজানোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাবৎ রূপের দেশে এই কথা শুধু কবি বলে এক লোক বিড়বিড় করেন। জল হামিংবার্ড নয়, ওরকম ডানাধিক প্রেম নিয়ে উড়ে যাবে গাইতে গাইতে।
জানি সবাই, জল ছাড়া ভেঙে পড়ার আর কোনো শব্দ শোনা যায় না।
গোপন ক্ষয়, ঘুম থেকে জেগে ওঠার মতো নিস্তরঙ্গ; অবধারিত।
কেবল জানালায় দেখা দৃশ্যগুলো চলে যায় সশব্দে; জানিয়ে দ্যায়
দৃশ্যের বাইরে কোনো জগৎ নাই। ভেঙে পড়া যাবতীয় রূপ থেকে
দূরে কোথাও- গোপন ক্ষরণে, চিরাচরিত নির্জনতায় ঝরে পড়ে
বৃক্ষের পাতা... সোনালি সোনালি রোদ ছুঁয়ে অবাক শীতের রোদ হয়ে।
(জল ছাড়া ভেঙে পড়ার আর কোনো শব্দ শোনা যায় না)
বিন্যস্ত ফুলবাগানের পাশে বিশ্বাস বাবু থাকতেন। পুরোনো দালান।
বিকেলে খেলার মাঝে বল ছুটে গেলে চিৎকার করে উঠতেন। দালানের প্লাস্টার খসে খসে ঝরে ঝরে মরে মরে পড়ত। আশ্চর্য! কারও মধ্যে কোনো অনুতাপ নাই, অপরাধবোধও নাই। মৌসুমী বাতাসের মতো মৌসুমী কম্পনের খবর আসে পত্রিকার পাতায়। পুরোনো পাতা, খাবার বিছানো টেবিল। ভাবি কোনোদিন যদি সত্যি ভূমি কম্পিত হয় আবেগে, কী হবে কী হবে। চায়ের দোকান থেকে মায়ের রান্নাঘর আলোচিত। বিশ্বাস বাবুর বন্ধু প্রবীণ সরকার বলেন, ‘বিশ্বাসের পুরোনো দালান, ভেঙে পড়তেই পারে।’
অবশেষে ভেঙে পড়েছিল
বিশ্বাসের কঠিন দেয়াল।
ঝরে পড়ে পাখির বাসা
আর নিতান্তই অবহেলায়
বেড়ে ওঠা বাহারিলতার ঝাড়।
ভিনদেশী পাখি হয়ে উড়ে গেল
মৌসুমী বাতাসের আহ্বানে...
(নিঃসঙ্গতা)
[নোট: উদ্ধৃত কবিতা ও কবিতাংশগুলো কবি সৈয়দ সাখাওয়াৎ এর কবিতাবই ‘খণ্ড খণ্ড রাত্রির আলাপ' থেকে নেয়া।]
সাম্য রাইয়ান। কবি, মুক্তগদ্যক, সমালোচক।
জন্ম নব্বইয়ের দশকে কুড়িগ্রামে।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: 'বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা', 'মার্কস যদি জানতেন'। পোয়েটিক ফিকশন: 'হলুদ পাহাড়'। প্রবন্ধ: 'সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট'।
সম্পাদিত লিটলম্যাগ: বিন্দু।
সম্পাদিত লিটলম্যাগ: বিন্দু।
2 মন্তব্যসমূহ
জলনূপুর-এ এটাই আমার প্রথম পাঠ... 😍
উত্তরমুছুনভালো লাগলো
উত্তরমুছুনমন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।