আকাঙ্ক্ষা
যদিও একটা কাউয়া বা চড়ুই
ডালগুলা ভাঙা
গাছগুলা শুকনা কাঠ
চতুর দিকে লোহা আর লোভ
প্লাস্টিক, কিছু না জন্মানো শিশুর স্বপ্নের ভেতর একটা বিড়াল ডেকে যাচ্ছে মিউউউউউ
কেউ কাউকে ছুতে পারছে না
স্পর্শ না করেই ডলের উপর শুয়ে পড়ছে ডলি
আমরা দলাদলি বাদ্দিয়া করছি ডলাডলি
তোমাকে ভেবে একটা পাতিহাসের গলা চিড়ে বের করছি প্যাক প্যাক প্যাক
তোমাকে ভুলে ত্রিশটা মেয়ে মানুষকে করেছি কল
কেউ ধরেনি, আমিই আমাকে ধরে নিয়ে এসেছি এতোদুর। যেন আরো দুটি হাত আমার, দুটি পা। আরো একটা অন্তর দিয়া আমি আমাকে অনুভব করতেছি। আমি আমার গলায় রশি বেঁধে ছেড়ে দিয়েছি। সকলের সবকিছু ঘটছে, আমার তীব্র হচ্ছে আমি। বুকের ভেতর করাত চালিয়ে রক্তকে বুঝিয়েছি আরো লাল। হৃৎপিন্ডকে বুঝিয়েছি আরো প্রবাহ। কোথাও আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে চোঁখ বেধে। নারীদের থেকে দুরে, আরো নাড়ির ভেতরে আমাকে বেঁধে রাখা হবে বিরহ আর বিস্ময় দিয়ে, এই ভয়ে আমি চিরকাল তোমাকে খুঁজেছি। এই শঙ্কায় আমি চিরকাল অমর রেখেছি চিন্তা ও চিতা। আমার মৃতদেহের পাশে বিড়াল ডেকে যাচ্ছে। কুকুর ডেকে যাচ্ছে। তুচ্ছ কাক আর কান্না ডাকছে কেবল ডাকছ না তুমি।
কচুরীপানার খেত
আমি অবসার্ভ করা ছেড়ে দিসি। ঘাসের নিচের মাটির দিকে তাকানো হয় না। বাঁধ দেওয়া নদীর দিক তাকাইলে শুধু কচুরিপানাই দেখি। এই দেখা সেই বাচ্চা কালে তখন নদী মানে ভাবতাম কচুরীপানার খেত। মসজিদে ইমামের পেছনে দাড়ায়া নামাজ পড়তাম আর ভাবতাম আল্লাহ কেমন হবে? গরীব ইমামসাব প্রতিদিন একটা কুচকানো পাঞ্জাবী পরে নামাজ পরাতেন। আমি ভাবতাম আল্লাহর পাঞ্জাবীটাও মনে হয় এরকম কুচকানো। আব্বারে জিগাইলাম আব্বা আল্লার পাঞ্জাবীটা কি এরকম কুচকানো আব্বা বললেন তওবা তওবা আল্লাহর কোন পাঞ্জাবী নাই। আমার যে কি মায়া লাগলো আল্লাহর জন্য। চিন্তা করলাম অল্প অল্প টাকা জমাইয়া আল্লার জন্য একটা পাঞ্জাবী কিনব। ঈদে আল্লারে এই পাঞ্জাবিটা দিব। পাঞ্জাবি কিনে বহুবছর অপেক্ষা করছি কিন্তু আল্লাহর সাথে আর দেখা হইলো না। বড় হয়ে বুঝছি। আসলে কি বুঝছি আল্লারে নদীরে আর তোমার। এই যে উপরিতল থেকে দেখা। সেই দেখায় গ্রামের রামযাত্রা দেখে এমন কান্নাকাটি শুরু করে দিসিলাম। যাত্রার ভেতর সজলের বাপরে মেরে ফেলতে দেখে আমি এতো দুঃখ পাইয়া গেছিলাম। কানতে কানতে কপোল ভিজে গেছে। পরে সুধাংসু কাকারে পান বেচতে দেখে আব্বারে কইলাম আব্বা উনিতো মরে নাই। আব্বা কইলো আরে বোকা এইগুলা মিছামিছি অভিনয়। সেবার যখন বড় মা মারা গেলো। সবাই কান্না কাটি করলো আমি ভাবলাম অভিনয়, কয়েকদিন পর বড় মা ফিরে আসবে। বড় মা আর ফেরেনি। তার রেখে যাওয়া শাড়ি দিয়ে মা কাঁথা সেলাই করছে। সেই কাঁথা গায় দিয়া ঘুমাইতো আমার বড় বোন। একদিন মাদ্রাসা থেকে এসে দেখি বড় মা চৌকিতে শুয়ে আছে। আসলে বড় মা না আমার বড় বোন কেই বড় মা ভেবে খুশি হয়া গেসিলাম। এরপর থেকে বড় আপুকে বড় মা ই মনে হইতো। বড় আপুর যেদিন বিয়ে হয়। সেদিন দেখি একদল ছেলে বুড়ো এসে আমার বোনকে নিয়ে যাচ্ছে। আমার বোন কানতেছে, মা কানতেছে। আমি বড় আপুর জামাইর হাতে একটা কামড় দিয়া ওরে নিয়া আসতে চাইলাম। কামড় দেওয়ায় আব্বা আমারে এমন মাইর দিলো আমি কিছুই বুইঝা উঠতে পারলাম না। আব্বা আম্মা এরকম আয়োজন করে কেঁদে কেটে আমার বড় বোনকে ডাকাত দলের হাতে তুলে দিলো। ভাবলাম অভিনয়। অভিনয় আর রিয়ালিটির খেলা বুঝতে বুঝতে জীবন পাড় হইয়া যাইতেছে। আইজো কি বুইঝা উঠতে পারছি।
প্যারা
প্যারা লাগে। শীতে পাঁ ফেটে গেছে তোমারে লাগে না। প্যারা লাগে। পকেটে টাকা নাই তোমারে লাগে না। প্যারা লাগে। হাজারো লোহার ইল সিটিতে কিলবিল করে। স্পর্শের অসুখে মন চায় ধরি। ধরা হয়না। প্যারা লাগে। আর শীতের দিনে লাগে শীত। হাফ প্যান্ট পরে রাস্তায় হাটা যায়না। প্যারা লাগে। ক্ষুধায় লাগে খাওন, তোমারে লাগে না। প্যারা লাগে। লাগে ভাবির লগে ভাইয়ের। শিবিরের লগে লেফট পোলাপানের। তোমারে লাগেনা। প্যারা লাগে। এতো বার প্যারা লিখতেও প্যারা লাগে। তোমারে লাগেনা । এতো এতো প্যারা লাগে। প্যারাগ্রাফ উপচাইয়া প্যারা লাগে। হাসনাতের কথায় প্যারা লাগে। গাছের ডালে কাউয়া বসে কা কা করে। সকল শ্বাসের শাখায় উড়ে উড়ে যায় ধুলা। এই ধুলা কি তোমার গায়ে লাগে না? প্যারা লাগে। কতজন কতকিছু চায়। জামাতে ইসলাম চায়। বি এনপি ক্ষমতা চায়। মোদি চায় হাসিনারে। তোমারে চায় না কেউ সারিবদ্ধ লোহার বাগানে। প্যারা লাগে। তোমারে লাগে না। আরো আরো প্যারা লাগে। বুকের ঘুঘু উড়ে যায়। ঘুঘু পুষতে খাঁচা লাগে। তোমারে লাগে না প্যারা লাগে। আর লাগে অর মায়রে বাপ।
গুলিস্তান
তুমি আমি সমান সমান
দুজনেই নামি বাস থেকে
গুলিস্তান
তুমি রুপবতি
আসো রুপগঞ্জ হতে
আমি রুপবান নই
আমাদের মিলে না মতে
আমরা এক হই কিছুটা,
ক্ষতে।
ভাবি সমান সমান।
তুমি যাও রিকশায়
আমি হেঁটে হেঁটে
পথের ধুলা পায়ে চেটে চেটে
আমাদের দেখা হয় উদ্যান গেটে।
শুক্কুরবার
তুমি যাবে লেকপাড়
আমি পাড় ঘেসা ঘাসে
বসে বন্ধুর পাশে
দেখব তোমার
রুপের বাহার
তুমি রুপবতি
রপগঞ্জ থাকো
আমি শ্যামপুর
চিরদুর তুমি হতে
তাও ভাবি
সমান সমান
বাস থেকে নামি
আমরা দুজন
গুলিস্তান।
ভ্যাপু
কোথাও গিয়েছিলাম আমি। আমাকে রেখে নদীটা পার হলো নৌকায়। ঘাটে বসে দেখেছি পাহাড়, পৃথিবীর খোঁপায়। বিশাল সমুদ্রের চোখ তুলে আমাকে শাসাচ্ছে ঢেউ। বাতাসের ধমকে কিছুটা ঘটেছ তুমি। এই বাতাস হেমন্তকে কাঁধে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। সব, শব আমি দেখে ফেলেছি। যাওয়ার ভেতর মৃত কেঁচো আর আর চাঁদ উঠেছিলো বসে থাকা উটের দাড়ানো কুজে। তারাগুলো ছিলো আকাশের নীলে ভেসে থাকা জাহাজ। এতোদুর থেকে সেসব জাহাজের ভেপু কল্পনা করে, আমি তোমাকে ডাকছিলাম একবার। সেই একবার পথ করে দিয়ে সরে গেছো নীলা।
আমাকে ছুড়ে মারা হোক
যেখানে গিয়েছি ধুসর, যেখানে যাইনি সেখানে আহত চিতা। নদীর উপর সেলাই করা ব্রীজে তোমার হাত ধরে পার হচ্ছে হরিণ। আজ বুধবার, অল্প শীতে বেশি হেমন্তে আক্রান্ত হয়ে সারাদিন ফুলতোলা বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। গতকালের বৃষ্টির কথা মনে পড়ছে, সোনার সিংহ গর্জন করে কাঁদছিলো। তার কি মারা গেছে কেউ ? আকাশ থেকে কেউতো ফেরেনি। ফাইরুজ কিংবা বন্ধু আতিক। আমরা ফিরে ফিরে গেছি একই চিন্তা ও চক্রান্তে । ফিরে ফিরে গেছি বুধবারে কিংবা তার পরেরদিন, মদ খেয়ে শুয়ে পরেছিলাম মৃত্তিকার সাথে। সবার সাথে শোয় যে মৃত্তিকা তাকে ভালোবেসে সাব্যস্তির চোখে হলো দোষ। ঠিক হলো আমাকে মারা হবে প্রস্তুর নিক্ষেপে। মৃত্যুকে আমি ভয় পাইনা, হিংসা হয় প্রস্তর। এতো ভারী হয়েও সে উড়ে আসবে আমার গায়ে। আমি কখনো উড়িনি। লোহার ছলনায় একবার আমার শ্বাস উড়ছিলো, ঐ একবার। কাচের ধানে সবুজ হয়েছিলো মাঠ। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে মোমের নদীতে পা উচিয়ে একবার লাফ মেরেছিলাম। সেই লাফের কথা মনে করে আমি আমার মরণদন্ড হিরণ্য পর্বতে জমা দিতে চাই। একবার দুইহাতে উড়ে পড়তে চাই মহানন্দার স্তুপকৃত প্রস্তরে।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।