[ফ্রান্সের অস্তিত্ববাদী দর্শনের ধারার প্রথম দিকের দার্শনিক সিমোন দ্যা বুভোয়ার। জন্ম গ্রহণ করেছেন ১৯০৮ সালে। অন্যান্য অস্তিত্ববাদী দার্শনিক জ্যা পল সার্ত্রে, আলবেয়ার কামু প্রমুখ ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠজন। আধুনিক নারীবাদী ধারার দ্বিতীয় পর্বের তিনি প্রবর্তক। তাঁর বিখ্যাত বই 'সেকেন্ড সেক্স' সারা পৃথিবীর নারীবাদী মানুষকে আধুনিক বোধে আলোকিত হতে পথ দেখিয়েছে। তাঁর রচিত উপন্যাস ফ্রান্সের অস্তিত্ববাদী সাহিত্যের অন্যতম উদাহরণ। তাঁর দার্শনিক চেতনা বিকাশে দেকার্ত, বার্গসন, এডমুন্ড হাসের্ল, মার্টিন হাইডেগার, কার্ল মার্ক্স, ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, ইমানুয়েল কান্ট, হেগেল প্রমুখের প্রভাব রয়েছে। আধুনিক নারীকে জীবন ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তাঁর নাম মানব ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। চার খণ্ডে লিখিত আত্মজীবনীতে তাঁর বহুমাত্রিক ও বুদ্ধিদীপ্ত জীবনের তথ্যবহুল বিবরণ পাওয়া যায়। স্বাধীন ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন জীবনের অন্বেষা তিনি পৃথিবীর সকল নারীর চেতনায় জন্ম দিতে পেরেছেন। নারীরা বুঝতে পেরেছে নিজেদের স্বরূপ। বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামী, চিন্তাশীল, শিক্ষিত, স্বনির্ভর নারী সিমোন দ্যা বুভোয়ার এর গুরুত্বপূর্ণ দর্শনচিন্তার কাছে ঋণী হয়ে থাকবে। ১৯৪৯ সালে প্রকাশ করেন তাঁর বিখ্যাত বই 'দ্যা সেকেন্ড সেক্স'। এই বইয়ের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে আধুনিক নারীমুক্তির দ্বিতীয় ধারা ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারে, সমাজে, মানবিক সম্পর্কগুলোতে ঘটে যায় এক অভূতপূর্ব বিপ্লব। অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর আধুনিক মননশীল মানুষদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলোতে ফ্রান্সের নাগরিকদের অস্তিত্ববাদী সমস্যাকে সাহিত্যরূপ দিয়েছেন। অস্তিত্ববাদী ভাবনা, সমস্যা এবং প্রশ্নগুলোকে আশ্রয় করে লেখা উপন্যাসগুলোকে সেকালের সকল মনীষীই উচ্চ প্রশংসা করেছেন। আধুনিক নারীমুক্তির প্রদর্শক, অস্তিত্ববাদী দার্শনিক সিমোন দ্যা বুভোয়ার মারা যান ১৯৮৬ সালে। ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় পরিবর্তন করা তাঁর উক্তিগুলো ইন্টারনেটে থাকা 'গুডরিড্স' ও অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
—সুশান্ত বর্মণ]
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উক্তি:
১
আমি অস্বাভাবিক লোভী, আমি জীবনের কাছ থেকে সবকিছু চাই। আমি একজন নারী হতে চাই, হতে চাই একজন পুরুষ, চাই অনেক বন্ধুবান্ধব, আবার খুব একা হতে, অনেক কাজ করতে এবং ভাল বই লিখতে, ভ্রমণ করতে এবং নিজেকে উপভোগ করতে, স্বার্থপর হতে, আবার নিঃস্বার্থ হতে…বুঝতেই পারছেন যা আমি চাই, তার সবগুলো পাওয়া খুব কঠিন, আর যখন আমি বিফল হই, তখন রাগে পাগল হয়ে যাই।
২
প্রেম আত্মিক নয় এমনটা স্বীকার করার চাইতে একজন নারী স্থান ও কালের অস্তিত্বকে উপেক্ষা করতে রাজী।
৩
কেউ নারী হয়ে জন্মায় না, নারী হয়ে ওঠে।
৪
যখন শিশু ছিলাম, কিশোরী ছিলাম আমাকে হতাশা থেকে রক্ষা করেছে বই। এ থেকে বুঝতে পেরেছি সংস্কৃতির মূল্য সবচাইতে বেশি।
৫
নারীকে নয়, নিজেকে তৃপ্ত করতে পুরুষ নারীর কাছে যায়।
৬
পাখা কেটে দিয়ে উড়তে না পারার জন্য তাকে দোষারোপ করা হয়।
৭
যখন একজন নারী প্রেম পায় না, তখনো কবিতাকে পেতে পারে।
৮
শরীরকে অবিশ্বাস করা মানে, নিজের ওপর আস্থা হারানো।
৯
দিনলিপি (ডায়রি) একটা অবান্তর জিনিস; যা রেখেছেন তার চাইতে যা মুছে ফেলেছেন, সেগুলো বেশি তাৎপর্যময়।
১০
পুরুষরা মানুষ, নারীরা মহিলা।
সুশান্ত বর্মণ। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। জন্ম ‘আর কে রোড’-এর অদূরে, কুড়িগ্রামে। শিক্ষকতার চাকরি করেন। উদ্যোক্তা ও পরিচালক: বই আলোচনার ওয়েবসাইট ‘গ্রন্থগত’ (www.granthagata.com)। পাশাপাশি সম্পাদনা করছেন কুড়িগ্রামের লেখকদের নিয়ে আলোচনার পত্রিকা ‘তীব্র কুড়িগ্রাম’। একসময় সম্পাদনা করতেন প্রবন্ধের পত্রিকা ‘ব্যবচ্ছেদ’। প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থ: দুই হাজার বছর আগের তামিল সাহিত্য ‘থিরুক্কুরল’।
1 মন্তব্যসমূহ
ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনমন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।