TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

শিমুল মাহমুদের কবিতা

প্রচ্ছদ: নাজমুল হোসাইন   

ভাত খাওয়ার শব্দ


ধানগাছ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ধানগাছের নাম হয় আত্মহত্যা। আত্মহত্যার নাম হয় ক্ষুধা। আমি ক্ষুধার দিকেই হাঁটছিলাম। আমি ক্ষুধাকে চুমা খাইতে খাইতে আত্মহত্যার দিকেই ছুটছিলাম। আমি ট্রেনে চইড়া ক্ষুধার দিকেই দৌড়াচ্ছিলাম। ট্রেনের দুলুনিতে আত্মহত্যা বোধ করছি। ব্যবহার করছি না চোখ। চোখ ক্ষুধার নিয়ামক। আকাশ বলিয়া কিছু নাই। অথচ চোখেরা আকাশের দিকে তাকায়া ক্ষুধার্থবোধ করছে। এসো খানিকটা সময় আকাশের ওপর হাত ধরাধরি করিয়া নাচি। মহাকাশে ধানচাষ নাই : নদী পুকুর মাছচাষ নাই। অথচ চাঁদরাতের চামড়ায় এক ফালি আত্মহত্যা ঝুলে আছে। নির্বিকার।



ডাকবাংলোতে হাওয়া। কুয়াশা অতিক্রম করে ছুটছে মেজাজ। ক্ষুধা, যাকে তুমি ভয় বলো। ক্ষুধাহাওয়ায় উড়ছে মেজাজ। অতঃপর ভিজ্যুয়াল : ছবি ও শরীর। তোমার চোখ যখন টেলিস্কপ : কামবন্দী। দখলচুম্বন। তুমুল নাচছে স্তনসকল। কামরাঙা ফুলগুলো স্কুলের ব্যাঞ্চে বসে হাসছে। লাবণ্য দুলছে। দুলছে ভ্রমণ। শরীরকে বলা হয় ভ্রমণ। ভ্রমণের মোড়ে মোড়ে ক্ষুধা, খাইখাই : বিবিধ খাওয়ার কৌশল। বিছানা থেকে পথে ও পশ্চাতে লোভ। লোভ মতলব, ফিলিংস। কাঠঠোকরা ঠুকরিয়ে দেখছে ফিলিংস। কাঠগোলাপ ছেড়ে হেঁটে যাচ্ছে ফিলিংস। হেঁটে যাচ্ছে লাবণ্য। এনার্জি ফিল করছি। বি কেয়াফুল। 


কোভিড ১৯ থেকে শৈশবের দিকে


বৃষ্টিরা নেমে এসেছে রাস্তায়।
বৃষ্টি নয়, হেঁটে যাচ্ছে ঝাঁক ঝাঁক মেয়ে।
কারেন্টের তারগুলো ইভটিজিঙে
ঝরিয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ।
বৃষ্টিদের দিকে হাঁটতে হাঁটতে
ঢুকে গেলাম চড়–ই পাখির ডানায়।
চড়–ইয়ের ডানার ভিতর লুকিয়ে ছিল
শিশুকাল : শরৎ-বৈশাখ-বর্ষা।

এই বর্ষা, যাইবা?
কই যাইবেন?
শিশুবেলাপুর।

একটা মা-পাখি শিশুকাল ঠোঁটে নিয়ে
উড়ে যাচ্ছে শশ্মানের দিকে।


ম্যাগাডেথ @ থ্রি ডাইমেনশন


ফেইক আইডির সঙ্গে লড়াই করার মতো কে আছেন? 
ডিক্টেট। ডিলিট। ডিপোর্ট। 
ট্রিপল ডি থেকে থ্রি ডাইমেনশন।
পাসওয়ার্ড ছাড়াই খুলে ফেলেছি বক্ষবন্ধনী। 
বক্ষবন্ধনীর ভিতর আটকে রয়েছে মৃত্যু। 
মৃত্যুর পুটকিতে নবজাত সকাল টলমল করছে।
কামঅন কিডস, কিস মি।



লিঙ্গ সামলিয়ে লিঙ্গ লুকিয়ে খুব সাবধানে। মদন আলির মুসলমানি হচ্ছে। অ্যাবাউট টার্ন। যাহারা ক্লীব তাহাদের জন্য কোনও যুদ্ধ নাই। অ্যাটেনশন। লিঙ্গ সামলাইতে গিয়া মদন আলি হিমশিম খাইতে খাইতে ধর্মের গোয়ায় ফুঁ দিবার লাগছে। ফুলহাতে প্রধানমন্ত্রী দেশ ও দশের সিঁড়িতে টেনশনলেস। একটা মায়াহরিণ সন্ধ্যার শীতলতায় টেম্পারেচার কম্প্রোমাইজ : ক্রিয়েট আফটার ডার্ক। ডাবল-মার্চ। মদন আলির লিঙ্গ বন্দুকের ট্রিগারে চাপ দিবার লাগছে। বক্তৃতার প্রেসারে পার্লামেন্টের মাইকগুলা ফাটতে থাকলে ন্যানোফিলিংস। বাউঞ্চব্যাক। মাথাবিহীন মানুষগুলা লিঙ্গ হাতে হাঁটছে।



শিমুল মাহমুদ। কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক। জন্ম ৩ মে ১৯৬৭, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পাঠ গ্রহণ শেষে ইউজিসি-র স্কলার হিসেবে পৌরাণিক বিষয়াদির ওপর গবেষণা করে অর্জন করেছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। নেশা: অধ্যাপনা। পছন্দ: পাঠগ্রহণ, ভ্রমণ ও একাকিত্ব। অপছন্দ: মঞ্চলোলুপ আঁতলামো। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘মস্তিষ্কে দিনরাত্রি’ (কারুজ, ঢাকা: ১৯৯০), ‘সাদাঘোড়ার স্রোত’ (নিত্যপ্রকাশ, ঢাকা: ১৯৯৮), ‘প্রাকৃত ঈশ্বর’ (শ্রাবণ প্রকাশন, ঢাকা: ২০০০), ‘জীবাতবে ন মৃত্যবে’ (শ্রাবণ প্রকাশন, ঢাকা: ২০০১), ‘কন্যাকমলসংহিতা’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৭), ‘অধিবিদ্যাকে না বলুন’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৯), ‘আবহাওয়াবিদগণ জানেন’ (চিহ্ন, রাজশাহী: ২০১২), ‘কবিতাসংগ্রহ : সপ্তহস্ত সমুদ্রসংলাপ’ (রোদেলা, ঢাকা: ২০১৪), ‘স্তন্যপায়ী ক্ষেত্রউত্তম’ (অচেনা যাত্রী, উত্তর ২৪ পরগণা: ২০১৫), ‘বস্তুজৈবনিক’ (নাগরী, সিলেট: ২০১৬), ‘সমূহ দৃশ্যের জাদু’ (চৈতন্য, সিলেট: ২০১৮),   ‘ভাষাদের শষ্যদানা’ (বেহুলা বাংলা, ২০১৯), ‘ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত কবিতা’ (ঘোড়াউত্রা, ২০২০), দীর্ঘকবিতা: ‘দেশভাগ হইলো একফালি নকশাদার লাল তরমুজ’ (বেহুলা বাংলা, ২০২০)। গল্পগ্রন্থ: ‘ইলিশখাড়ি ও অন্যান্য গল্প’ (নিত্যপ্রকাশ, ঢাকা: ১৯৯৯), ‘মিথ মমি অথবা অনিবার্য মানব’ (পুন্ড্র প্রকাশন, বগুড়া: ২০০৩), ‘হয়তো আমরা সকলেই অপরাধী’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০০৮), ‘ইস্টেশনের গহনজনা’ (আশালয়, ঢাকা: ২০১৫), ‘নির্বাচিত গল্প’ (নাগরী, সিলেট: ২০১৬), ‘অগ্নিপুরাণ ও অন্যান্য গল্প’ (চৈতন্য, সিলেট: ২০১৬), ‘মনবিকলনগল্প’ (২০২১)। উপন্যাস: ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনী’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৭), ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনী’ (ধানসিড়ি, কলকাতা: ২০১৪), ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনি’ (চৈতন্য সংস্করণ, ২০১৬), ‘সুইসাইড নোট’ (নাগরী, ২০১৯)। প্রবন্ধ: ‘কবিতাশিল্পের জটিলতা’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০০৭), ‘নজরুল সাহিত্যে পুরাণ প্রসঙ্গ’ (বাংলা একাডেমী, ঢাকা: ২০০৯), ‘জীবনানন্দ দাশ : মিথ ও সমকাল’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০১০), ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ধারার কবিতা’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০১২), ‘মিথ-পুরাণের পরিচয়’ (রোদেলা, ঢাকা: ২০১৬)। তিন দশক যাবৎ সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের ছোট-কাগজ: ‘কারুজ’।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ