প্রসবকালীন
এক
একটা বন্ধ দরজা তিন মাসের আয়ু নিয়ে
শান্ত দাঁড়িয়ে থাকে
ঠিক তখনই প্রতিটি ছাদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়
সমস্ত সিঁড়ি
আর রাস্তা থেকে উঠে আসে রাস্তারই মতো কেউ— চোখ ওড়ে দিগ্বিদিক
সে কিছু তারার নামে পাখি পোষে
পাথর গড়িয়ে দেয় বুক থেকে পায়ে
পা এক প্রবল সম্ভাবনা, বারবার
ফিরে-আসা খোঁজে
বন্ধ দরজার সামনে দীর্ঘশ্বাস রেখে ফিরে যায়
দুই
একটা ঝাপসা কান্নার ভেতর কে যেন মেলে রেখেছে আমাদের পুরোনো দিনের হাড়গোড়
ধোঁয়া উড়ছে, আর মুখহীন একটা মানুষ শুয়ে আছে দুহাত ছড়িয়ে
অসংখ্য চোখের বাগান কীভাবে যে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক এই ভরা বৃষ্টির দিনে
কীভাবে যে শরীরে এত জল নিয়ে ডুবে যাচ্ছে সূর্য
একটা ঝাপসা কান্নার ভেতর, তীব্র চিৎকারে ছুটে চলেছে নাশপাতি রঙের ট্রেন
তিন
এই ভর সন্ধেবেলা প্রতিটি শব্দ অসম্ভব ভারী হয়ে আসে
অসংখ্য রঙের গোধূলি হয় চারিদিকে
মাংস ফুলে শরীর অনেকটা বেলুনের মতো উড়তে থাকে আকাশে
দিকেদিকে এত বেশি পান্থশালা গজিয়ে ওঠে
যে নেশায় টলমল করে পথ
আঙুলে আঙুল জড়িয়ে যায়, জিভে জিভ
এই ভর সন্ধেবেলা চা-বাগানগুলোর প্রচণ্ড শরীর পায়
আর প্রতিটি মর্গে হঠাৎ বেড়ে যায় নামঠিকানাহীন দেহ
চার
তোমার এই নিশ্চুপ বসে থাকা ক্রমশ ফুলে ওঠে
প্রসব করে একাধিক ছোটো ছোটো বসে থাকা
তারা ছড়িয়ে পড়ে আমাদের ঘুমের ভেতর
তখন ঘুম আর ব্যক্তিগত থাকে না— একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে, সমস্বরে গেয়ে ওঠে প্রার্থনাসঙ্গীত অথবা বেরিয়ে পড়ে দিকহীন
হাসতে হাসতে ঢুকে পড়ে কোনও অ্যাসাইলামের ভেতর
পাঁচ
একটা মুখ থেকে আর একটা মুখের দিকে যেতে গিয়ে মাঝখানে বৃষ্টি নামলো, নামলো পুরোনো দিনের কথারা
নরম পোশাকের আবহাওয়া, কেন তুমি ফিরে যাচ্ছ সূর্য খেতের ভেতর
জল কিছুটা বাষ্প হয়ে তৈরি করল আমাদের ঘরবাড়ি— শরীরের তাপে তারা মিলিয়ে গেলে
কেউকেউ আমাদের নাম দিল গৃহহীন
অনাথআশ্রমের মতো একটা সম্পর্ক নিয়ে
আমরা হাজির হলাম এই অনেক সূর্যের দেশে
অথচ একবারও গোধূলি হল না আমাদের
সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। কবি। পশ্চিমবঙ্গে বসবাস। লেখালেখি শুরু শূন্যদশকে। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘যেখানে ভ্রমণরেখা’, ‘আলফাটোন’, ‘মুজরিমপুর’, ‘শমীবৃক্ষের নীচে’, ‘আহারলিপি’ এবং ‘একলামি’।
1 মন্তব্যসমূহ
মুগ্ধ হলাম। এই কবির আরো কবিতা পড়তে চাই।
উত্তরমুছুনমন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।