TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

শাহেদুজ্জামান লিংকনের কবিতা



পাহারা

দু’ধারী করাত আর
শত শত ইতস্তত চোখ নিয়ে
বসে থাকে আনারস গাছ।

নির্বাক নিশ্চুপ হয়ে সশস্ত্র প্রহরী
সাবধানী দৃষ্টি রাখে চতুর্সীমানায়।

তবু চুরি হয়ে যাচ্ছে রস ও রসদ।


কান্না বিষয়ক আলোচনা

মায়ের মৃত্যুতে সন্তানের চোখে
শোককে প্রকাশ হতে দেখে ভাবি—
আমাদের কান্নাগুলি গতানুগতিক।
মাথার ওপরে পাখি উড়ে গেলে কেউ তো কাঁদে না,
চুল কাটাবার কালে কাঁদে না কখনো।
মাতা মরে গেলে দুঃখ পেতে হয়,
দুঃখ পেলে কেঁদে দিতে হয়
এতো জানি স্নায়ুর কৌশল!

পৃথিবীর প্রথম মাতার মৃত্যুদিনে
অশ্রু ফেলেছে কি সন্তানেরা?
শুধু দুঃখ পাওয়াতে কি সীমাবদ্ধ ছিলো শোক?
হয়তো বা যাপিত জীবনে প্রাপ্ত অপূর্ণতা
স্নায়ুকে জোগায় এই প্রণোদনা,
তারপর জননীর মৃত্যুকালে আসে অপূর্ব সুযোগ!

ঐ ছেলেটা, কোন দিকে যাচ্ছে?
যে আজ ভূষিত হলো সীমার-পাথর উপাধিতে
কোথায় সে যাচ্ছে? ঐ নির্জন নিভৃত পুকুর পাড়ে?
তার সাথে এইবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে।


সুর ও ভাস্কর্য

সহসা রাত্রিতে আসলো ভেসে কার যেন সুর
কি করে এ-খবর ছড়িয়ে গেলো আমি তৃষাতুর?
তালের ওঠা-নামা স্পষ্ট করে যাইতেছে শোনা
জানো তো প্রত্যেক গান আদতে এক প্রার্থনা।
সুরের সাথে মিল দিয়ে গড়া হলো যে-মুখখানি
তাকে খুঁজতে যাওয়া মানে— বৃথা চেষ্টা, হয়রানি।
আসবেও না, নেই এমন কোনো মুখ পৃথিবীতে
মদির হও মন, তারচেয়ে চলন্ত সঙ্গীতে।
চলতি পথে কোনোদিন যদি এ-গান যায় শোনা
কিছুতেই সেদিন আমি তো চোখ তুলে তাকাবো না।
আসুক না যতোই পিপাসা মনে, দুটি চোখ বেয়ে
নিজ ভাস্কর্য ভাঙা কেউ কি দেখে চেয়ে চেয়ে?


চোরাবালি

সাঁতারবিদ্যা বুঝিবা বৃথা যায় তোমার সমুদ্রপ্রবণ অঞ্চলে।
কুহেলিকা নিয়ে বলেছো বিস্তর আর পুস্তকে মরীচিকার বিজ্ঞান।
আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান, দিয়েছি সদুত্তর— "জানো তো সাঁতার?" এর বিপরীতে।

টুকরো টুকরো ঘুমের শেষ দৃশ্যে
তোমার ঐ মুখভঙ্গি, কেবলি ব্যঙ্গ মনে হয়।


রাষ্ট্র

স্বপ্নে অভিধান খুঁজে দেখি—
‘খুন করা’ মানে মুছে দেয়া!
(শিক্ষক যেমন ক্লাসে, ব্লাকবোর্ডে শব্দ খুন করে?
টিভিতে তরুণীদের সব দাগ খুন করে ক্রিম?)
অন্য অর্থ হয়তোবা ছিল।

সেই অর্থে কোনো খুনিই তো বিশ্বস্ত নয়
বুকে বিদ্ধ ছুরি কতো বুক ফুঁড়ে যায়!
গুলি কি কেবল এক খুলিতেই শেষ?
এমনকি যারা মুছে গেছে—
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
আড়ষ্ট যা, তাও তাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে
মৃতের অজানা কথা, জীবিতের ঠোঁটে।

কোন সে বিশ্বস্ত খুনি, যার হাতে তুলে দেবো নিঃশব্দে নিজেকে
এ কবিতা পড়ে— রাত্রে, বৃষ্টিতে ভিজে কে?
ঘরে এসো, গা মুছে দাঁড়ালে
দেখবে খুনির ছায়া— ভেতরে, আড়ালে।


শাহেদুজ্জামান লিংকন। কবি ও গল্পকার। জন্ম ২ মে, ১৯৮৮ লালমনিরহাটের দলগ্রাম, কালীগঞ্জে।লেখালেখির শুরু এই শতাব্দীর শূন্য দশকে। পেশায় একজন চিকিৎসক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।