TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

সন্ন্যাসী আরণ্যকের কবিতা


অনুবাদ



শব্দহীন— কিছু না শোনার মতো। কিছুই না শোনা কেন শব্দহীন? বাতাসের কোনো অবস্থায় গায়ের রোম কাঁপছে বা আপনার ঠোঁটে আলত পাখা রাখছে প্রজাপতি গোত্রের কোনো যুবতী— বা রক্তের প্রবাহ বিভিন্ন অণুচক্রিকা নিয়ে ছুঁটছে— একে অন্যরে ধাক্কাচ্ছে অথবা রোমে রোমে হচ্ছে ঘর্ষণ, স্বাভাবিক শ্বাসের শব্দ পিঁপড়ের হাঁটার শব্দ আঙুলে আঙুল ছোঁয়ার শব্দ— নিঃশব্দ কেন? শব্দের হেন সীমাবদ্ধতায় আপনি হতাশ! বেশ— পৃথিবীর সকল ছাগলের ভাষা ডিকোড করে ভ্যাঁ পেলেন— তদ্রূপ হাম্বা ঘেউ মিউ। আদতে আপনি এক ন্যানো অনুবাদক যিনি জানছেন না কাঠালপাতা, খড়,  হাড্ডি অথবা ফ্রাইড ফিসের পরম অনুবাদ! টয়লেট থেকে জল ঝরছে… পাহাড় বেয়ে ঝরনা… মেঘ থেকে বৃষ্টি… এবং মাটিতে পতনের ব্যঞ্জনা— সবগুলোতে দিন ভিন্ন শব্দদেহ। ভাবছেন শব্দ বাস্তবতার আঙুল চোষক— স্বপ্ন কল্পনা ঘুম অথবা অনুবাদ করুন টিকটিকির লেজ খসার। জননাঙ্গের উত্থান অথবা পতন শূন্য মহাশূন্য… আশিক নামের বন্ধুর ছোটো দাঁত— দাঁত দিয়ে খোলা ব্লাউজ হুক— অনুবাদ করুন কাল মহাকাল মশাদের সঙ্গম— অথবা প্রতিটা বেডরুমের বিবিধ লাভমেকিং!




কিছু একটার অনুবাদ করতে চলছেন— যুবতী বান্ধবী বললো— ভালোলাগে না। এই নালাগোয়া ভালোরা কই থাকে— শরীরে… শরীরের ভেতর… আরো, আরো ভেতর কোথাও— দেখতে সরিয়ে দিলেন ওড়না— স্তুপাকৃতির নরম নরম সরিয়ে দেখছেন, মিলছে না কিছু— খুলছেন বুক সমেত দুধবাট (—উফফ যেখানে সেখানে হাতাহাতি করোনা সোনা) পেলেন হট বেইবি টিশার্ট ফোমাশ্রিত অন্তর্বাস খলবলে বুকগহ্বরে সাতখানা খাড়া শিশ্ন— আপনার বাবুয়াল ছাড়া! অনুদিত আউটপুট— নিজেই এক মন্দলাগোয়া পানুস্তম্ভ!




আপনার বাবা স্ত্রীবিমুখ— দেখছেন অকারণ। পেছন পা অর্ধভাঁজে হেগোয়া নেড়ির বিষণ্ণ মুখে কেউ ভাসছে— সেও শোয় না পতির বিছানায়— বন্ধু আছে হয়তো। বোনের একাধিক প্রেমিক— বিবিধ রঙের হিজাব— উত্তেজনা! স্ট্রোবেরি অথবা চকোলেট ফ্লেভার দ্বন্দ্ব— গাঞ্জায় বমি পাওয়া— নিষ্ক্রিয়তা বা ওরালে অনিচ্ছা। কোন স্পাইসিতে মাখোমাখো হওয়া যায় ভাবতেই কাটছে সাতাশ কড়াইকাল— তেলের তপ্ততায় জটিল হচ্ছে সাওয়ারে ভেঁজার সমীকরণ। পারফিউম… প্রেমিকার নিপলে নতুন দাঁতচিহ্ন পশ্চিমা মেঘ বন্ধুর চোখ— এতো সব কোডের একক অনুবাদ ভাল্লাগেনা! হয় নাকি?


সংসার সঙসার

তিনদিন আগের মড়া— কথাটা সত্য নাও হতে পারে— হতে পারে পাঁচদিন। বিশ্রী পঁচা গন্ধের লাশ আমাদের আঙ্কেল হন— এখন আমরা কান্নাকাটি করতেছি— আন্টিও কাঁদছেন। কাঁদবেনইতো কতগুলো রাত দ্বৈত থেকেছেন! এখন জানাজায় দাঁড়াবো— গোস্তপঁচা গন্ধে হড়হড়িয়ে সটকে যাবো, অনেকেই নাক চেপে নিয়তে থাকবে। দূরে দাঁড়িয়েছি— মেঘ ডাকতেছে; মাটি কাঁপতেছে; ফেরেশতারা ওয়েট করতেছে… বাতাস বলতেছে জ্যান্ত মানুষের লাগি কেউ কান্দে না ক্যান! বলতেছে মৃত্যুতে মদ খাওয়া ভালো মাগি নিয়ে ফূর্তি করা ভালো— আরো ভালো চিৎকার করে খিস্তি মারা। কান্নায় ফিলিংসটা ঠিক আসে না। আঙ্কেল কিভাবে মরলেন? কেন বাসা ছেড়ে একা থাকতেন ভিন্ন?  কিসের এতো বিতৃষ্ণা ছিল তার অন্তর্গত উটপাখির!


পুনরাবৃত্তি

শনি–শুক্র, বৈশাখ–চৈত্র গুনতে গুনতে ক্লান্তি ফিল হয়। এই অবসাদ নিয়ে বাঁচার ইচ্ছা বহুকাল হলো উবে গেছে। সপ্তাহের সাত নাম মাসের বারো এবং দশ সংখ্যা দিয়ে যে সার্কাজম চলছে তা জুতসই নয়। এক দুই তিন… একঘেয়ে! যত্তসব বিশ্রী ব্যপার— চেনা জানা সেক্স পজিশনের মতো। প্রতি সকালে সূর্যকে এক দিকেই দেখা যায়, কুকুরটাও একপা উঁচু করেই মোতে, একই বুনিতে মুখে রেখে কেটে যায় রাত! এত এত পুনরাবৃত্তি কেনরে কালুয়া! নামের… সংখ্যার… পজিশনের… সময়েরতো পুনরাবৃত্তি নাই!


অন্তর্জাল

ধরা যাক পৃথিবীর কোনো পার্কে হাঁটছো— বার্ডের ব নির্মিত একটা পথ… একটা দ্বীপ… ধেয়ে যাচ্ছে দিগন্তে— কু সু’র মিল্লা না মেনে লিল্লা লচ্ছে পুরুষ্ঠ আঙুল। পরণে লাল জামা অথবা ভিন্ন, ব্রা পরেছো কি পরোনি, টিপ কালো মাঝারি নতুবা নাই। হাঁটছো— কাঁপছো—দুলছো। নিপল স্ট্রাইকে কোনো বিপন্ন শ্বাসকষ্ট ফিলাচ্ছে, নেবুলাইজার এগিয়ে দিচ্ছে কি কেউ! শুদ্ধ বোরিংহাউজ একটা দমকল নগর— মাইচোষা শব্দরা হা হা হি হি গাইতে গাইতে নদী হওয়া দ্যাখে— ঢেউ হওয়া দ্যাখে… দৃশ্যত, অদৃশ্য নৌকার মজ্জিত বৈঠায় তিলং তোলে তৃতীয় প্রহর—হামাগুড়ির হিসহিস সিম্পনিরা ডিসপ্লে ভেঙে বের করে কুকতলীয় শীৎকার।


শরীরে সীমান্ত

ক্ষেতের অধিকার কবে গেলো শুয়োরের মুখে ফড়িংয়েরা জানলোনা কিছু। ভূমি ভাগ হলো অক্ষে দ্রাঘিমায় রেখা টানলো রাম–বাম, ধাড়ী–নেড়ির দল। শরীরের সুমেরু কুমেরু জুড়ে— বিস্তীর্ণ সবুজে তিড়িংবিড়িং ফড়িংপাল। আজ এক জলে বক মিনিস্টার আর হ্রদে সারস— উঁচু–নীচু স্থলে তরলে কাঠি নাড়োয়া দাঁতোয়াল পোদ্দার! ফড়িংয়েরা সাদা কালো (হয়) আফ্রো–এশিয়ো। নক্ষত্রের জলনীতি জেনে ছড়িয়ে যায় উত্তর–দক্ষিণ  নিরক্ষকোলের এপাড়া ওপাড়ায়। শেখে ভাষা–ধর্ম–জাতি। ওদিকে উঁচু হয় ক্ষেতের আইল পাহারায় সান্ত্রীতাড়ুয়া।  সমুদ্রে ঢেউ নদীতে স্রোত ভূমিতে গ্রেট ওয়াল তারকাঁটা— ফড়িংয়েরা আইলান কুর্দি, ফেলানি খাতুন কিংবা রিও গ্রান্দে রমিরেজ ভ্যালেরিয়া!


সন্ন্যাসী আরণ্যক। কবি।
জন্ম ১৯৯৩ সালের ১২ নভেম্বর মাগুরা জেলার মহাম্মদপুর থানায়।
বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. প্রথম তিনটি কবিতা সম্পর্কে যা বলতে চেয়েছিলাম, তা শেষ কবিতা পাঠে থমকে গেলাম৷ রাম- বাম ভেদরেখা টেনেছে? তারা ধাড়ী–নেড়ির দল? তাই না? আর মোহাম্মদ আর আরবীয় সাম্রাজ্যবাদের এদেশীয় এজেন্টরা তো নিরীহ, শুধু আঙ্গুল চোষে৷ আপনি তো বাংলাদেশেরই কবি, কতদূর চিন্তা করতে পারেন, কীভাবে পারেন, তা কেউ বোঝেনা তা নয়৷

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।