পাখিপুরাণ
ওড়া রঙের ঘুম। তরল ছায়ায় ডাহুকের বিলে—
কবেকার জলের ভাঁজে পাড় জাগে। আত্মার মর্মে
যে ভেজা পথ তোমার অনুবাদ খুলল সেইপথে কত অঞ্জনে আঁকা কাচ, পাখি হল। দূরে যেথায়
পবনের নাও নূপুর খুলে— অরণ্যের গহীনে বিপন্ন আঁধার, যেসব পোকা আলো ছুটিয়ে নিয়ে যায়
তাদের পাখায়-পাখায় বুদ্ধের অনন্ত নির্বাণকাল।
তবু মৃত্তিকার গর্ভকেন্দ্রে অনেক বরেন্দ্রপাখিপুরাণ
নীরবতার সংহতিতে ধরা থাকে। ঋতুরক্তের মগ্নতা থেকে— ভাটির ভোর তোমাকে যেটুকু কাঁপায়
সমুদ্রপাখির মতন। সেইসব পুবালি সিঁথিঢেউ
কুয়াশার ডানা ভেঙে আজও রাঙায় ঘুঘুডাঙা।
যতদূর চাঁদের উঠান
বেলা পড়ে আসে। শাওন মেঘে অস্ত যাও— রাতুল প্রজাপতির দানা। ফিকা রঙের বিন্দু বিন্দু সন্ধে— কারও নয়নতারায় সৌরঘুম— ঘুমের মিনজিরিকে
নাচের মুদ্রায় দেখালো মার্কারি আলোর ঝুমঝুমি।
ঐখানে বিপুল আকাশিহাঁস, খোয়াবে ফোটালো—
‘ভরা ভাদর, মহা ভাদর শূন্যে মন্দির মন’...
তবু যতদূর চাঁদের উঠান— বন্ধ নাচঘরে ছড়িয়ে পড়েছে শ্যাওলাফুল। মুকুট পড়া বাড়ি, পানাদিঘির সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় চন্দ্রবোড়া। যেন দোফলা জিব, ফণায় সিঁদুর মাখানো সিঁথি থেকে শান্ত ঘুঙুর খুলে রাখে বনবাঈ। পুরনো হেমকুমার ওর চুলের গন্ধে ছুড়ে দেয়— সবুজ মোহর। সুড়ঙ্গপথ জুড়ে তুষার যুগ— বরফ শুকিয়ে গেছে। সবুজ আঁধারদেয়ালের
ফোকরে শুকনো উপকথা ও হিরামোতি আঁকা কতকথা বোল।
আর ওদিকে দখিনা শার্সি, রাঙা কাচের ওপারে—
অনেক অরণ্যে সুরঞ্জনারা মেখে যায় হরিণ রঙ!
প্রলুব্ধ সভাকবি একটা মৃৎপাত্রে জলের মুকুরে
সেই শব শেয়ালীকে শেখাচ্ছে একটা বেণিখোলা
সমুদ্রপাখি এক টুকরো পালক ফেলে উড়ে যায়
যেদিকে হরপ্পার মেঘরূপী রুমাল, নায়াগ্রার ঘোড়া শাদা ধূলো মাখছে কবিতায়...
নদী ও নোঙর
পালিতা পাখি, তোমার ওড়া রঙের কাতরে
কত যে মূর্ছনায়—মাটির গর্ভ থেকে উঠে আসা
কেউ কেউ চলে গেল ঘুমের শোভায়। হলুদ পাতার স্তুপ, পুরনো স্বর্ণমন্দিরের মিনারে যে রাঙা কুয়াশা হাসি মেখে সাজালো মেঘের মতন যাত্রায়— ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’...
ওদিকে রোদের পালক আর নতুন ধানশীষের উথালি-পাথালি। তামাম তিসিক্ষেত জুড়ে রক্তের জোনাকি ছড়িয়ে দিল অন্ধকার, নীরব। একদিন গাঢ় ফাঁক বুঝে পাহাড়ি পাখি এক অনেক আকাশ ফোটালে— উড়ন্ত খাঁচা খুলে আয়ু ছুঁয়ে দিল চন্দ্রভ্রমর... আর জলবনের ভিতর বালির পাহাড় ভেঙে— ক্রমাগত ভেসে যেতে থাকলো নদী ও নোঙর।
চকখড়ির ইশকুল
এখন মেঘের বেণিখোলা। একটা শালিখ সময় হয়ে যাচ্ছে খয়েরি বিকেল। অনেক দূরে রাঙা প্রজাপতির বনে নির্জন রেণুশোভা— যেন মেয়ের মতন প্রকৃতি। পানাগড় স্টেশন— একটা ট্রেন আকাশি পাখি হয়ে উড়ে গেলো ডুবের ছন্দে।
তার জানালার ঝিলমে যে চঞ্চল খোঁপা— তাকে আমি ভেবে নেই ঝুপসি ঝোপের অন্ধকার— অন্ধকার কুহেলিতে খুঁজি নক্ষত্র তিল, রূপালি সিঁথি উঠোন। ঐদিকে তরল ছায়া— রোদের গিনিতে মুখ লুকিয়ে হয়ে যাচ্ছে বনকুমার। আর চিতলের পেটির মতন চমকাচ্ছে শৈশব, চকখড়ির ইশকুল ।
রুপালি সাইলেন্স
যেটুকু রঙিনে তোড়াবাঁধা, বনমন্ত্রী তোমার— জ্যোৎস্না মিলানো
জলবায়ু সহিষ্ণুতা
পৃথিবী আজ বালিকা হও
যেদিকে রক্তপাথরে কত রকমের সমুদ্র—
ফোটালো জলের ছলাৎ
ওই নিদ্রিত হরিণ অব্দি
সমস্ত বনজ শবরূহ
মেঘভারে ঝুুুঁকে আসে গাছালির মর্মর ও মর্মে।
যেখান দিয়ে সামান্য ফড়িংবেলা টপকাও
পাহাড় থেকে এনে দেওয়া—
রুপালি সাইলেন্সে
রুপালি সাইলেন্স— একটুকরো সাইকেল ডানার মগ্নতা
সিলেটী সবুজ কাঁপায় যতদূর টুংটাং
টিলাত মোর ঘর—
ঘরকে আয়, সেজেছি নিজস্ব রূপে— মোর শবর
দূরে কাঠপুতুলবাড়ি ম্যাজিক ফগ থেকে— মানমন্দির
সূর্যঘড়ি ডায়াল ঘুরালেই চন্দ্রপাখি এক
শিস দোলায়
সন্ধে-সন্ধে ঘুমরঙ— রাঙা কফিবনে ঘন মিশেল গন্ধমাখছে জোনাকি পুরুষ।
বন্ধ কপাটের ওপারে শাদা চলনবিল
অঞ্চল ঘিরে মীনগন্ধের মেছোনি। হেমলতা,
চিলিক চিলিক রুপালি সাইলেন্স—
সাইলেন্স বহে— তারাতলার মন্দিরের ফাটলে
শতাব্দীর মৃত্যুমুখী ঘ্রাণ মিলানো আঁধার
খুঁটে খায় একটি লাল রঙের কাঠবিড়ালি।
ওইদিকে তমালশিশুরা
ঘুমের আয়োজনে ঢেকে দেয় আকাশ
কনক বাতাসার মতন রুপালি সাইলেন্সে
যেন তোমার বাউল করা পদ্যে— ওড়া রঙের পাখি তার পাশে
একফালি চা'বাগান বিপন্ন সবুজ নিশীথ।
আশুতোষ সরকার। কবি।
জন্ম ১০ জুলাই ১৯৯৫ ইং মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরে। বর্তমানে রাজবাড়ী জেলায় বসবাসরত।
বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
জন্ম ১০ জুলাই ১৯৯৫ ইং মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরে। বর্তমানে রাজবাড়ী জেলায় বসবাসরত।
বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।