আশেপাশে কোথাও গাছ না থাকলেও হাওয়া বইছে। হাওয়ার ভেতর গর্ত করে উল্টোদিকে মুখ করে বসে আছে একটা কুকুর। ঘাড় বাকাচ্ছে। মুখ নড়াচ্ছে। মাঝেমাঝে হাই তুলে জিহ্বা দিয়ে নাক চাটার চেষ্টা করছে। তার জবানি কেউ লিপিবদ্ধ করছে কি না— এব্যাপারটা ভাবতে ভাবতে দুপুর চলে যাচ্ছে। কুকুর কি তারে ছাইড়া যাওয়া দুপুর নিয়া বিমর্ষ? এবং নাক চাটাচাটিতে রোদের ঊরুর কাপড় কতটুকু উপরে উঠেছে, তার বর্ণনা পাওয়া যাবে সারাদিন ঘুরেবেড়িয়ে সন্ধ্যায় আর্টের নিকট ফেরা এক যুবকের ডায়েরিতে।
প্রথম পৃষ্ঠা:
কিছুই লিখব না। পৃথিবী এবং সময়, লিঙ্গ নিরপেক্ষ দুইটি বিষয়ের ফাঁকফোকরে প্রথম পৃষ্ঠায় একটি বাক্যও লিপিবদ্ধ করলে, স্বপ্নে আমার শিশ্ন ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় বাজপাখির দল। —এখানে শুধুই এই দুইটি বাক্য লেখা হলো। আর, এটা-সহ চারটি।
দ্বিতীয় তারিখ: প্রথমার্ধে
শিশ্ন ছেঁড়ার রঙ দেখেছি আমি রোদের ঊরুতে মাখামাখি অবস্থায়। চাইলেই মামলা করতে পারতাম। কিন্তু শালা কুকুর! বাঞ্চোত। বাসা থেকেই নড়বে না, সাক্ষ্য দিবে কী। মাগীর দালাল একটা।
দ্বিতীয়ার্ধে
সিদ্ধান্ত নিলাম কোনো আইনজীবীরে পটায়ে মামলাটা করেই ফেলি। এজন্য অবশ্য যথেষ্ট জল ঝরাতে হবে। এটা ঠিক, কালো আলখেল্লা পরা লোকেরা রাতের খাবারে দুইটা রুটি খায়। শুকনা। তারপর মদের গেলাসে চুমুক। একবেলা নেট ঘেটেঘুটে এইসব তথ্য জোগাড় করেছি। তখনও ঘাম ঝরেছে। শরীরে বৃষ্টি নেমেছিল, যখন জেনেছি এদের অনেকেই তলে তলে সমকামী। আমার তো আছে কেবল পেছনটা। যন্ত্রণা হোক তবুও যদি মামলা জেতা যায়, তাই ভালো, যন্ত্রণা উসুল হবে জেতার আনন্দে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় তারিখের সন্ধিক্ষণে, রুটিখোর সমকামী:
বদ্ধ রুমটাতে হাই ভলিউমে মিউজিক প্লে হচ্ছিলো। শিল্পের টানে এসে একসারি পিঁপড়া রুটি খেয়ে চলে গেছে। ইচ্ছে হচ্ছিলো ডগি স্টাইল ফেলে হান্দায় যাই ওইসব পিঁপড়ের ভেতর।
তৃতীয় মাস:
ইনফেকশন। ঘা। অপারেশন। উপরে টাঙানো চোখ ধাঁধানো আলো। ব্যান্ডেজ বাঁধা। ব্যান্ডেজ খোলা। পাউডার।
এসবের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে ডায়েরিটার প্রথম পাতা। কিন্তু পারছি না।
তৃতীয় মাসকে থামতে বলে, চলতি মাসের দ্বিতীয় পক্ষে:
এই না পাড়ার ক্ষোভে এক্ষুনি একটা আমের আঁটি পুঁতে ফেলতে পারি।
আবার তৃতীয় মাস:
ভবিষ্যতের বৃক্ষটিকে এখান থেকে, ডায়েরি লিখতে লিখতে, কীভাবে কাটা যেতে পারে, ভাবছি। চুরুট টানতে টানতে একটা উপায় ঢুকে গেছে মাথায়। সেটা হলো টাইম জার্নি করতে করতে যখন পৌঁছে যাব ওই সময়টিতে তখন আমসুদ্ধআঁটি খেয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু এতে আমার ক্ষোভের বিনাশ হবে কী করে, যা আমি বৃক্ষ রোপন করে করতে চাইছি!
এজন্য— আজ, এখনি, সময় থাকতেই, জলপাইয়ের একটা ডাল কেটে এনে পুঁতে রাখলাম। নিয়মিত পানি ঢালতে হবে।
চতুর্থ রজনী:
ক্লান্তিকর। হতাশার। এবং দৈর্ঘ্যে সাড়ে চার সপ্তাহ। আদালতে মামলা উঠেছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী বলছেন এটা এটেম তো মার্ডারের কেস। আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন ধর্ষণের। বাদীপক্ষের প্রমাণ হলো আমার শিশ্ন হারানোর পর মৃত্যুর অনুভূতির ছবি। আসামিপক্ষের প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজ উইদ হাই কোয়ালিটি রেজুলেশন এন্ড ক্লিয়ার অডিও। বিচারক কনফিউজড। আমি তখন গালিমুখর। শালা, বাঞ্চোত, রুমের সিসিটিভি ক্যামেরা চালু রেখেছিস কেন? ক্লিপ বানাবি, ক্লিপ?
আদালতের এই ঘটনা তিনদিন আগের। পরেরদিন বিচারক জানতে চাইলেন
:কোন জিনিশটি আপনার স্বেচ্ছায়/অনিচ্ছায় মারা দেয়ার প্রভাবক?
: কুকুরটি সাক্ষ্য দিতে না এলে ওরে প্রকাশ্যে ঠাপামু।
: অর্থাৎ, আমরা নিশ্চিত হলাম, আপনি কালো আলখেল্লাটির বিষয়েই প্রথমে ভেবেছিলেন।
গতদিন ছিল ছুটিরদিন। মামলা জটিলতর হওয়ায় বিশেষ টিমসহ বিচারক আদালতে হাজির। সবাইরে ডেকে পাঠালেন। কিন্তু কারো কোনো কথা শুনলেন না।
রায় দিলেন: আগামীকাল ভরদুপুরে হাইড্রোজেনপূর্ণ একটি কালো আলখেল্লা রোদে পোড়ানো হইবে। রোদ যদি কোনোপক্ষের প্রতি প্রীত হয়ে নিস্তেজভাব নিয়া আসে, তাহলে সহায়ক হইবে অগ্নি।
বি: দ্র: রোদকেও এই আদালত একটি পক্ষ হিশেবে গণ্য করছে।
পঞ্চম বাৎসরিক মহাসম্মেলন:
তিনটি বিরাট ঘটনার জন্য একপাল শুকর জবাই করে ভোজনের ব্যবস্থা করেছি।
ঘটনা তিনটি পাঠকের জন্য লিপিবদ্ধ করা হলো:
১. আবার শিশ্ন গজাতে শুরু করেছে
২. জলপাই গাছে নিয়মিত পানি ঢালা হচ্ছে। ভুলে একদিন দুধ ঢেলেছি জন্য এক যুবতীর কী যে কান্না। শিশ্ন না থাকার জন্য সেই কান্না যদিও আমার মধ্যে কোনো অনুভূতি জাগায়নি। শুধু যুবতীটারে ছিঁড়তে দিয়েছিলাম একটা পাতা।
৩. আবিষ্কার করলাম: আমের আঁটি একটি অদ্ভুত খাবার। এজন্য খাদককে মাটি হতে হয় না।
ষষ্ঠ ঋতুতে:
ডায়েরি শেষ করতে চেয়েছিলাম একটি বাক্যের দ্বারা। পাঠক, আমার ডায়েরি শেষ হচ্ছে যে বাক্যটি দ্বারা, তা হলো: ঘটনা এবং ব্যর্থতা পজেটিভ-ন্যাগেটিভ নিরপেক্ষ; তার গায়ে শুধু পাওয়া যায় উষ্ণতা বা শীতলতা।
নিরপেক্ষতা শিখে নিচ্ছে সময়প্রবাহ। একটা কুকুর জিহ্বা দিয়ে নাক চাটছে দেখেও দুপুর তারে ছাইড়া যাচ্ছে। বহুদূর থেকে যিনি এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলেন, তার প্রসাধনী: আঙুল, আয়না, খাদ্য।
নাজমুল হোসাইন। কবি।
সম্পাদনা করছেন ‘জলনূপুর’ (বর্তমান ‘আর কে রোড’) ওয়েবজিন।
জন্ম ২৯ আগস্ট লালমনিরহাট জেলায়।
দর্শন বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
কবিতার পাশাপাশি বর্তমানে গদ্যের প্রতিও আগ্রহী।
সম্পাদনা করছেন ‘জলনূপুর’ (বর্তমান ‘আর কে রোড’) ওয়েবজিন।
জন্ম ২৯ আগস্ট লালমনিরহাট জেলায়।
দর্শন বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
কবিতার পাশাপাশি বর্তমানে গদ্যের প্রতিও আগ্রহী।
5 মন্তব্যসমূহ
"নিরপেক্ষতা শিখে নিচ্ছে সময়প্রবাহ।" অসাধারণ লাগলো৷
উত্তরমুছুনমতামতের জন্য ধন্যবাদ
মুছুনতুমুল লাগল৷
উত্তরমুছুনঅসাধারণ এক গদ্য। মন ভরে গেল।
উত্তরমুছুনফরিদ ছিফাতুল্লাহ শেয়ার না করলে এই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতাম। গদ্যটা শেষপর্যন্ত নিয়ে আসে পাঠককে অথচ পাঠকের কোনো ক্লান্তি বোধ হয় না। ফরিদকে ধন্যবাদ দিতে চাই। লেখককে বলছি এ রকম গদ্য আরও পড়তে চাই।
উত্তরমুছুনশুভকামনা, নাজমুল।
মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।