জলনূপুর: ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ প্রকাশিত হওয়ার অনুভূতি জানতে চাচ্ছি।
আহসান হাবিব: অনির্বচনীয় অনুভূতি। একজন লেখকের সবচাইতে আনন্দঘন মুহূর্তই হচ্ছে কোন লেখার প্রকাশকাল। এর সঙ্গে একটা সংশয়ও কাজ করে, পাঠকের প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে....
জলনূপুর: উপন্যাসটি যখন লিখে শেষ করেন তখন কেমন লেগেছিল?
আমি অন্য একটি বিষয়ে চিন্তা করার অবকাশ তৈরি করে ফেলি
আহসান হাবিব: সত্যি বলতে কি চমৎকার একটা অনুভূতি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। কেননা আমি যা বলতে চেয়েছি এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে, কিংবা আমি যে চরিত্র আঁকতে চেয়েছি, মনে হচ্ছিল তার বেশীরভাগটাই পেরেছি। আমার লেখা সম্পর্কে এটা আমারও একটা আত্মবিশ্বাসের জায়গা। পাঠকের প্রতিক্রিয়া বিষয়ে আমারও সংশয় কাজ করে, কিন্তু আমি লিখে প্রভূত আনন্দ পাই আর শেষ করার পর সেই আনন্দ অনেক বেশি হয়। আর একটা বিষয় কাজ করে তা হল আমি অন্য একটি বিষয়ে চিন্তা করার অবকাশ তৈরি করে ফেলি।
এটা মূলত মানব প্রজাতির বেসিক ইন্সটিংক্ট নিয়ে লেখা একটা ফিকশন। এর চরিত্রগুলি আমাদের চারপাশেই আছে, প্রতিদিন আমরা এমন ঘটনার মুখোমুখি হই।
জলনূপুর: উপন্যাসটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
আহসান হাবিব: এটা মূলত মানব প্রজাতির বেসিক ইন্সটিংক্ট নিয়ে লেখা একটা ফিকশন। এর চরিত্রগুলি আমাদের চারপাশেই আছে, প্রতিদিন আমরা এমন ঘটনার মুখোমুখি হই। মানব প্রজাতির এই বিশাল জার্নিতে ঠিক এই মুহূর্তে সে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, মনোজগতে কি পরিবর্তন হয়েছে, আমি সেগুলি নিয়ে ডিল করেছি। আমি দেখিয়েছি মানুষ তার বহির্জগতে যতটা পরিবর্তন ঘটিয়েছে বলে দেখায়, আসলে অন্তরলোকে ততটা এগুতে পারেনি। মানুষ এখনো এতো নৃশংস যে তাদের কাণ্ড আমাদের বিস্মিত করে। এর পাশাপাশি মানুষ তার মানবিক কাজেও অনেকদূর এগিয়েছে কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষের নৃশংসতা এখনো সেই আদিম পর্যায়েই রয়ে গেছে। নারী যে সভ্যতার প্রধান বাহক, আমি এবিষয়টিও তুলে এনেছি এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে....
জলনূপুর: উপন্যাসটি লেখার চিন্তা কীভাবে মাথায় এসেছে?
আহসান হাবিব: কেন লিখেছি এই উপন্যাস এর জবাবে আমি বইয়ের মুখবন্ধে বলেছি, সেটাই আবার বলছি এখানেঃ
কয়েক বছর আগে আমি একটা স্বপ্ন দেখি। দেখি আমার ছেলের অসুখ, সে হাসপাতালে ভর্তি, ফুসফুস সংক্রমণ। সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন, কিন্তু আশ্চর্য, নিজেকে তখন আমি দেখতে পাই স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমরত। দীর্ঘ সঙ্গমের পর লক্ষ করি আমাদের কোন ইজাকুলেশান কিংবা অর্গাজম নেই, হতাশ হয়ে যখন বিছানায় বসে পড়ি তখন দেখি আমরা হাসপাতালে আমাদের ছেলের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে আছি! সেই মুহূর্তে ছেলের চিকিৎসক তাঁর ডান হাতটি ছেলের ফুসফুসের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, আমরা অবাক হয়ে দেখি এই দৃশ্য এবং আরও আশ্চর্য হয়ে পড়ি যখন দেখি চিকিৎসক তাঁর হাত বের করে এনে বলছেন ‘আপনাদের ছেলের তো কোন ফুসফুস নাই’!
ঘুম ভাঙে আমার, স্বপ্ন আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। আমি ঢুকে পড়ি মনোজগতে। মানুষের মনোজগৎ আমার অধ্যয়নেত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, একটা উপন্যাস মাথায় ঘুরতে থাকে। দেখি মানুষের মনোজগৎ কি অন্ধকারে ঠাঁসা অথচ বাইরে তার রূপ ভিন্ন। এই দ্বৈত রূপ আমি মানব প্রজাতির সারা জার্নিতেই লক্ষ্য করে উঠি। লিখতে শুরু করি এবং তার ফল এই ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’...
জলনূপুর: আপনার অন্যান্য গ্রন্থ থেকে ‘হোমো সেপিয়েন্স’কে কীভাবে আলাদা করা যায়? শুধুই কি কাহিনি আর চরিত্রের দ্বারা? মানে, জানতে চাচ্ছি কাঠামোগত বা অন্যকোনো দিক থেকে......
আহসান হাবিব: একদম আলাদা এর বিষয়বস্তু। আমার প্রথম উপন্যাস সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে লেখা কিন্তু হোমো স্যাপিয়েন্স একটি মনোজাগতিক উপন্যাস। মানুষের মন নিয়ে আমি এই উপন্যাসে কাজ করেছি। একটা ঘটনার যে বাইরের দিক থাকে, তার দিকে আমার দৃষ্টি কম ছিল আমার দৃষ্টি ছিল তার মনোজগৎ। একটা অস্বাভাবিক অবস্থার বর্ণনা দিয়েই এর শুরু। আমার উপন্যাসের প্রটাগনিস্ট এক সকালে নিজেকে মৃতবৎ আবিষ্কার করে, সে দেখে সে অনড়, কিন্তু তার চিন্তাটি ক্রিয়াশীল। এই অবস্থায় তাকে নিয়ে তার চারপাশের মানুষ কি ধরণের খেলায় মেতে ওঠে, উপন্যাসটি তাকে ঘিরে। অনিমেষ আমার দ্বিতীয় উপন্যাস, সেখানেও মানব মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছি কিন্তু সেটা ছিল মৃত্যু নিয়ে আর ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ মানব প্রজাতির বেসিক ইন্সটিংক্ট নিয়ে। এর বিষয় এবং উপস্থাপন আমার অন্যান্য উপন্যাস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তবে কাঠামো ভিন্ন এমন দাবী করবো না।
জলনূপুর: বইটির মার্কেটিং-এর ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা কী?
আহসান হাবিব: এবিষয়ে আমার কোন পরিকল্পনা বা চিন্তা নাই, এটা সম্পূর্ণ প্রকাশকের বিষয়।
একবার যে পাঠক এই বই পড়তে শুরু করবে, আমার বিশ্বাস তিনি শেষ না করে উঠবেন না। একটা রুদ্ধশ্বাস গতি আছে যা তাকে টেনে নিয়ে যাবে।
জলনূপুর: বইটি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
আহসান হাবিব: একবার যে পাঠক এই বই পড়তে শুরু করবে, আমার বিশ্বাস তিনি শেষ না করে উঠবেন না। একটা রুদ্ধশ্বাস গতি আছে যা তাকে টেনে নিয়ে যাবে। পাঠ শেষে তিনি নিজেকে এবং মানুষের জার্নির দিকে আবার বিস্ময় নিয়ে ফিরে তাকাবেন।
আহসান হাবিব।
জন্ম ১লা জৈষ্ঠ্য, চাপাইনবাবগঞ্জ।
পেশায় চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী।
প্রকাশিত উপন্যাস তিনটি: ‘একাশ্রয়’, ‘অনিমেষ’, ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’।
কণ্ঠের বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘সংগীত কণ্ঠ’।
এছাড়াও তিনি নিয়মিত কবিতা লিখছেন।
জন্ম ১লা জৈষ্ঠ্য, চাপাইনবাবগঞ্জ।
পেশায় চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী।
প্রকাশিত উপন্যাস তিনটি: ‘একাশ্রয়’, ‘অনিমেষ’, ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’।
কণ্ঠের বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘সংগীত কণ্ঠ’।
এছাড়াও তিনি নিয়মিত কবিতা লিখছেন।
1 মন্তব্যসমূহ
ভালো লাগল৷ বইটি অবশ্যই কিনবো৷
উত্তরমুছুনমন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।