TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

রিগ্যান এসকান্দারের ‘দ্রোহশাস্ত্রবুলি’ নিয়ে কবির সাথে আলাপ


‘দ্রোহশাস্ত্রবুলি’ রিগ্যান এসকান্দারের তৃতীয় কবিতাগ্রন্থ। প্রথম গ্রন্থ ‘নারীগদ্য’ ২০০৭ সালে এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘প্রেম কবলিত প্রসব’ ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়। তৃতীয় কবিতাগ্রন্থ প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও বইটি সম্পর্কে পাঠককে অবহিত করতে ‘জলনূপুরে’ থাকছে কবির বিশেষ সাক্ষাৎকার।


জলনূপুর: কতদিন ধরে বইটি লিখেছেন?

রিগ্যান এসকান্দার: 'দ্রোহশাস্ত্রবুলি' কতদিনে লেখা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কারণ, ২০১৪ সালে আমার দ্বিতীয় বই প্রকাশের পর ২০২০, এই ৬ বছরে আমি দুইটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছি। এমন নয় যে তিন বছর এটা লিখেছি, আর পরের তিন বছরে আরেকটি লিখেছি। এ-দুটা বইয়ের কাজই ছয় বছর আগে এক সাথে শুরু করি। তার মানে দ্রোহশাস্ত্রবুলি তৈরিতে আমার ছয় বছরের শ্রম ও সাধনা আছে।

জলনূপুর: বইটি সম্পর্কে পরিকল্পনা করে লেখাগুলো লিখতে শুরু করেছেন? নাকি লেখা শেষ করে বই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছেন?

রিগ্যান এসকান্দার: ২০১৪ সালের আগের বই দুটি আমার মতে আমার অপরিকল্পিত বই। ১৪ সালের পর আমি পরিকল্পনা করে মাঠে নামি। তারপর ছয় বছর সময় লাগে। সাহিত্য আমার কাছে এখন পরিকল্পিত বিষয়, পরিকল্পনা ছাড়া, প্রস্তুতি ছাড়া আমি আর লিখতে বসি না। দ্রোহশাস্ত্রবুলিও আমার পরিকল্পনা করে লেখা গ্রন্থ।  এ গ্রন্থের সুর বিপ্লবের, দ্রোহের। আর এ-সময়ে আরেকটি যে পাণ্ডুলিপি রেডি হয়েছে, ওটার সুর প্রেমের। ওটা এখনও প্রকাশ করিনি। আগামীতে করব, আশা করি। বুঝতেই পারছেন এরপরের গ্রন্থে বিপ্লবী এসকান্দারকে আপনি পাবেন প্রেমিকরূপে। একটু কষ্ট হয়েছে লিখতে, কারণ এই ছয় বছরে আমাকে একই সাথে প্রেমিক ও বিপ্লবীর চরিত্রে ভূমিকা নিতে হয়েছে।  এরপর কোনো পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করলে আরও সিলেকটিভ হয়ে যাব আমি, একই সাথে দুটা চরিত্র করব না। কারণ, কবি নিজে যত বেশি ঢুকতে পারবে তার চরিত্র ও সুরের মধ্য, তার কবিতা তত জীবন্ত হবে। কবিতা লেখার আগে কবিতাকে যাপন করতে হয়। যেহেতু পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামা, সেহেতু বই প্রকাশের পরিকল্পনাও পূর্ব নির্ধারিত।

এখানে একটা বিষয় ক্লিয়ার করে যাই, আমি কিন্তু পরিকল্পনা করে কবিতা লিখি না। আমি বিশ্বাস করি কবিতা পরিকল্পনা করে লেখার জিনিস নয়, লেখা যায়ও না। আমি পরিকল্পনা করি মূলত বিষয়ের, সাবজেক্টের। এরপর নিজের জীবনকে ওই সাবজেক্টের মধ্য ফেলে দিই। জীবনকে ওই সাবজেক্টে ফেলে দিয়ে আমার শুরু হয় অপেক্ষার পালা। এরপর কবিতা যখন আসে, অমনি আমি থাকে ধরে ফেলি। সহজ কথায়, আমি মাছ ধরার সব প্রস্তুতি নিয়েই ছিপ ফেলি। তবে ছিপ ফেলে আমাকে অপেক্ষা করতে হয়, কখন মাছটি ছিপে বাঁধে। আর যেই বড়শিতে মাছ বাঁধে, আমি ওটাকে একটাতে তুলিনি।

জলনূপুর: বইটি প্রকাশের অনুভূতি বলুন।

রিগ্যান এসকান্দার: আমি চেয়েছিলাম বিপ্লবীদের শাস্ত্রীয় বাণী ‘দ্রোহশাস্ত্রবুলি’ ছড়িয়ে যাক। এই ছড়িয়ে যাওয়া কিন্তু বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়, আমি চেয়েছিলাম মেসেজ পৌঁছাতে। যেহেতু আমি এখন পরিকল্পনা করেই লিখতে বসি, সিলেক্টিভ বিষয়ে কাজ করি, সেহেতু আমার একটা ম্যাসেজ থাকে বইয়ে। এখনো বইমেলা শেষ হয়নি, দেখা যাচ্ছে আমার মেসেজ কিন্তু পৌঁছাচ্ছে। এটাই দ্রোহশাস্ত্রবুলির সক্ষমতা, দ্রোহশাস্ত্রবুলিই কাছে এটাই আমার চাওয়া ছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি চাইও না।

জলনূপুর: আপনার অন্যান্য বই থেকে এটিকে কীভাবে আলাদা করা যায়?

রিগ্যান এসকান্দার: আগেই বলেছি, আমার আগের বই থেকে এ-বইয়ের পার্থক্য হলো প্রস্তুতির পার্থক্য, নিজেকে তৈরি করার পার্থক্য, পরিকল্পনার পার্থক্য।  দ্রোহশাস্ত্রবুলি নিজেকে তৈরি করে, প্রস্তুতি নিয়ে, পরিকল্পিত সাজে লেখা বই। এজন্য দ্রোহশাস্ত্রবুলি আমার আগের বই দুটিকে টপকে গেছে। আর এই টপকানোটা কিন্তু স্বাভাবিক।

জলনূপুর: বইটি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

রিগ্যান এসকান্দার: দ্রোহশাস্ত্রবুলি হলো বিপ্লবীদের অগ্নিফুল। এই বই আমাকে নিজেকে চিনতে সাহায্য করল। বলা যায়, আমার লেখালেখি জীবনের একটা মোড় ঘুরিয়ে দিল এই গ্রন্থটি। এখনকার কবিরা কিন্তু তৈরি হয়েই লিখতে আসেন। আমি কিন্তু প্রথম দিকে তৈরি হয়ে লিখতে আসিনি। আমি লিখতে লিখতে তৈরি হওয়া। আমার প্রথম বই ২০০৭ সালে লেখা, স্কুল- কলেজ জীবনের কবিতাও ওই বইয়ে মলাট বন্দী করা আছে। তবে প্রথম দুটি বই আমাকে তৈরি হতে সাহায্য করেছে। তারপর প্রস্তুতি নিয়ে লেখা আমার দ্রোহশাস্ত্রবুলি প্রকাশের পর আমি এখন বুঝতে পারছি, আমি বর্তমানে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, আর আমাকে কোথায় যেতে হবে।


[কবিতাগ্রন্থ: ‘দ্রোহশাস্ত্রবুলি’ 
প্রকাশনী: আনন্দম
স্টল নম্বর: ৬৯৭
প্রচ্ছদ: এনায়েত ইসলাম]



রিগ্যান এসকান্দার। কবি।
জন্ম ১২ জুন ১৯৮৩ কুষ্টিয়া জেলায়। বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়।
বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক।
প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘নারীগদ্য’ (২০০৭), ‘প্রেম কবলিত প্রসব’ (২০১৪), ‘দ্রোহশাস্ত্রবুলি’ (২০২০)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. বা! ভালো লাগল৷ একজন সত্যিকারের বিপ্লবীর মতো আপনা মনোজগত৷ যা ভাববো, তা যাপন করার সামর্থ সকলের থাকে না৷ আপনি অনন্য৷ আপনাকে ও সম্পাদককে দজনকেই জানাই ভালবাসা৷

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।