১
চোখে ঝলসে ওঠে অবদমন, দেখছি লিয়নের স্বমেহন
মাঝে নাক, নিচে জোড়া ঠোঁটে কপট হাসি
মোচহীন ঝুলন্ত দাড়ি, দেহ থেকে ঝরছে অতৃপ্ত-স্বেদ
আমরা সংযম পাঠ করি, আমাদের সংযম বিশ্বসেরা
আমরাই আবিষ্কার করেছি শিশুর পায়ুপথ শিল্প
আগুন নেভানো দোয়া, কোন ক্ষণে ধর্ষণ জায়েজ
গলাকাটা গুজব, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে পরতে হবে আলখেল্লা
২ভেবে দেখেছি, করুণা করেনি কেউ
গভীর কোন সম্পর্কের বীজ বপন করেনি
এই বন্ধ্যা ভূমিতে। বয়সের পাতা ছিঁড়ে
যতই এগোতে থাকি, চোখে বিমবিষা, খন্দ
অনেক দ্বন্দ্ব নিয়ে হেঁটে গেছে যারা
তারা চেয়েছিলো পিঁপড়েসংহিতা
সেই পথে আমরাও চলেছি, পিঁপড়ে নই
নিঃসঙ্গ দাম্ভিক ঈশ্বরের মতো
৩তুমুল বর্ষায় ভিজে গেছি বিষণ্ণ পাহাড়
পাথুরে প্রাণও ভিজে গেছে, নামছে অশ্রুর ঢল
কী কঠিন পাথুরে জীবন! মাথার ওপর শূন্য অসীম
সরষের ভেতর ভূত, মূর্খ কোলাহল
আজ মেঘের ডানায় ভেসে বিহঙ্গ হলে মন
খুলে গেলো সীমান্ত, ছিঁড়ে গেলো জড় কাঁটাতার
প্রতিটি মানচিত্রেই খোঁড়া হয়েছে অজস্র পাতকুয়ো
ব্যাঙেদের কি ভীষণ গর্ব--- ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ
আমি মহান
আমরা মহান
অথচ ব্যাঙ জানে না---পাখিদের মানচিত্র থাকে না
থাকে না বলেই; নেই ভেদ-ভেদাভেদ কোন উঁচুনিচু
---বর্ষা এলেই ব্যাঙেদের শুরু হয় শীৎকার
সঙ্গম
বংশবিস্তার
এই তুমুল বর্ষায় তবে ব্যাঙেদেরও মেঘডানা হোক
খুলে যাক সীমান্ত, ছিঁড়ে যাক জড় কাঁটাতার
৪'আল্লাহ্রওয়াস্তে কিছু দেবেন,' ভিখারিও হাত পাতে
মানুষেরই কাছে। তবে, তোমাকে কি দরকার হে পরম-পাথর?
নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে লালন পেয়েছিলেন 'আরশিনগর'
আর যে মানুষ পাখিদের ভাষা বুঝেছিলেন
তিনিই লিখলেন প্রথম শ্লোক, 'মা-নিষাদ প্রতিঠাং'
--মূলত মানুষ আজ খুঁজে পেয়েছে এক যুক্তিফাটল
যার ভেতর ঢুকে গেলেই অনন্ত আকাশ
পাতকুয়োর গজিয়ে ওঠে ডানা; ব্যাঙেদের অসীম প্রান্তর
পাখিজন্মের পর (১৫)বিকিনি বিচে আছে ফেলো কড়ি কনডমকল
কবুল বললেই, মিলে যাবে নিম্নাঙ্গের একচেটিয়া দখল
তবুও অগণন পিতৃপরিচয়হীন যিশু, গর্ভবতী পাগলিও
পরকীয়া বৈধ হোক বা নাহোক
অন্যের ক্ষেত মাড়ানোয় মানুষের আজন্ম গন্ধমকৌতুহল
দিগন্তে মালার কারুকাজ শেষে, পাখিরা বাসায় ফেরে
পালা করে পুরুষ পাখিটিও ডিমে দেয় ওম
ছানার মুখে তুলে দেয় খুঁটে আনা সংশ্লিষ্ট আহার
কামসূত্র যাদের পাঠ্যতালিকায় নেই, জ্ঞানত তারা কখনোই
নবজাতকের মুখে টেপ সেঁটে- ফেলে আসে না পাটক্ষেতে
ডায়াসপোরাএখানে আসার পর থেকেই, আমাদের কোন বাসা ছিলো না
কেননা যাযাবর পাখিরা কেবল ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে
বাস্তবে প্রত্যক্ষ করে সারি সারি সাজানো গোছানো ভবন
দূর থেকে তার জানালাগুলোর রঙিন পর্দা বাতাসে ওড়ে
কখনবা শুকাতে দেয়া শাড়ি কিংবা অন্তর্বাস থেকে
হাওয়া ভাসিয়ে আনে পরকীয়া ঘ্রাণ---
এই তো কল্লোলিনী
এই তিলোত্তমা
আর খুব গোপনে নিজস্ব একটা অদৃশ্য কুঠরি গড়ে ওঠে
যার ভেতরে সংগোপনে থরেবিথরে সাজিয়ে রাখি যত অব্যক্ত শব্দ
জীবন্ত সেই শব্দগুলো জিইয়ে রাখা পোনা মাছের মতো খলবল করে
উসকে দেয় অতীত; মূলত আমাদেরও একটা বাড়ি ছিলো
বৃহৎ বারোয়ারি পুকুর, বাগান--- দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, স্কুল
ছিপের সুতো ছিঁড়ে যে মাছটি চলে যায়, সে ছিলো অনেক বড়
এমন কৌতুহলে কারা যেন মুখটিপে হাসে
আমাদের বাড়ির স্বপ্ন আরও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়
জিইয়ে রাখা পোনামাছগুলো শরীরজুড়ে ভেসে ওঠে
আমরা কিছুতেই লুকোতে পারি না আমাদের কোন ঘরবাড়ি নেই
সাইবার ভূতপকেটে পকেটে ঘোরে কামকলা, সাইবার ভূত
কার ঘরে কে ঢোকে;
প্রজন্ম প্রসব করে লেজওয়ালা পুত
অলিতে গলিতে দেখি গজিয়েছে
প্রার্থণালয়ের মতো পানশালা, মাটিয়া বাজার
জানতো, এক দেশে এক রাজপুত্তুর ছিলো
তার ছিলো এক পঙ্খীরাজ ঘোড়া
পিঠে চরে উড়ে উড়ে চলে যায় সেখানে
যেখানে বেশ্যালয়, দেবালয় হয়ে যায় পুণ্যের ফলে
এমনই স্বপ্নে এখন মানুষেরা জেগে জেগে হাঁটে
পৃথিবীতে পশুর বাস, মানুষ ছুটছে তাই অন্য গ্রহে
কবির মুকুল প্রদীপ। কবি।একসময় যোগ দিয়েছিলেন নাটকে, সাথে শুরু করেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের তালিম। শেখেন কত্থক, ভরতনাট্যম ও ওয়েস্টার্ন। জন্ম: ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার পাকুরিতা গ্রামে। শৈশব , কৈশোর কাটে ওপার বাংলায়। ২০১৪ সাল থেকে বাস করছেন বাংলাদেশের শেরপুর জেলায়। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: অলীক জোছনা।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।