♣
কবরটা কাঁচা, পেট ফোলা
পেটের ওপর ভর দিয়ে মেঘ উঠে গেলো
বৃষ্টি নামবেই
বৃষ্টির কথা মনে করে প্লাস্টিক নিয়ে এলো কে একজন
এবং প্লাস্টিকে মোড়া কবর সহ
শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা রঙের লোকটা ঢুকে পড়লো আমার নিশ্বাস দিয়ে
অথচ ডাক্তার স্থেটো লাগিয়ে
খুঁজেই চলছে বুক ভার লাগার কারণ
আমি তবু উঠে পড়িনি,
ঠিকও করিনি উঠবো কিনা
ফুটতে চাওয়া ঘাসফুল গান করছে
আমাদের বসে থাকার নিচে !
♣
সুবর্ণ সুযোগের এ নিদাঘ-
দুপুর ঝাড়ু দিলে পাখি-রব
সুপারবিস্কুট মুখে দেই
দাঁতে ঠেকে ভ্লাদিমির নবোকভ
ভিজি সেই কালাজ্বরে বৃষ্টির
গোটানো শার্টের হাত ভনিতা-
ছাড়িয়ে ঢোকগিলি, সারে স্নান
ভাবদের মনমরা ললিতা
অলস বীজতলা গাল ও ভাল
ভরায় গর্মির ঢেঁকিশাক-
এভাবে ভানমনে কিছুদিন
পরপৃষ্ঠারা তর্কে জড়াক !
♣
বিরক্ত লাগে
কেনো যে মেনে নিতে যাও সবকিছু
বন্ধ্যা নারীর মতো ঈদগাছে তাই
চোখ বাঁধা পাখির
কালোমতো হালকা বাঁকা চার-সারি বি জে থমাস সানগ্লাসের এ-পাশে
এবং দূরত্ব একটি গিটার, আমরা লকারে রেখেছি
স্তব্ধতার লাউডস্পীকারে
‘রেইন ড্রপস কিপ ফলইন অন মাই হেড’
রোমান্টিসিজম এও এক
যার ভালো উপমা পাইনা আধলা ইট ছাড়া
বিকেলে সেই ইটে বসে
আমি দু-চারটে পিঁপড়ে মারি
পিঁপড়ের দিন দ্রুত কেটে যায়, তারা আস্তে হাঁটে বলে
তারা বেশিদিন বাঁচে না
ধরতে পারে না জুম্মার নামাজ
রওনা দিতেই ওয়াক্ত শেষ !
♣
মালবাহী পাখিগুলো রোদের বোঝা কাঁধে নিয়ে
এদিক যাচ্ছে, যাচ্ছে ওদিক।
তারা দ্রুত, ধরা যাচ্ছে না, যাচ্ছে না ছোঁয়া।
খামারে চাষ করা মাছের সংকীর্ণতায় তৈরী
ডানায় সাঁতরে প্রজাপতিরা উড়লেও
তাদের কমদ্রুততার শীর্ষে
বরফের মতো জমে আছে নাগালের বাহির।
ধরা-ছোঁয়া যাচ্ছে যাকে
সেই খুঁটায় বাঁধা গরুটাই শুধু অলস বসে আছে
'স্বদেশ' শব্দের বানানের মতো।
♣
দু’টো অভিযোগের টুকরো সূর্যোদয়ের মতো লাল হয়ে ছিলো তোমার চোখে
বললে, আমার বুকে পশমের মতো মিথ্যেঘাস নড়ে হাওয়ায়
বললে, আমাকে ভালোবেসে ভালোবাসা করেছো অপচয়।
আমি আর টানলাম না, যে—
প্রথম পরিচয়ের দিন প্রথম গানটি শুনে মন ভরে গেছে বলেও শুনতে চেয়েছিলে দ্বিতীয়টি !
♣
সময়ের সাথে পাল্লা দেয়ার দৌড়ে
হেরে গেছি সাইকেল আরোহী আমি,
জিতে গেছে গাড়িওয়ালা একজন
যার ছায়ার উপর তোমার ছায়া যেন-
সমুদ্রে ঢুকে পড়েছে অফেরৎযোগ্য নদী
যেন প্রচার করছে মৃত্যুকালে আমার এবং
সময়ের বয়স যত হয়েছিলো, তা
কারণ মৃত্যুর মতো আর কেউ ফোটায় না
অটল দাঁড়িফুল
কারণ কারো জিততে হলে অন্য প্রতিযোগীকে
হয় থামতেই—
হোক সে আমি,
হোক সে চ্যাটের লোম আবদুল-সময় !
♣
বৃদ্ধ ছাতিমের মৃত্যুর কাঁধে ভর দিয়ে
রোদ উঠে গেছে
পাকা-কমলালেবু গায়ে পরে
এ-ডাল ও-ডালে ঝুলছে বসন্ত
একটি কুকুরছানা মনের ভেতর দাঁড়িয়ে
প্রস্রাব করা শিখছে,
যদিও তার হিসু পায়নি— চোখের কোণে হাত দিয়ে দেখি
রোদের বেডরুম থেকে তড়িঘড়ি বের হতে গিয়ে
ধরা পড়ে গেলো প্রায়-ন্যাংটো ভিটামিন-ডি
এতকিছুর পরেও আমার দাঁতের নিচে পড়েনি
এলাচদানা-
ডিটেকটিভ উপন্যাসের শেষ কয়েকটি পাতা
গভীর রাতের স্নান দিয়ে পড়ে ফেলার শর্তে!
♣
একটা মানুষ— মতান্তরে পাখি— মতান্তরে খবিশ
উড়ে-হেঁটে যায়
দূরে সেঁটে যায়
তার কথা শোনে কেওড়া গাছ
তার কথা শোনে ভাদ্র মাস— কুকুরের পরাগায়নের দিন
শুনে চুপ করে থাকে
তার সমান অপরাধী হবে না বলে
এবং পলেস্তারা খসে না মানুষের
শরীরের ফাটলে জন্মায় না গাছ
এও হতে পারে কারণ।
একটা মানুষ—
মতান্তরে বান্দী— মতান্তরে খাম্বা
রোজ সকার খেলে
রোজ পরোটা বেলে
তার শরীরে র্যাশের মতো গুড়িগুড়ি বৃক্ষমেলা
সেখানে কাপড়-চোপড়
সেখানে ছাঁকনি-বেলন
সস্তায় ক্লিপ-টিপ।
শরীর থেকে আরেকটু সামনে গেলেই তার ঘর
ঘরের সামনে মুদ্রাদোষের বাগান
সুন্দর ভালো লাগে না ফুটে আছে সেখানে
একটা মানুষ—
ওরফে প্যারাসিটামল— ওরফে ইসবগুলের ভুষি
আরেকটা মানুষকে পাখি বলে ডাকে
পাখিরা হাগুমুতু করে
না ধুয়েই ঢুকে পড়ে গীর্জা-প্যাগোডা— মসজিদের ঘুলঘুলিতে...
তাতে কী?
এমনি মনে করিয়ে দিলাম আরকি!
ফরহাদ মেঘনাদ। কবি, গীতিকার, সুরকার।
জন্ম: ১৯৮৭ সালের ২৬ জুন লক্ষীপুর জেলার উত্তর বাঞ্চানগর গ্রামে।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : সম্মানিত হতাশাবৃন্দ ২০১৮, ঊনশাপলার দুখ ২০১৯।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।