TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

মৌসুমী শঙ্কর ঋতা'র একগুচ্ছ ছড়া


একদল

এক দল খুব খুশী ক্ষমতায় বসে
একদল সেই সুখ মনে মনে পোষে
একদল হাফসাফ জনতার রোষে
একদল দূরে বসে চুইংগাম চোষে।
একদল হররোজ করে হরতাল
একদল সেই চাপে খুব যে বেহাল।
একদল দুধ থেকে সর শুধু খায়
একদল সর খাবে বাজনা বাজায়।


বৈষম্য

তোমার আছে অগাধ টাকা
আমার ক্যানো নাই?
তোমরা খাবে কোর্মা পোলাও
আমার বেলায় ছাই।
তোমরা থাক অট্টালিকায়
আমরা ভাঙা ঘরে
তোমার গাড়ীর চাপায় পড়ে
আমার শিশু মরে।
তোমরা ঘরে রাত পোহালে
বিজলী বাতি জ্বালো
আমার ঘরের ভাঙা জুড়ে
শুধুই চাঁদের আলো।
 তোমার গায়ে অনেক কাপড়
আমার গা -টা খালি
তোমার গায়ে ফুলের সুবাস
আমার ধুলো বালি।


পেত্নিটার ও লাই ছিল

ভুতটা সুরে গাইছিল
পেত্নিটাকে চাইছিল
পেত্নিটা যে মাঝ নদীতে
মনের সুখে নাইছিলো
ভুতটা সুরে গাইছিল

ভুতটা সুরে গাইছিল
ভালবাসা যাই ছিল
পেত্নিটাকে সব দিয়ে সে
নৌকাতে  দাঁড় বাই ছিল
ভুতটা সুরে গাইছিল

ভুতটা সুরে গাইছিল
পেত্নিটাকে চাইছিল
সামনে যাবে কোন সাহসে
সঙ্গে যে তার ভাই ছিল
ভুতটা সুরে গাই ছিল

ভুতটা সুরে গাইছিল
পেত্নিপানে চাইছিল
বুঝতে পারি এই ঘটনায়
পেত্নিটার ও লাই ছিল।


যাবি নাকি আমার সাথে 

যাবি নাকি আমার সাথে
                          বলনা
যুদ্ধে যাবার ইচ্ছে হলে
                          চলনা
 যাবি নাকি আমার সাথে
                          বলনা
একাত্তরের ফুলকি হয়ে
                          জ্বলনা
যাবি নাকি আমার সাথে
                          বলনা
তুই তো দেশের বীর বাঙালি
                          খলনা।
যাবি নাকি আমার সাথে
                          বলনা।


রাজনীতিবিদ উমেদ আলী

রাজনীতিবিদ উমেদ আলী
ইলেকশনে দাঁড়ায়
ভোটটা যে তার খুব জরুরী
তাইতো দু হাত বাড়ায়।
ইলেকশনে দাঁড়িয়ে উমেদ
লোক যে ভাল মস্ত
সবাই জানে কৃপণ মানুষ
এখন বিরাট হস্ত।
টাকা ছড়ায় পয়সা ছড়ায়
নেই যে হাতে অস্ত্র
উমেদ এখন মহান মানুষ
দান করে শীত বস্ত্র।
একটা যে তার নীতি আছে
দলটা করে সরকারী
জনগনের মুন্ডু দিয়ে
খায় যে উমেদ তরকারী।
উমেদ এখন বড্ড ভাল
দেশের কথাই ভাবে রোজ
গরীব মানুষ উপোষ করে
সেই বা কেন খাবে রোজ?
তাইতো উমেদ ওদের সাথে
উপোষ থাকার ভান করে
চিট বাটপার উমেদ আলী
জাতির সাথে ফান করে।
সবাই মিলে উমেদ আলীর
মুখোশ ধরে টান মারো
দূর্নীতিবাজ উমেদ আলীর
বুকের মাঝে বাণ মারো।


রং মেখে দেই

আমি যখন রং মেখে দেই
প্রজাপতির ডানায়
মৌমাছিরা গুনগুনিয়ে
মনের কথা জানায়।
আমি যখন রং মেখে দেই
মাঠের সবুজ ধানে
দোয়েল পাখি শিষ দিয়ে যায়
মিষ্টি মধুর গানে।
আমি যখন রং মেখে দেই
শিউলি বকুল গাঁদায়
আকাশ তখন ডেকে বলে
রং মেখে দাও চাঁদায়।
আমি যখন রং মেখে দেই
রংধনুটার বুকে
বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে
সে রং চতুর্দিকে।


দম্ভ

দম্ভ তুমি করছো ক্যানো চেয়ারের?
ক্ষণস্থায়ী  জীবন সেটার
হোকনা যতই পেয়ারের
দম্ভ তুমি  করছো ক্যানো চেয়ারের?
সালাম দিলেও নাওনা তুমি
লাট সাহেবের নাতি
চুনোপুঁটি বাঘের মাসি
ভাবটা বিশাল হাতি।
আগে তুমি হাসতে দেখে
এখন তুমি হাসনা
চেয়ারটাকেই ভালবাস
মানুষ ভালবাসনা।
জানি জানি সব-ই জানি
সবটা তোমার  ধান্দা
ভাবছো তুমি খুব  জ্ঞানী আর
অন্য সবাই আন্ধা।
মনটা  তোমার চেয়ার জুড়েই
দেশটা জুড়েই নয়
চেয়ারটাতো পড়বে ভেঙে
সেদিন দূরে নয়।
তবুও তুমি দম্ভ কর চেয়ারের
ক্ষণস্থায়ী  জীবন সেটার
হোকনা যতই পেয়ারের
দম্ভ তুমি করছো ক্যানো চেয়ারের?


মৌসুমী শঙ্কর ঋতা। ছড়াকার। 
জন্ম রংপুরের গোমস্তপাড়ায়।
প্রকাশিত ছড়ার বই: 'ছড়ায় ভাসে মন' (২০১১)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. একজন প্রতিভাবান ছড়াকারের দেখা পেলাম। জলনুপুরের সম্পাদককে ধন্যবাদ এরকম মেধাবী সাহিত্যিকের সাথে দেখা করিয়ে দেবার জন্য।

    উত্তরমুছুন
  2. অত্যন্ত সুন্দর এই ছড়াগুলো। আমার গবেষনার বাতিক আছে। এখন দেখছি দিদি কবিতার উপরে আমি এটা করতে পারব। সেলিনা হোসেন কে আমার আর লাগবেনা। দিদির প্রতিভার কথা আগেই জানতাম, ভাল লিখেন। কি বলব আমার মায়ের তিন চারটা কবিতা এবং নাটকের বই আছে একটা। আমি ছাপাতেও সাহায্য করেছি ঢাকায় গিয়েছি পান্ডুলিপি নিয়ে। আমি আজও পড়িনি। দিদি একটা কবিতা শিখিয়েছিল টিউনিক সহ। মাঝে মধ্যে আবৃত্তি করি আমি এখানে ওখানে। হাত তালি পাইতাম। আজ আর কি বলব সবগুলো ছড়াই পড়লাম এখন মুখস্ত করতে হবে। কারন আমি ছড়াকার ও না কবিও না তবে আবৃত্তি করি। তাই করব, এত রিচ ছড়া কেমনে লিখলেন দিদি। প্রতিদান আমি দিতে পারব না, নিলাম শুধু।

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।