TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

কবিতা সংখ্যা: প্রারম্ভিকা | নোমান নজরবীর কবিতা



যে চলে যেতে চায়

তাকে রাস্তা দেখিয়ে দিও
এগিয়ে দিও গলির মাথা
একটি রিকশা ডেকে দিও, প্লিজ!

যে চলে যেতে চায় তাকে আটকিও না
বিরক্ত করো না প্রেমে
পুরনো দিন মনে করিয়ে তাকে বিব্রত করো না আর
ভালোবাসার নামে খামোখাই বিলম্ব করিও না তাকে

যে চলে যেতে চায়
তাকে চলে যেতে দাও—
হাত নেড়ে দাও বিদায় জানিয়ে
সে চলে গেলে—

ঘরে না ফিরে তুমিও চলে যেতে পারো
কোন নির্জন শূন্য ছায়া-পথে
যেখানে হাওয়া-নৈঃশব্দের ভেতর ফুটে আছে ধুন্দুল
সেখানে গিয়ে বসো; দেখ, ধীরে খুব ধীরে দুলছে হলুদ-মুখী ফুল
তার দিকে চেয়ে খানিক বিষাদগ্রস্ত হও আরও—
যদি পারো গীতবিতান থেকে গেয়ে উঠো কোনো ব্যথার গান।

একা তুমি আরো কিছুক্ষণ
ওভাবেই বসে থাকো, মূক—
ঠোঁটে করে স্মৃতির-হাসেরা তুলে আনুক শ্যামল শামুক

সেখানে, পুকুরের শান্ত জলে ছুঁড়ে মারো দুটো ঢিল
জলের কম্পনে হৃদয়ের কম্পন রাখো—তারপর
জলের মতোই স্থির হও আবার—হৃদয়কে বলো,
'যে চলে গেছে মূলত সে স্বপ্নের আঁধার—জেগে
যাকে পাওয়া যায় না চোখের পাতার ওপর কোনদিন।’

যে চলে যেতে চায়
তাকে চলে যেতে দাও
যে যাবার সে চলে যাক—
তোমার আহাজারি শুনিও না তাকে

কিছুক্ষণ উদাস থেকে আকাশের দিকে
ভাবো, ভাবতে পারো—মানুষের চলে যাওয়াই মৌলিক
শূন্যতার ভেতরেই আমাদের আবর্তিত রাত-দিন—
হৃদয় এক সামান্য ব্যথা
জীবন তার চেয়েও দীর্ঘ ব্যথার আকর।
তাই হৃদয়কে মুঠো করে ধরো
তারপর হাতের পিঠে মুছে নাও চোখের পাতা

আর জেনো, ’বৃন্তচ্যুত পুষ্পের বেদনা নিয়েই
পুনরায় প্রসূনবতী হয় গাছ—সাঁঝে বা প্রভাতেই;’
যে ভুলে যেতে চায়
তাকে ভুলে যেতে দাও—
মস্তিষ্কে তার স্মরণগামী তীব্র ট্রেন ছেড় না
চেওনা হিজল বেলায় উদাসী সঙ্গম—
ভুলে সে যাক নিয়ে সমস্ত চোখ আর দীর্ঘ চুম্বন!


এ বেট উইথ গড

মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়—
ঈশ্বরের সাথে বদলে ফেলি প্রেমিকা
আর দীর্ঘ চুম্বনে তাঁকে হারিয়ে দেই

জলে নেমে দেখি কার কত দম
কে কতদূর দিতে পারে সাঁতার—মাতাল দরিয়ার
দাঁড় কত জোরে কে বাইতে পারে!

প্রায়ই ইচ্ছে করে—
ঈশ্বরের সাথে বদলে ফেলি প্রেমিকা
আর প্রেমের বাজিতে তাঁকে হারিয়ে দেই—

আফসোস, পরমেশ্বরের কোন প্রেমিকা নেই!


শিমুলের বনে

শিমুলের বনে এক সুরেলা ঘুঘু
তেরচা রোদ এসে পড়ে তার গায়
শালিকের ঠোঁট গুঁজে রাখা লালে
বিধুর লগন করে ওঠে হায় হায়!

ফুল ঝরে লাল হয়ে আছে মাটি
কেউ যেন খুন হয়ে গেছে খুব
কাঁদছি স্বজন হয়ে পাশেতে বসি
হাওয়া এসে তুলে হেরি ধরছে চিবুক।

চিন্তায় লাগে সেই রক্তের দাগ
লেখা হয় শোকগাথা কাঁটার নিবে
চিরদিন খুন হয় কবির হৃদয়
প্রসূনের নাভি চাটে ঘাসের জিভে।

কার ডাকে এসেছি এই শিমুল বনে
আমারে দেখায় নাচ পিতলের পরী
দেহেতে ফুলের মন জড়িয়ে নিয়ে
শিমুলের বাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়ি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ