চন্দ্রযান যা প্রকাশ করবে না
সমস্যাটা তখন শুরু হলো যখন লুই বুনুয়েল
ধারালো খুর দিয়ে চাঁদকে দু’টুকরো করে দিলো
অন্ধ আবেগীরা গান ভাঁজলো
চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে, তোমরা ভেবে করবে কি?
কিছুই করার ছিলনা
চাঁদের মাটি কোন দিনই আমাদের ছিল না— সংখ্যাগরিষ্ঠের মত
শূন্যের ভিতরে ছিল কুঁড়েঘর
দু’টুকরো চাঁদ একে অপরের বিপরীতে
যতই দূরে সরে যাচ্ছে আমাদের
শূন্যতার পরিধি ততই ছড়িয়ে পড়ছে
এলিয়েনরা মিলিটারি সেনা দিয়ে ঘিরে রেখেছে
শূন্যের উপত্যকা
একটা ফাঁকা জায়গাকে নিয়ে কত বড় এই ফাঁকার বড়াই
টিয়ার গ্যাস আর পেলেট গানের সামনে
জিভহীন জীবেদের অসহায়তা
এরই মধ্যে দু’একটা পাথর উড়ে আসছে
রাষ্ট্র যাকে পাথর ভাবছে
আগন্তুক সেই আগ্নেয় গ্রহাণুর ঝড়ে মানচিত্র ভেঙে পড়ছে
রাতের কানে ঝিঁঝি ঢোকার পর
ট্রমার ভিতরে ভাইরাস আর
এন্টিভাইরাসের যুদ্ধ চলছে
আমাদের ভূগোল স্যার
আর ভূগোল পড়ান না
ইতিহাস স্যার বলেছেন ম্যাজিক দেখাবেন
সিলেবাস কমিটি উইপোকা
মারার ওষুধ কোথাও খুঁজে পেল না
ঘুণপোকার ফাজিল হাসির
কি আর জবাব দেবে ভিজে ডিভিশন বেঞ্চ?
গুটি কেটে বেরিয়ে আসার পর
শুয়োপোকা আর
প্রজাপতি হয়ে উঠতে পারছে না
একশো চুয়াল্লিশের চরাচরে
পচাগলা শুয়োপোকার নরক থেকে
ঝরে পড়ছে জ্যান্ত সব আলকুশি
ডাকপাখির বোরখা, বাজপাখির নখ
ডাক পাখিদের শোবার ঘরে ঢুকে পড়েছে
বাজপাখির ঝাঁক, মিলিটারি কুচকাওয়াজ
কার্ফুর বাঁশি
এখানে এবার পাশা খেলার আসর বসবে
বহুজাতিক শেয়ালদের হুক্কা হুয়ায়
নিলাম হবে জল স্থল আকাশ
কবি আগেই সতর্ক করেছিলেন
নিজের মাংসর জন্য নরম পাখিটি আজ
নিজেই নিজের শত্রু হয়ে গেছে
সিংওয়ালা উঁচু পাহাড়ের মাথা থেকে
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে
ডাক পাখির আব্রু, বোরখা, রক্তাক্ত পালক
পাহাড় থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে
কাটা ডানা, ওপড়ানো স্তন, ছেঁড়া যোনী
আমরা কুড়িয়ে নেবো
কিন্তু কোন মুখে?
জাত
ঈশ্বরের চিলেকোঠায় যে ক্যামেরাম্যান থাকেন আজ এই খয়েরি সকালে
আমার শেষ ছবিটি তিনি তুলতে এসেছেন
নাকের ওপর ওঠাবসা করছে
একটি কালো কুচকুচে মাছি
খুব ইচ্ছা করছে মাছিটা
উড়িয়ে দিই
আমার হাত আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই।
প্রয়াত পৃথিবী কোন অক্ষরেখায় দাঁড়িয়ে!
অন্তর্গত অন্ধকারের বিনিময়ে
কোন মলমাসে সে সূর্যের কাছে গায়ত্রী ভিক্ষা করেছিল?
মৃতদেহটির দিকে দুজগতের হুলওয়ালা
পঙ্গপাল এগিয়ে আসছে। ভিড় ঠেলে ভেসে আসছে
বাত। বাতেলা। এখানে আধার কার্ড নেই।
ভোটার কার্ড নেই। উনিশ শো একাত্তরের আগের ইতিহাস নেই
বিবর্ণ ধর্ষিত লাশ ঘিরে রেখেছে ইবলিশের তাঁবু।
ফজরের আজান দেওয়ার পর
কমণ্ডলু নিয়ে আমি মন্দিরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম
গির্জার ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটি তখনও
আমাকে সমান আকর্ষণে ডাকছিল
যে বৃক্ষগুলির কেন্দ্রে সমস্ত ঋষি, নবী, চিন্তক আর ফকিররা
সর্ব ধর্ম সম্মেলনের সংহতি সভায় বসেছিলেন
দাঙ্গার আগুনে সেই অরণ্য পুড়ে যাচ্ছে
আরশিনগর থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ছে
একতারার ছাই, দোঁহার দীর্ঘশ্বাস
সমস্ত পাখির ধ্বনিবিতান আজ মৃত
বাষ্পীভূত নদীরা তৃষ্ণার তীর্থ ছেড়ে চলে গেছে চিরতরে
আমাদের মৃত বায়োমেট্রিক উল্টে পাল্টে
আমাদের কবর শ্মশান খুঁড়ে ফুঁড়ে
আমাদের দলিল দস্তাবেজ কেটে কুটে
আমাদের উত্তরীয় আলখাল্লা টেনে হিঁচড়ে
জাতের এজেন্ট আমাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে
না, আমাদের না। আমাদের জাত।
লেখকের অন্যান্য লেখা:
• নৈতিকতাবিরোধী সংখ্যায়: গালিব উদ্দিন মণ্ডলের কবিতা
গালিব উদ্দিন মণ্ডল। জন্ম ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮৬ । বাসস্থান পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়া গ্রামে। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘মাটির কলস’ (২০১৬), ‘সমা ও সময়যান’ (২০২০), ‘বাবাস্কোপ’ (২০২০)। সম্পাদিত ছোট কাগজ: ‘জংশন @জাঙ্গিপাড়া’।
2 মন্তব্যসমূহ
চারটি কবিতাক যদি একটি বাক্যে ধরি তাহলে বলতে হবে, মধ্যরাতে দাঁড়িয়ে থাকা যে মানুষটা নিজেকে অ্যান্টি-রোমান্টিক বলে ঘোষণা করছে তারই বুক চাইছে একটা গোটা চাঁদ। কেননা সব জায়গাতেই একটা হারানোর বেদনা আছে৷ কী হারিয়েছে? হারিয়েছে স্বপ্ন। হারিয়েছে বাস্তবতা। ঘর নেই, চাঁদও নেই। যদি কিছু থাকে তা আকাশ। এই আকাশের রঙ নেই, সীমা নেই, কেবল শূন্যতা।
উত্তরমুছুনঅভিনব প্রকাশ।
খুব ভালো লাগলো।
আপ
বহুক্ষণ আনমনা হয়ে ছিলাম কবি। আপনি আমার একি করলেন?
উত্তরমুছুনমন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।