TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

সাজ্জাদ সাঈফের কবিতাভাবনা, সাক্ষাৎকার ও ‘বহুদিন ব্যাকফুটে এসে’ বই থেকে কবিতা


কবি ও কবিতার গতিবিধি

বাংলাদেশের বয়স ৫০ হইতেছে মানে এইটারে অস্বীকার করা নয় যে বাঙালির অস্তিত্ব কয়েক হাজার বছরের। তো, বাংলাদেশের কবিতা সেই প্রাচীন বাংলার ধারাকে নাকচ করে আগায়নি। এ গেলো বাংলা কবিতার সময়কাল নিয়ে হাইপোথেসিসের প্রারম্ভিকা।

কবিতাকে ধরা বা ছোঁয়া যায় না, স্বাদ বা বর্ণ নেই এর। অথচ কবিতাপ্রীতি এমন মোহাবিষ্ট করে যে একজন কবির সিংহভাগ জীবদ্দশাকে তছনছ করতেও যথেষ্ট তাহা। ভাবনার স্বতঃস্ফূর্ত ও লিখিত রূপকে কবিতা বলেছিলেন ওয়ার্ডসওয়ার্থ, তার পরেও কবিতার কাটাছেঁড়া কম হয়নি। রোমান্টিক যুগ শেষে ইউরোপিয় কবিতা চর্চা সিম্বলিজম প্রভূত আকারে বদলে গেছে পরপর, এখানেও তাই। অথচ ভাবনা বা চিন্তাপ্রক্রিয়াকে বাদ দিয়ে কবিতার রূপরেখা দাঁড়ায় না কোনোভাবেই।

কবিতাকে সবচেয়ে বেশি যেই কাঠামো বা ধারণার ওপর নির্ভর করতে হয় তা হলো কবির তাগাদা। যে কোনো বিষয় নিয়ে অথবা বিক্ষিপ্ত ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে নিয়ে কবির ভাবনা গতি বা দূর্গতি যে কোনোটাই ফেস করতে পারে। আর সেই সূত্রেই তাগিদ বা তাগাদার মুখোমুখি হন কবি। হয়তো খুব জোর বৃষ্টি থেমে গেছে এইমাত্র, সামনে পিচ্ছিল পথ বুকে হাঁসের ফ্যামিলি নিয়ে কি রকম বিমর্ষ, হয়তো এরই ভিতর থেমেছে কাছাকাছি কোনো ট্রেন, অসুস্থ পিতার সর্বান্ত চিকিৎসা শেষে মৃত্যুবোধে জারিত হৃদয় নিয়ে গাঁয়ের পিছল পথে পা বাড়ালো ছেলে, সাথে এক ভ্যানে লাশ পিতাটির। বৃষ্টি ও চোখের পানিকে আলাদা করা যাচ্ছে না ছেলেটির মুখে চেয়ে; এই যে দৃশ্যমান আবহাওয়া, কবিতাকে এর বাহিরেও নেয়া চলে, কিন্তু এর কেন্দ্রে থেকে কবির মগজ তাগাদা পেতে পারে ভিন্নতর দৃশ্যেরও, যার মর্মে থাকে ইমাজিনেশন।

বাংলাদেশে বাংলা কবিতা লিখতে যাবার যে অনুশীলন তা গড়ের মাঠে পশ্চিমী বাঙালির থেকে খুব তফাত কিছুই নয়।ভরকেন্দ্র হয়ে জায়মান থাকে দৃষ্টিভঙ্গি। অতঃপর কবিতাকে দৃষ্টিভঙ্গির খাম-খেয়াল বলাই যায়।

কবিতা সেজন্যেই অনেক রকম, মানুষ তো অনেক রকমই। কবিতাকে স্নায়বিক ইমপ্ল্যান্ট করে নেন একজন তাপস কবি। সেই প্রক্রিয়াটি কবির নিজ গতিকে ধাবমান হয় মূলত। সারাউন্ডিংসকে ফিল করার জন্য পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাহিরেও কিছু ব্যপার কাজ করে যার পোশাকি নাম ইনট্যুশন আরকি।

কবিতা অনেক রকম হয়, কবিও অনেক রকম তবে কবিতাস্পর্শ এপলায়েড হয় একটাই ধারণার ওপর তা হলো দৃষ্টিভঙ্গি। কবিতা আরাধ্য সুন্দর তো বটেই। তবে সমকালীন বিশ্ব যেহেতু নৈতিক ফল ডাউনে আক্রান্ত তখন কবির কিছু দায় থাকে নৈতিক স্ট্যাচুকে সামান্য এদিক সেদিক করতে না দেবার। শেলি বলতেন— রাষ্ট্রেও কবির প্রতিনিধিত্ব গুরুত্বপূর্ণ। অতএব ভাবনা টু দৃষ্টিভঙ্গি এইমতো সফর লোড কমায় কবিমনন হতে। এতে কবিতাও সেজে ওঠে রঙে বা বিবর্ণে।
— • —



জলনূপুর: ‘বহুদিন ব্যাকফুটে এসে’ প্রকাশিত হওয়ার অনুভূতি জানতে চাচ্ছি।

সাজ্জাদ সাঈফ: বইটি প্রকাশিত হবার পরের অনুভূতি আসলে মিশ্র। যেমন সমসাময়িক লেখকগণ বইমেলাকেন্দ্রিক কাজ নিয়ে এগিয়েছেন একে একে, আমার এমনই মনে হলো যে বিগত দুই বছরে কিছু লেখা জমে গেছে এবং এদের মলাটবন্দী করলে একটা সময়কালকে ইশারাবৃত্তে রাখা যেতে পারে। এখন এসে মনে হচ্ছে হৃদয়ের অনেকখানি ওজন কমে গেলো আরকি!

জলনূপুর: কোনো কারণে কখনো এমনটা মনে হয়েছে যে, ‘বহুদিন ব্যাকফুটে এসে’ আপনার প্রথম কবিতাগ্রন্থ?

সাজ্জাদ সাঈফ: না, স্পষ্টত সেটা মনে হয়নি এবং প্রথম বইয়ের সমান উচ্ছ্বাস বা উদ্বেগ কোনোটাই একে স্পর্শ করেনি।

জলনূপুর: কবিতাগুলো কতদিন ধরে লেখা? কোনো বিশেষ ঘটনার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে? একটু বিস্তারিত বলুন।

সাজ্জাদ সাঈফ: কবিতাগুলি বিভিন্ন সময়ে লেখা। এমনকি দশ বছর আগের অপ্রকাশিত লেখাও এখানে পরিমার্জিত হয়ে এসেছে। বইটিতে আত্মতত্ত্বের পথ ধরে একে একে এসেছে গেছে আত্ম-সমালোচনা, আত্মনির্বাসন, আত্মসংবরণ এবং প্রকৃতির রূপ ধরে এসেছে মুগ্ধতা-দ্রোহ-সুর-অসুর। বিশেষ ঘটনা বললে আম্মা-আব্বা-সহোদরের সাথে সৃষ্ট গ্যাপটির ঘটনাপ্রবাহের কথা আসবে।

জলনূপুর: শিল্পের অনেক মাধ্যম থাকতে কবিতাই লেখেন কেন?

সাজ্জাদ সাঈফ: শিল্পে আমার সংযুক্তি অতি-শৈশবে বলা যায়। একমাত্র সহোদর ও জ্ঞাতি ভাই-বোনেরা মিলে নাটক মঞ্চস্থের খেলাটি করে করে কাটানো সবুজ শৈশবেই নাটক লেখালিখির অভ্যাস হচ্ছিলো যদিও শিশুতোষ সে-সবই, যেমন বন্ধু লাফুলের সাথে একই সময়কার ছবি আঁকার উন্মাদনা, কলেজ-জীবনে ফাংশানে সহপাঠীর গাইবার জন্য গান লেখা, মেডিকেল কলেজে স্টেজ শোর জন্যে নাটক কো-অপারেট করা এবং স্টেজে সত্যিই কেনো জানি না প্রশংসিত অভিনয়-শিল্প। আর কবিতায় থিতু হবার নৈপথ্য বললে কবিতাকে ‘ভাষার অভ্যন্তরীণ আনন্দভ্রমণের প্রাচীনতম এবং শ্রেষ্ঠতম উপায় জেনেই সর্বান্তকরণে সিরিয়াস হওয়া’র তাগিদকেই চিহ্নিত করতে হচ্ছে। তবে গান-নাটক-আঁকা কোনোটাই অচ্ছুৎ নয় বরং তীব্র ইচ্ছেও রয়েছে এদের পুনরাবৃত্তির।

জলনূপুর: বইটির মার্কেটিং-এর ব্যাপারে আপনার নিজস্ব ভাবনা, পরিকল্পনা কেমন ছিল?

সাজ্জাদ সাঈফ: বইটির মার্কেটিং বিষয়ে আমার শতভাগ আস্থা ছিলো অত্যন্ত প্রিয় মানুষ ও সতীর্থ কবি হাসনাত শোয়েবের কথায় ও কাজে, আমার প্রফেশনে থেকে মার্কেটিং এ কাঁচা হওয়ায় এ নিয়ে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ(যেমন- মোড়ক উন্মোচন) নেবার তাগাদাই আসেনি মনে, আমি একাগ্র ছিলাম মানোত্তীর্ণ কাব্যভাষার সেট আপে, আর এই ধাপে প্রিয় সতীর্থ কবি সুলতান স্যান্নালের সাহচর্যের প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা আমার।

জলনূপুর: বই প্রকাশ মানে প্রকাশকের সাথে যৌথভাবে কাজ করা। শিল্পের ক্ষেত্রটিতে লেখক-প্রকাশক সম্পর্কের ব্যাপারটা আপনার কেমন মনে হয়?

সাজ্জাদ সাঈফ: শিল্প ধারণাটিতে লেখক-প্রকাশক মেলবন্ধন পারিবারিক আবহাওয়ার অনুরূপ হওয়াটাই কাম্য আমার।

জলনূপুর: পূর্বের প্রকাশিত বই তিনটিকে যদি স্তর মনে করা হয় তাহলে এই বইটিতে আগের স্তর কতটুকু পার হয়েছেন বলে মনে করেন?

সাজ্জাদ সাঈফ: আগের তিনটি বইয়ের সিক্যুয়েল হিসেবেই এই বইয়ের লেখাগুলি সাজাতে চেয়েছি, ‘কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা’র পর আসলে চলমান সময়-স্বভাবে একজন কবির বাদবাকি করণীয়কে  ধাপে ধাপে লিপিবদ্ধ করবার তাড়না বোধ করে আসছি প্রথম হতেই। আগের বইগুলোর স্তরকে অতিক্রম করা গেছে কি না সেই অনুসিদ্ধান্তের ভার পাঠককেই দেয়া শ্রেয় মনে করতেছি আসলে...

জলনূপুর: প্রথম তিনটি কবিতাগ্রন্থ থেকে এর বিশেষত্ব কী?

সাজ্জাদ সাঈফ: এর বিশেষত্ব হইলো এইটা নতুন বই, এখানে বাংলাদেশের কবিতায় দীর্ঘকাল যাবৎ রচিত স্রেফ আত্মজৈবনিক কড়চা (রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র পরে) টাইপের কমন সিলসিলা হইতে পৃথক করতে চেয়েছি কবিতাকে, বাকিটা পাঠক-মনই বলে দেবে...

জলনূপুর: বইটি সম্পর্কে আপনার নিজের মূল্যায়ন কী?

সাজ্জাদ সাঈফ: আমার মূল্যায়ন শূন্য আসলে, মূল্যায়ন ভেবে যে লিখি নাই একে। কবির নিজ গ্রন্থ বিষয়ে এক প্রকার নির্লিপ্ততাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি আমি, কেননা এতে আত্মমুগ্ধতার মোহকে সাইড দিয়ে আগায়া যাওয়াটা সম্ভব হয়।
—•—



শুধু জলের ওপর

কচুরিপানার ধারে কাকলী-সকাল, শীতপাখিময়;
আত্মপরিচয়ে অপরূপ খিলান দাঁড়িয়ে যাক, আমি চাই, চাতাল সরব থাক
সহস্র ঠোকরে- গভীরতা ফেলে রেখে, সারফেস ধরে কেনো রপ্ত করো
কীট-কৌশল, পুকুরে হাঁটার? মাথা চুলকাও; আড়চোখে দেখে নাও
শ্বাপদের জিভের জড়তা!

আমার কেবল নিস্তরঙ্গ রুহু, হাতে হাতে বিলি বন্টন হলো-
পাতাকুড়ুনির মেয়ে উনুনে ফেলেনি, পাতা ল'য়ে বাঁশির মকশো করে;
হ্যাঁ-রে পাগল, এভাবেও বাদ্য বাজে, নরমুন্ডু বাজে উপত্যকায়!

ডুব-নিদ্রার কিনারে তুমি
অচল গাত্রদাহকে, সবাক করেছো শুধু, ডুবেও তো দেখা যেতে পারে নাকি!

এইদিকে ভোর তার সারা আয়োজনে
কত ফুল, কত ফুসকুড়ি, রাখছে জড়িয়ে!
পথঘাট, বর্ষার কামড়-চিহ্ন ল'য়ে সারাটা বছর
হৃদয়ের তৈজস ল'য়ে, প্রাণাধিক চলাচল তবু, অভ্যাস রাখে!

দেখাটুকু ঝরঝরে করো, চোখেরও যে রয়েছে অযুত ইউজ আর
এইভাবে, গভীরতা ফেলে শুধু জলের ওপর বলা, ঐ কথা মানদন্ড নয়!


চিরল দুপুরে

ঝরা-পাতা-ঝিল নিয়ে, চিরল দুপুরে
অচির আলোর রোদে, দীঘির কিনারে
ফুটে রয় বুনো-ফুল, নীল তার খোঁপা;
পরনে কুয়াশা দিয়ে মহাকাশ লেপা!

কিছুটা পেয়েছি দেখা, ভয়ে কাঁপা স্বর-
বিঁধেছে দ্বিতল বুকে, চাঁদনী-পসর।
কিছুটা হারালো তার, ভায়োলিন গান;
তোমার কাজল চোখে, দ্বিধা-অবসান।

অরন্য ঝুঁকেছে বিলে, কাদাখোঁচা জল
আবেগে-বিছানো প্রেম, যাবে অসফল?


মিথ হয়ে ধুলা হয়ে গেছে

এর কোনো মানে আছে নাকি? এইসবে?
কিছুটা আড়ালচারী, কিছুটা ব্যায়াম!
কিছু মুখ স্বপ্নে এসে, দেখে গেছে ত্রিলোক-যাপন!
হাড়মাসে জং ধরে যায়, ঝুলে থাকে স্মৃতির দু’পিঠ।

আমাকে বিজন সুরে, পিছু ডাকে, সুর বদলায়;
যেনো-বা গ্রীষ্মকালও, ভুগতেছে একাকীত্বে;
উঠানে মুকুল-কলি, সাঁতরে আসছে রোদ!
পিছনে গহীন দহ, ডাকলে শূন্যতা পায়;
ঘোলা চোখে ছাল ওঠা গাছেরা তাকায়!

আমাকে লক্ষ্য করে, পৃথিবীকে হাসতে দেখেছি;
আমারই ঘামছিলো মুখ, কতোদিন, কতো অছিলায়!
একাকী পুকুর-ঘাটা,  সিঁড়ি-ভরা গল্প নিয়ে, এইদিকে
ফ্যালফ্যাল চায়, আমাকে লক্ষ্য করে-
কিছু পাখি উড়াল থামায়, কিছু মুখ স্বস্তি হারায়;
এভাবেই দুপুর গড়ায়, মাকে ডাকি শিয়রে তখন-
এভাবে চড়ুইভাতি, মিথ হয়ে ধুলা হয়ে গেছে;
মাকে ডাকি, মায়ের মুখে, হাই তোলে কত রোদ্দুর!
তারপর কন্যার ডাক, কলিজাকে শান্ত লাগে-
যেনো ঘর নিজেই সেতার, ধুলা ঝেড়ে কোমাকে তাড়ায়!
এইভাবে ডাকেনি পৃথিবী, এতো মায়া অচেনা তাহার!
আমাকেই লক্ষ্য করে, বাঁকাতেড়া চোখেরা তাকায়;
কিছুদিন ঠাট্টার গ্লাস, হাতে হাতে ঘুরপাক খায়-
আমিও নিরবে একা, একা যাই, একা ফিরে আসি;
এতো ঘাই, পাথরের চাঁই, গেঁথে আছে বেঁচে থাকাটায়!


ব্যামো

লোকে ঘাড় তেড়া করে দ্যাখে, টিপ্পনী কাটে-
আমার মুখের আদল থেকে আন্দাজ করে নিতে চায় রক্তের সকল ব্যামো, এর হয়েছে'টা কি!

মাফলারে মুখ ঢেকে এক
পুরাতন গানের ভঙিমাসহ, অন্তর টাচ করে করে
হেঁটে যাওয়াতে আমার আনন্দ যতো, আততায়ী শীত জানে!

লোকে দ্যাখে একটি যুবক, নিঃসঙ্কোচে হেঁটে গেলো শুধু!


আমাদের সমাজ

আর ক'টা দিন হেমন্ত বরাবর মেনে নিবো সব হাওয়া;   
সহকর্মীর ঠাট্টা মেশানো হাসি, মেনে নিবো আর ক'টা দিন!
তারপরে ধানের চিটা, খড়ের বিচালি গায়ে যেনোতেনো মাখামাখি হয়ে
থেকে যাবো গাঁও গেরামে! যেখানে ক্ষুধাও কবিতা, ঘাম ঝরে হিম হয় কৃষাণীর গা!

আমাদের সময় নগন্য, মিথ্যারা প্রসাধনী আজ;
যার বুকে জেগে থাকে গানের তাড়না, মঙ্গল-স্বর
তার দিকে অজস্র তির, ছুটে যায় সমাজ-ধারণা হতে!


আমার আছে

পিছন পকেটে রাখি ছোট্ট চিরুনি। ধুলার পাজল থেকে দূরে
দৃষ্টিকে শাসন করে পাতাদের মাস্তানী। নিঃশ্বাসে ত্রিভূজ আঁকে প্রেমপত্র!

সাধু বা সন্ত নই, জানো তুমি, বুকে আছে কাঁটার পত্রালি।
ধুতুরার কষ জমে দ্যাখো আমাদের ষঢ়ঋতু, অচেনা দেখায় কতো;
পিপুল গাছের নিচে, ফল হয়ে, কতো স্মৃতি ফেটে-ছেঁটে গেছে!           

চুপচাপ মেঘের সিঁথিতে মেঘ,  নিরবতাকে পেরিয়ে এসেছে নদী;
দেখবে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে খুব, মেঘ-নিরালায় তোমায় আঁকি যদি!


পিতার ডাক
(কবি নাঈম ফিরোজকে)

হয়তো একটা জার্নিতে আটকে গেছি আমি, আড়ষ্ট ধুলার ভিতর পড়ে থাকা একটা কয়েন।
বুকের ভিতর হাত ঢুকিয়ে শান্ত করছি হৃদপিন্ড! মনে হচ্ছে পিতার ডাক পিছনে ফেলে এসে
কোনো বয়লারের ভিতর ঢুকে গেছি, যেনো অলস বৃত্তকে ভৎর্সনা করে তার ব্যাস;

এমন করুণ ডাক, প্রান্তিক ডাক, শুনি নাই কারো মুখে আর!
আমার কোনোই দিনপঞ্জী নাই; সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরে, ঘর ভর্তি বিষাদ নিয়ে ফিরি-
পিতার কফিন বহেনি যে কাঁধ, কোন‌ও বাক্য‌ই তাকে দিতে পারে না গন্তব্যের খোঁজ;
মনে হচ্ছে পেশির ভিতর ঢুকে যাচ্ছে পেশি, হাড়ের ভিতর হাড়;

একদিন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে ফুটে উঠবে জন্মদাগ, পিতার পরশ;
 সামনে থেকে সরে যাবে ছায়া! আর্তনাদের মতো মুখ করে তাকিয়ে থাকবে রোদ;
সূর্য-দহের নিচে ঘেমে উঠবে দাঁড়া! আর, দাঁড়িয়ে যে গা জুড়াবো, এমন বৃক্ষ‌টিও পাবো না
কোথাও খুঁজে!

দিনকে দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে মায়েলিন শিট, অনিদ্রা সেখানে চিরকুট কোনো-
রাত বাড়তেই পরিস্কার হয় সমস্ত অক্ষর, পাঠ করি স্মৃতিভ্রংশের মতো।

কোনো এক অযুক্তি আমাকে শাসায়, প্রেরকের নাম তাতে লেখা নেই দেখি!


বাদুড়

সুনীতির শাঁস খেয়ে গেছে চালাক বাদুড়ে, তবু দেখি তুমি
পৃথিবীকে ডাকো আনন্দ-নার্সারি; মনে হয় ডুব দিয়ে থাকি!
মনে হয় পাঁক খেয়ে পড়ি;     

সকল তটিনী হতে ফিরে যাবে হাওয়া, এরকম চতুরতা পেলে;
মনে হয় গলা কেটে মরি, তোমাদের রাজার ভিটায়!

সুশাসন চলে গেছে একা, পাথার যেদিকে খোলা;
সেইদিকে চেয়ে থেকে বল্গা হরিণ, খেলা করে দীর্ঘশ্বাসে;
খেলা করে ম্যানগ্রোভ চরে ফার্নেস তেল!

তারপর সারারাত যেনো শিকার আতঙ্ক, দিগন্ত ভরেছে কোনো ‘কেচ্ছার
দানবে’ এসে-  আর, দেখি তুমি নিজেই নিজেকে দিলে, আগ্নেয় ট্রমার খবর!

পৃথিবীকে আনট্যাগ করে, নিমপাতা-ঝিরিঝিরি-হাওয়ার ভিতর
একাধিপত্যে হাঁটি- এইবেলা তুড়ি বাজে, বৃদ্ধাঙুলে!

আর, যে সয়েছে দাহ, সুকুমার প্রয়াসে তার ছায়া দেয় মানচিত্র; হাঁটু মুড়ে
সম্মুখে তার, চুপ করে বসে থাকি আর সুশাসনে কামড় বসানো বাদুড়ের টক
শো দেখি, সেই ভালো!


বয়াতি
(কবি জুয়েল মাজহারকে)

সমস্ত গানের ভিতর এক এক করে ঢুকে যাচ্ছে রাস্তার হর্ন
আর, যে-দিকটাতে ঘাস ও বিচালির ঘরদোর, যেদিকে সামার গিয়ে দম নিতেছে বসে
সেই পাথারে দাঁড়িয়ে আমাদের স্বপ্ন, খুলে ফেলছে হেডফোন!

কেননা, এখানে হাওয়া নিজেই এক নিরন্ন বয়াতি
যার কাছে ভাটিয়ালি আর পল্লীর সরবতা এসে, বুক খুলে দেখিয়ে দিচ্ছে
ক্ষত ও স্রোতের নিদান!

সমস্ত জলবায়ু, তাকিয়ে রয়েছে দক্ষিণের জানালা খুলে!
তুমি কি স্থিরতা চাও? নাকি ঐশ্বর্যের কৃপা?

নাকি, পৃথিবীকে সুপার শপে হাঁটতে দেখে ফন্দি আটছো কোনো?
হাওয়ার ভিতর বাধ দিয়ে, সমস্ত রঙ পেন্সিল তুমি কেড়ে নেবে নাকি গ্রামের?
— • —



সাজ্জাদ সাঈফ। কবি। জন্ম ১৯৮৪ সালে
যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
এসএসসি ও এইচএসসি ঢাকায় এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়াতে। চিকিৎসা বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাবলিক হেলথ বিভাগে পোস্ট গ্রাজুয়েশন (থিসিস পার্ট অন অ্যাডিকশন সাইকোসিস এন্ড ইটস ডিজিজ প্রোসেস ইভ্যালুয়েশন ইন এসপেক্ট অফ মেন্টাল হেলথ সার্ভিস প্রোভাইডার সেন্টারস ইন বগুড়া সদর এরিয়া)।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা’ (২০১৭), ‘মায়ার মলাট’ (২০১৯), ‘ভাষার সি-বিচে’ (২০১৯, ভারত)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ