TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

শানু চৌধুরীর কবিতা

প্রচ্ছদ: নাজমুল হোসাইন   

 নৈতিকতা বিরোধী কবিতা


হে আমার আত্মা, আমাকে বাঁচাও
দুর্বলতার ভিতরে আমি দেখেছি শামুক
যে শামুক আহত ও ক্ষতবিক্ষত
আমি জানি এ আমার ভুল নয়
অনুমান করতে করতে পৌঁছেছি
আমার ইচ্ছে আর অনুদেশ জুড়ে।

আমার দিকে তাকাও, আত্মা
আমি লুকিয়ে বেড়িয়েছি সারারাত জুড়ে
প্রতিটা প্রাচীর থেকে নিয়েছি শিক্ষা
আমি ভুগছি! ফুরিয়ে যাচ্ছি
জীবন অনুসরণ করে।

চকমক করছে যে হৃদয় তার আসনে
রেখে এসেছি ব্লেড! যা আজ
আচরণ করছে ক্রীতদাসদের মতন
আমি কারো সঙ্গী হতে পারিনি, কিন্তু
সমস্ত ফুল বিরুদ্ধে যাচ্ছে আমার
আমার শৈশব থেকে গলে যাচ্ছে আশা,
উপেক্ষা করছে প্রাচুর্যের ঝিনুক।

কেন? আমার আত্মা, তুমি কি ঠিক আছো?
আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি
মরুভূমির বালিতে রেখে এসেছি নবীকরণ
অনুসরণ করো সকল অন্ধকার
যে ডাকছে মৃত্যুর দিকে
তাকে বন্ধহীন করো
ন্যায়ের উজ্বলতায়

ক্ষমা করো আমায়, আমার আত্মা।
আমাকে দোলা দাও যতক্ষণ ভালবাসতে পারি
আমি আমার বোঝা বয়ে সরিয়ে রাখতে চাইছি
আমার কাঠিন্য দ্যাখো। দেখতে পাবে
দুর্বল আর অতি দুর্বলের ফারাক।

ক্ষমা করো আমায়, আমার আত্মা।
ভবিষ্যতের বাণী ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আপ্লুত পাহাড়,যেখানে আমার প্রবেশ নেই
তবুও কেন যে মিশে যাচ্ছে উপত্যকা!

আত্মা তুমি দেখিয়ে দিয়েছ আমার মূর্খতা
সৌন্দর্যের ডালে বসে কিভাবে ভাসছে কাঠমল্লিকার স্বাভাবিক মধ্য স্বরলোপে
আমরা হাঁটবো, আলো আসবে বলে
আমরা হাঁটবো,অন্ধকার খুঁড়ে।

আমাকে উৎফুল্ল করো আমার শেষে এসে
বিপুল স্নানাগার থেকে অনুমান করে নিও
দানবিক তিজোরির নির্মিত ভেলা।
আমার দেহ ভুগছে, জীবনের হতবুদ্ধিতে।

তুমি চিরন্তনের দিকে এগোও,
দেহে খসিয়ে দ্যাখো সমান্তরাল পৃথিবীর তামরস
আমি অপেক্ষা করছি
দুঃখকে পাখির ঘরে ভরে দিয়ে।



করুণার দিকে এক ফোটা হবিষ্যির হাত,
পুতুল হয়ে আছে
মানুষ ভাবতে গিয়ে এই সময় ভারী হয়ে আসে পিঠ
নক্ষত্র ও আলতা ভরে নিয়ে চলে গেছে যে শব গাড়ি
তাদের চালকের আঙুলে পড়ে আছে নিবিড় শিষ
আমি জানি মন্ত্রের আগে গঙ্গা ছড়িয়ে আছে,
জলের আগে ছড়িয়ে আছে বিভোর বিছানা-বালিশ
তবু কেন কৌপীন খুলে ভিজে যাচ্ছে অনন্তদিনের বোতাম



আলো থেকে খেলা করছে স্নায়ুপরিধি
অথচ যে গ্রামের বুকে মৃত মালসার স্তূপ
তার মসৃণ পিঠে জমে আছে
দিশি মদের রোগশয্যা
একদিন তুঁতেচাষীরা এল, পরিষ্কার করলো,
মাঠ থেকে পোড়া প্রকৃতির মল-মূত্র ও ধ্বনি
আর এভাবেই ভাঙতে ভাঙতে
আমার চোখে উঠল
শেষ পৃথিবীর উড্ডীন গ্রন্থাগার



নির্মম দারুচিনি অথবা বিষন্ন খড়ম
গলে পড়ছে কাবেরী হাওয়ায়
একদা টিনের জিভ যেভাবে রেখেছিলে ঠোঁটের আগায়
তা বিলুপ্ত হচ্ছে আজ, বন্য শিয়ালের তছনছ করার মতন
তবু রাত নামে, ধূসর কুয়াশায় ভারী হয় কান
আর আমরা শুনতে পাই
অমরত্বের থলি থেকে উড়ে আসা
শিশির মাখানো সুদে জর্জরিত ফুলকপি বাগান



ঝুমো হাওয়ায় ছড়িয়ে যাচ্ছে সকাল
আর খাকি পোশাকের তলদেশে ফিরে আসছে
আমাদের সুগন্ধি ভরা কবর
যন্ত্রণা আমাদের কৃচ্ছ্রের তৃপ্তি দিচ্ছে না
তবু মাবরুকের শব্দসংগীত বেজে যায় একটানা
পরিক্রমণের ভ্রমণে আমি ছিটিয়ে দেখেছি অগরু
যার অবসন্ন শিকড়ে বাঁধা আছে,স্থুল গ্রামীণ মানত



শানু চৌধুরী। কবি ও গদ্যকার। জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। লেখাপড়া ইংরেজি সাহিত্যে। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘আলো ও আত্মহত্যা’ (২০১৯)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।