তিব্বত স্নো
মেয়েটি গায়ে তিব্বত স্নো মাখতো। ধর্ষণের পর পুতে রাখা হয়েছিল ধানক্ষেতে। মাসতিনেক পর ধান পাকলো। কৃষক ধান কেটে ঘরে তুললো। ধান থেকে চাল হলো। চাল থেকে ভাত।
কৃষক ঘরে বসে ভাপওঠা গরম ভাত খাচ্ছে। তিব্বত স্নো’র গন্ধে ঘর ভরে যাচ্ছে...
নিয়তি
টমেটো ক্ষেতে একটি টমেটো পেঁকে লাল টকটকে। একটি শালিক উড়ে এসে বসলো তার পাশে। টমেটো তো ভয়ে আধখানা। শালিকটি আলেতো করে ঠোঁট ছোয়ালো টমেটোর গায়ে। টমেটোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। যেই শালিকটি বড় একটি ঠোঁকর দিতে যাবে তখনি ঠাস করে একটি গুলি এসে লাগলো গায়ে। লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। বন্দুক কাঁধে লোকটি এসে নিয়ে গেলো শালিকটাকে। টমেটো ভাবলো, জগতে এখনো বিচার আছে। অপরের অনিষ্ট করতে গেলে এভাবেই ধরা খেতে হয়।
খানিকবাদে বন্দুক কাঁধে লোকটি আবার এলো। হ্যাচকা টানে ছিড়ে ফেললো টমেটোটি।
শালিকটিকে আগুনে ঝলসানো হচ্ছে। সাথে টমেটোর সালাদ...
জাদুর বাকসো
মুন্না একজন ছিন্নমূল কিশোর। রাস্তায় রাস্তায় কাগজ টোকায়। একদিন কাগজ টোকাতে টোকাতে একটা জাদুর বাকসো পেয়ে গেলো। বাকসের ভেতর নষ্ট-পঁচা কিছু দিলেই তা ভালো ভালো খাবার হয়ে যায়। যেমন, পঁচা কমলা দিলেই হয়ে যায় টাটকা অরেঞ্জ জুস! নষ্ট আলু দিলেই হয়ে যায় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই! নষ্ট পাউরুটি দিলেই হয়ে যায় বার্গার! ফেলে দেয়া মাংসের হাড় দিলেই হয়ে যায় সুস্বাদু কাবাব!
একদিন বাজারে গিয়ে মুন্না দোকানীর চোখ ফাঁকি দিয়ে একমুঠো চাল নিয়ে এলো। তারপর বাকসের মধ্যে বারবার চাল দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে। কিছুতেই আর ভাত হচ্ছে না...
দৃষ্টি
আমি যে বাসে অফিস থেকে ফিরি সে বাসে আমার পরের স্টেশন থেকেই প্রতিদিন দুজন মাঝবয়সী মহিলা ওঠেন। দুজনের চোখেই কালো চশমা, হাতে ছড়ি। অন্ধ বলে বাসের হেলপার দুজনকে ধরে এনে সীটে বসিয়ে দেন। একদিন দুজনকে ঠিক আমার সামনের সীটটাতে এনে বসালো। দুজন কথা বলছেন-
—দেখলেন তো মোজাম্মেল সাহেব আজ কি ব্যাবহারটা করলো
—১৫ বছর ধরে তো একই জিনিস দেখছি
—এলোমেলো জিনিসটা আমি একদমই দেখতে পারি না
—আমিও। দেখেন না, আমার ডেস্কটা কীভাবে গুছিয়ে রাখি
—আপনার টেবিলের মানিপ্লান্টটাতে আজ পানি দিয়েছিলেন
—সেকী আর আমি ভুলি। আজ দেখি দু’টো নতুন পাতাও গজিয়েছে
—তাই! আমাকে কাল দেখাবেন কিন্তু
কথা বলতে বলতে একজনের নামার সময় হয়ে গেলো। হেলপার এসে বললো, চলুন এসে পড়েছি। মহিলা যেতে যেতে বললেন-
—আসি, কাল আবার দেখা হবে
হরফ
আজিজ স্থানীয় বাজারে ঝালমুড়ি বিক্রি করে। মুড়ি, চানাচুর, মশলা, ঠোঙা সব সে বাড়িতেই বানায়। মানুষ লাইন ধরে তার মুড়ি কেনে। হাটবারে বেশি ভীড় থাকে বলে ছোট ছেলেকেটাও সাথে নিয়ে আসে। একদিন হাটবারে বিক্রি বেশি হওয়াতে ঠোঙা প্রায় শেষের দিকে। আজিজ ছেলেটাকে বাড়ি পাঠালো দ্রুত কিছু ঠোঙা বানিয়ে নিয়ে আসতে।
কিছুক্ষণ পর ছেলেটি বেশ কিছু ঠোঙা বানিয়ে নিয়ে এলো। ঠোঙার কাগজে আরবী লেখা দেখে আজিজ ছেলেকে একটা থাপ্পার মারলো-ছিঃ, আরবী লেখা কাগজ দিয়ে কি কেউ ঠোঙা বানায়?
ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে বলে-আমি কি করব। মাদ্রাসার হুজুরই তো এই কাগজগুলোই বিক্রি করে গেলো!
অপু মেহেদী। জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭, ভাঙ্গা, ফরিদপুর। রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। থিয়েটার করেন, কবিতা ও নাটক লিখেন। পেশাগত জীবনে একটি উন্নয়ন যোগাযোগ সংস্থায় কর্মরত।
প্রকাশিত বই:
‘ঘুমের প্রেসক্রিপশন’ (কবিতা),
‘রবীন্দ্রনাথ এন্ড কোম্পানি’ (নাটক),
‘উনপুরুষ’ (নাটক)
সম্পাদনা:
‘দ্রোহ দাহ স্বপ্নের মামুনুর রশীদ
গারদ’ (ছোট কাগজ)।
প্রকাশিত বই:
‘ঘুমের প্রেসক্রিপশন’ (কবিতা),
‘রবীন্দ্রনাথ এন্ড কোম্পানি’ (নাটক),
‘উনপুরুষ’ (নাটক)
সম্পাদনা:
‘দ্রোহ দাহ স্বপ্নের মামুনুর রশীদ
গারদ’ (ছোট কাগজ)।
4 মন্তব্যসমূহ
পড়লাম৷ ভালো লেগেছে৷ আরও পড়তে চাই৷
উত্তরমুছুনসুন্দর
উত্তরমুছুনদারুণ
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো
উত্তরমুছুনমন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।