TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

ছয়টি কবিতা | রিগ্যান এসকান্দার




আমার তখন কিশোর। সুফিয়া খালার বিয়ের বয়স পার। সুফিয়া খালার মুখে হাসি নেই। আমরা কবিরাজ বাড়ি যাই। সুফিয়া খালা সুন্দরী। এ মেয়ের বিয়ে আটকে গেছে, নিশ্চয় কোনো পুরুষের যাদুটোনা, কবিরাজ জানায়।

সাতটা পাথর সুফিয়া খালার হাতে। পুরনো কবরের ওপর সাত দিন ফেলতে হবে। সুবাহ্ সাদিকে। কবরস্থানে কোনো নারী যেতে পারে না। আর সুফিয়া খালা কোনো পুরুষে বিশ্বাস পায় না।
প্রতিদিন একটা করে পাথর সুফিয়া খালা আমার হাতে দেয়। আর আমি একটা করে পাথর পকেটে নিয়ে কবরস্থানে যাই। সপ্তম দিনে সপ্তম পাথরটা পকেট থেকে বের করে দেখি, অবিশ্বাস্য! পাথরটা গোলাপ হয়ে গেছে। পাথর ছোড়া হয় না আমার আর। আমি গোলাপ হাতে  ফিরে আসি, সেদিন শুক্রবার।

কবিরাজ বলেছিল, সাতটা পাথর ছুড়ে মারা শেষ হলে তারপর বিয়ের বার্তা আসবে। এ বিশ্বাসে সুফিয়া খালা গোলাপ হাতে হাসে। আর সুফিয়া খালাকে আমার ফিল্মের নায়িকার মতো লাগে।




তোমায় আমি চেয়েছিলাম গভীর জীবন
হালকা হাতে ফসকে গেলো বালক লাটিম।

লুডু খেলার ভরদুপুরে শুধু আমায় সাপে কাটে
ভাগ্যরেখা লেপটে থাকে মল্লিকাদির যত্নহাতে।

মল্লিকাদি চশমা পরে।
মল্লিকাদি ছাদে ওঠে।

আমি তখন বয়ের ভাঁজে ময়ূর পেখম
আমি তখন মাছধরা ছিপ বড়শি বয়স।

হঠাৎ করে হারিয়ে গেলাম মল্লিকাদির হলুদ দিনে
বিশদভাবে হারিয়ে গেলাম মল্লিকাদির বিয়ের ভিড়ে।

তোমায় আমি চেয়েছিলাম গভীর জীবন
হালকা হাতে ফসকে গেল বালক লাটিম।




আমার দুচোখের দুই নাম-ফাল্গুন,চৈত্র
পাশাপাশি এ দুচোখ যখন তোমাকে দেখে
তখন তোমার একটাই পরিচয়-‘বসন্তকাল’।




আমার ধ্যানরত যৌবন তোমাকে প্রার্থনা করে।
তোমাকে প্রার্থনা করে সুরমা আতর রাত।

তুমি নাজিল হও
দেহপুস্তক খুলে পাঠ করি গায়েবি আয়াত।
তুমি নাজিল হও
মনগৃহ খুলে শিখে নিই তাসের মারিফত।




তোমার শরীরে যখন নির্বাচনী হাওয়া, মনে রেখ হে প্রিয়তমা
তোমার হাত-পা-চোখ-কান-মুখ ও বুকের কাছে
আমি আমার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে দেব।




চৌহদ্দিতে লাগাইয়া চন্দ্রমল্লিকা,
এসকান্দারে কহে–
পিরিতে গাহন করো গোত্র ভুলিয়া।

বারান্দায় বসে ভজি বাতুল তত্ত্বকথা
উঠোন চয়ন করুক উপচিত চন্দ্রিমা।

আদমকণ্ঠে তুলে নাও হৃদবিধুননগীত
মানবগৃহ হোক ওহে পিরিতবিদ্যাপীঠ

বাতিল হউক সবি– যত বিথানবিদ্বেষ
এসকান্দারে ভনিলো কাব্য, শাস্ত্রবিশেষ।


রিগ্যান এসকান্দার। কবি।
জন্ম ১২ জুন ১৯৮৩ কুষ্টিয়া জেলায়। বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়।
বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক।
প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘নারীগদ্য’ (২০০৭), ‘প্রেম কবলিত প্রসব’ ( ২০১৪)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. আহা, কী অসাধারণ লাগলো----"
    তুমি নাজিল হও
    দেহপুস্তক খুলে পাঠ করি গায়েবি আয়াত"

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।