TopTime

আজ ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

'আমার লেখা আর কারো মতো নয় বলেই আমাকে পড়া দরকার'— সরদার ফারুক


সরদার ফারুক। প্রধানত কবিতা লেখেন। পাশাপাশি  গল্প ও প্রবন্ধে বিচরণ রয়েছে। বর্তমানে একটি উপন্যাস লিখছেন। জন্ম ১৯৬২ সালের ০৯ নভেম্বর কপোতাক্ষ নদের তীরে খালিশপুরে। পৈতৃক নিবাস বরিশালের কাশিপুর। পেশায় চিকিৎসক। ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বরিশালে ঘাট শ্রমিকদের আন্দোলন, ডেমরায় শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ সংগ্রাম ও বাজিতপুরে জেলেদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন।
নব্বইয়ের ছাত্র-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক। স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত রাখার জন্য সরকারী চাকরি ছেড়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৮৮৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন।
১৯৮০ সালে বরিশালের অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক 'লোকবাণী' পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে শামসুর রাহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দৈনিক দেশ, সংবাদ এবং দেশবিদেশের নানা পত্রপত্রিকা ও সংবাদ সাময়িকীতে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সরদার ফারুকের প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: 'আনন্দ কোথায় তুমি', 'পড়ে আছে সমুদ্র গর্জন', 'উন্মাদ ভূগোল', 'দিপালী অপেরা', 'ও সুদূর বীজতলা মঠের গম্বুজ', 'দূরের জংশন', 'অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি', 'খেলছে একা নীল বিভঙ্গ', 'নির্বাচিত কবিতা', 'ওঁ মধু ওঁ শাশ্বত পরাগ', 'দিন কাটে পালকের শোকে', 'সিংহাসনের ছায়া', 'যূথিকা নার্সারি', 'গীর্জার ঘণ্টার মতো উদাসীন', 'দ্বিতীয় সংসার' 'দাসীর বাজারে'।
গল্পগ্রন্থ: 'নোনা শহর'।
জলনূপুরকে সাক্ষাৎকার দেয়ায় কবির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।


জলনূপুর: কেমন আছেন? একজন লেখকের অতৃপ্তি মানুষ হিশেবে ভালো থাকা-না-থাকায় কতটা প্রভাব রাখে?

সরদার ফারুক: ভালো আছি। অবশ্যই প্রভাব রাখে। লেখক মানেই ভিন্ন জগতের কেউ নন।

জলনূপুর: আপনার লেখক জীবনের প্রাপ্তি কী কী? এগুলোর মধ্যে কোন প্রাপ্তিটাকে আপনার সেরা মনে হয়?

সরদার ফারুক: এই যে আমার সাক্ষাৎকার চাইলেন, এটাও একধরনের প্রাপ্তি। অসংখ্য অচেনা পাঠকের ভালোবাসা পেয়েছি, আর কী চাই?
গতবছর এক তরুণী ইনবক্সে একটা ছবি পাঠিয়েছিলেন। তিনি কলকাতা বইমেলায় আমার ‘দিন কাটে পালকের শোকে' বইটি কিনেছেন।
ছবিটিতে দেখলাম তিনি তার এক বন্ধুর সঙ্গে লাইটপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে বইটি পড়ছেন। এটাই আমার কাছে সেরা প্রাপ্তি মনে হয়।

কোনো প্রনোদনা ছাড়া লেখা চালিয়ে যাওয়া কঠিন বলে মনে হয়, কখনো কখনো অসম্ভব

জলনূপুর: আপনি তো কয়েক দশক ধরে লিখছেন। ধরুন, আজ পর্যন্ত কোনো প্রাপ্তি নেই আপনার। আমি পুরস্কার, স্বীকৃতির কথা বলছি না অবশ্য। সাধারণ প্রাপ্তিও না থাকলে আপনার লেখালিখি থেমে যেত কি? না অন্যদিকে মোড় নিত?

সরদার ফারুক: সব লেখকেরই কিছু না কিছু প্রাপ্তি থাকে, অন্যদের কাছে সেটা যতো তুচ্ছই হোক।
কোনো প্রনোদনা ছাড়া লেখা চালিয়ে যাওয়া কঠিন বলে মনে হয়, কখনো কখনো অসম্ভব।

জলনূপুর: আপনার লেখালেখির উদ্দেশ্য কী?

সরদার ফারুক: নিজেকে সবার সঙ্গে যুক্ত করা।

আমার লেখা আর কারো মতো নয় বলেই আমাকে পড়া দরকার

জলনূপুর: আপনার কবিতা কেন পড়া দরকার?

সরদার ফারুক: আমার লেখা আর কারো মতো নয় বলেই আমাকে পড়া দরকার।

জলনূপুর: আপনি কবিদের দশক দিয়ে বিভক্ত করার পক্ষপাতী?

সরদার ফারুক: এটার কোনো প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ নিজের নামটা টিকিয়ে রাখার জন্য এই কাজটি করে।

জলনূপুর: প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকের কবিতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? নব্বই ও শূন্যের কবিতা থেকে এসব কবিতা আলাদা করার মতো উপাদান বা বৈশিষ্ট্য আপনার পাঠে ধরা পড়েছে?

সরদার ফারুক: দশকওয়ারী তুলনাটাও আমার পছন্দের নয়। সবসময়েই অল্প কিছু ভালো লেখা দেখতে পাওয়া যায়।

জলনূপুর: আপনি যে উপন্যাসটি লিখছেন সেটা সম্পর্কে কিছু বলুন। কতদূর এগিয়েছে? কবে নাগাদ প্রকাশ হবে?

সরদার ফারুক: সময়ের ছোবলটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করছি। লেখাটা মনে মনেই বেশি লিখেছি। ফেব্রুয়ারির বইমেলায় বেরোনোর সম্ভাবনা আছে।

জলনূপুর: আপনি দীর্ঘদিন ধরে শুধু কবিতাই লিখছেন। হঠাৎ গদ্য লেখার ইচ্ছে কেন হল?

সরদার ফারুক: গদ্য সবসময়ই লিখেছি। প্রকাশিত হয়েছে কম। ২০১৭ সালে আমার গল্পগ্রন্থ ‘ নোনা শহর’ বেরিয়েছে।

জলনূপুর: নিজেকে কোথায় দেখতে পান— কবিতায় না উপন্যাসটিতে?

সরদার ফারুক: দুটোতেই তো সেই আদি ও অকৃত্রিম আমি।

জলনূপুর: একজন লেখকের ব্যক্তিত্ব কেমন হওয়া উচিত? এক্ষেত্রে আপনি কি ব্যক্তিত্ব, ইগো, আত্মবিশ্বাসকে এক করে দেখেন?

সরদার ফারুক: প্রত্যেকটি মানুষই আলাদা, প্রতিটি লেখকও। প্রত্যেক ব্যক্তিরই পৃথক ব্যক্তিত্ব থাকে, কোনো নির্দিষ্ট ছকে লেখক কেন,
কাউকেই বেঁধে ফেলা যায় না।
ইগো আর আত্মবিশ্বাস ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আত্মবিশ্বাস থাকতেই হয়, ইগোও সহনীয় মাত্রায় থাকতে পারে।
এটা বেড়ে গেলে ডিসঅর্ডার দেখা দেয়। ধন্যবাদ। জলনূপুরের জন্য শুভকামনা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ