বয়ান: ০১ -এর পর:
কবীর রানা নামের ছেলেটি কীভাবে যেন আমার গল্পে উঠে আসে। কবীর রানা আমার পিছু ছাড়ে না। আযৌবন, আজীবন সে আমাকে তাবিজ করে রাখে। যখন তাকে পাঠ করি, যখন তাকে নিয়ে লিখবো বলে ভাবতে থাকি তখন লিখতে পারি না। কেননা তার লেখা নিয়ে লিখলেও শেষাবধি আদৌ তাকে লিখে ফেলা যায় না। তাকে লিখতে হলে লিখতে হবে তার অব্যক্ত অনুভব, যা আমি আভাসে প্রতিভাসে তাকে ছুঁয়ে দিয়ে চেখে দেখতে গিয়ে বারবার ব্যার্থ হয়েছি। কেননা লেখাকে পাঠ করে ফেলা সম্ভব হয়ে উঠলেও লেখককে পাঠ করা হয়ে ওঠে না আজীবন। এটা অসম্ভব। ফলে কবীরকে আমি লিখতে পারি না। আমি যন্ত্রণায় বিবেকের তাড়নায় নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হতে হতে কবীরের কাছে ছুটে যাই। ছুটে যাই এক রাতের জন্য। ছুটে যাই মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য। আর এই অবাক কয়েকটি ঘণ্টাই হয়ে ওঠে অলৌকিক। হয়ে ওঠে অপ্রাপ্ত জীবনের ইশারা। অলৌকিক ভ্রমণ। কবীর রানার মুখোমুখিতে তাকে জানার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা করি, থই পাই না। সারাজীবনের বন্ধু সেই কবীর রানা যখন গল্পকার কবীর রানা হয়ে ওঠে তখন সে অচেনা হয়ে উঠতে থাকে; তাকে ঠিক ঠাহর করতে পারি না, পারি না তার লেখার তলানি ছুঁয়ে দিতে।
কবীর রানা লাজুক, আজীবন স্বল্পভাষী, গোপনচারি, আড়ালে থেকে কিছুটা বা অভিমান মেশানো অহঙ্কারে অসম্ভব রকমের বিনয়ী আর পড়ুয়া এক মানুষ যে কিনা বচনে কখনো ভাড়ামো প্রকাশ করে না। অযথা অনপোযুক্ত আত্ম-অহম প্রকাশে তার রুচি নেই, রুচি নেই নিজেকে প্রকাশের। অথচ কবীর রানা প্রিয়জনদের কাছে আত্মমগ্নতায় অবাক বিস্ময়ে বলে বেড়াতো সে নাকি তার জীবনে জীবন্ত কবি দেখেছে; বলে বেড়াতো কবির সঙ্গে রাত কাটানো অর্থ অচেনা এক ভরাট পৃথিবীর সঙ্গে রাত কাটানো। অথচ আমার সেই সময়ের কবিতাগুলো কী বালখিল্য আবেগেই না হিমশিম খেতে খেতে এগিয়ে যেতো ক্রমশ ড্রেনের দিকে, ড্রেন থেকে ফুলের দিকে; যে ফুলগুলো আমার ভিতর বেঁচে বর্তে থাকলেও কবিতার খাতায় তা ক্রমশ পচে উঠতো। তারপর আমি আর কবীর রানা জীবনের এমন অজস্র পচে ওঠা জীবনকে লেখায় আটকে নিয়ে অবহেলায় ছড়িয়ে ফেলতাম অথবা ইচ্ছে করে হারিয়ে ফেলতাম সেইসব কবিতা, সেইসব গল্প, সেইসব মুক্ত গদ্য।
সেইসব আবেগ-আক্রান্ত পচতে থাকা লেখার অজস্র কাগজের ছবি যখন মগজে ভেসে উঠতে থাকে তখন রাজধানী ঢাকায় রেখে আসা জীবনের ভিতর ক্রমশ ডুবতে থাকি। ডুবতে থাকি আর ক্রমশ চিন্তনে হাবুডুবু খাই, অনুভব করতে পারি কবীর রানা গল্প লিখছে না, লিখছে চিন্তা; আমারই জমজ।
অসম্ভব রকমের চিন্তা প্রদায়ক চেতনাস্রোতকে প্রকাশ করতে গিয়ে কবীর রানা প্রথাকে ভেঙে ভাষাকে এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছে মাটির উঠোনে। কুয়াশার মায়াবী চাদরে মুড়িয়ে এগিয়ে নিয়েছে তার লেখাকে। যাকে সে গল্প বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে আমাদের সঙ্গে তাকে ঠিক গল্প বলা যায় কিনা এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হওয়ার অবকাশ তৈরি করে দেয় কবীর রানার লেখাগুলো। আমি বলতে ইচ্ছুক, বন্ধুর জন্য বলছি না বা নিন্দা করছি না মোটেও, বরং দায়িত্বশীল নিরপেক্ষ সৎ অনুভব থেকেই বলছি, কবীর রানার গল্প (?) আরে ওই সমস্ত লেখাকে কি আর গল্প বলা যায়, যাকে ঠিক ছোটগল্পের সংজ্ঞা দিয়ে আটকে রাখা যাচ্ছে না; কবীর রানার ওই লেখাগুলো তো গল্পের মতো সামান্যতে আটকে নেই; ওইগুলো তো কবিতার মতো মুক্ত চিন্তনের আকাশে আপনাকে আমাকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করেছে। আর আজব অজস্র অবাক কথার ভিড়ে আমরা হাবুডুবু খেতে খেতে অবশেষে দেখতে পাই জীবন কী ভয়ানক এক জান্তব খেলা, লুকোচুরি আর অব্যক্ত ভালোবাসার ইশারা, অবাক বেদনার ক্ষরণ।
এই ক্ষরণ কবীর রানা তৈরি করে নেয় আশেপাশের মানুষদের সহযোগে। কথায় কথায় বোঝা গেলো কবীর রানা শিল্প বলতে বোঝে শতভাগ তৈরি আরোপিত আয়োজন, কল্পনার বিস্ময়কর উদ্ভাসন, ভাষার সম্ভাবনাময় ফিউশন; কখনো বা আগেভাগে কোনো কল্পনা বা পরিকল্পনা নয় বরং ভাষা ভেঙে ভাষাকে এলোমেলো ছুটিয়ে দিয়ে নতুন অর্থ ও চিন্তার আবিষ্কার। তৈরি হতে থাকে নিত্যনতুন চিত্রকল্প, যে চিত্রকল্পগুলোর ভিতর চরিত্রগুলো কথা বলে চিন্তাস্রোতের আশ্রয়ে, সংলাপবিহীন, পারিপার্শ্বিকতা আশ্রিত। কবীর বলছিল আখ্যান নির্মাণ করে সংলাপের মধ্য দিয়ে বাস্তবতার ডিটেইলে যাওয়া তার কাজ না, ওই জায়গাটা কবীরের না, ওই ক্ষমতাটা তার জন্য নয়, ওইগুলো গতশতকের ভাষা, সেখানে ফিরে যাওয়া অর্থাৎ পিছিয়ে যাওয়া কবীরের পক্ষে সম্ভব নয়, আশেপাশের অধিকাংশ লিখিয়েগণ যে কাজগুলো বরাবরই করে আসছেন, গত শতকের ভাষায় লিখে বাহবা কুড়াচ্ছেন বিস্তর। আখতারুজ্জামান তো গত শতকের ভাষায় লিখে সফল হয়েছেন, ওই পথে আবার হাঁটতে হবে কেন (?) বরং আমি বা আমরা গল্প থেকে সরে এসে প্রবেশ করতে চাই চিন্তার জগতে।
সঙ্গত কারণেই কবীরের গল্পের পাত্রপাত্রি ডিটেইলসে প্রবেশ করে না; প্রতিষ্ঠা পায় না কবীরের গল্পের আখ্যান-বাস্তবতা। বরং কবীরের গল্পের ঘটনাক্রম পরম্পরা মানতে বাধ্য থাকে না, কবীরের গল্পের আয়োজন কল্পনাজগত আর চৈতন্যের অনিবার্য প্রকাশ। কবীরের গল্পে অমীমাংসিত জীবনের অনিবার্য অভিঘাত বাস্তবতা পায় শব্দের সঙ্গে শব্দের ফিউশনে, চিন্তা থেকে চিন্তনের আঘাতে। যেমন ধরুন আমরা পাঠ করতে থাকি, ‘আকাশ বেয়ে সেই চাঁদ যখন উঠছিল, গল্প ঘটছিল তার আশেপাশের সময়ে; আমাকে নিয়ে, বার্কিকে নিয়ে। ইতিহাস দেখতে বেরিয়েছিলাম আকাশ বেয়ে চাঁদ উঠবার কালে। আমাদের পায়ের নিচে ইতিহাসের ভাঙন, আমরা হাঁটছিলাম, বর্তমানে; দু’জন-- বার্কি, আমি। [...] এভাবে বললে পায়ের ছন্দে কিছু মিথ্যা ঢুকে যায়। [...] এই সকালে কুয়াশা ঘাস খাচ্ছিল। চাইলাম কুয়াশা আমাদের পা খাক। [...] আমরা তখনো দাঁড়িয়ে থাকলে একজন চাষী রহস্যের জিব খোলে। [...] তার জলের ভেতর তখন শোনা যায় অজস্র মাছের নড়াচড়া। মাঝে মাঝে ঢাকের আওয়াজও শোনা যায় জলের গভীরে।’ [জল আসে মানুষের দীঘিতে] -- এইভাবে, ম্যাজিক রিয়ালিজম। লজিক নয়, ম্যাজিক। ম্যাজিক-আশ্রিত লজিকের সূত্র ধরে চিন্তা পরম্পরায় উঠে আসতে থাকে অতীত থেকে ভবিষ্যৎ অভিমুখি সামষ্ঠিক মানব-অভিজ্ঞান।
কবীর রানার প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশ পায় ২০১২ সালে, শিরোনাম, ‘জল আসে মানুষের দীঘিতে’। ফ্লপিতে লেখা আছে, ‘গল্পের বিষয় ও ভাষা উভয়ই কবীর রানার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিষয় তার চেনা মানুষ। আর এ চেনা মানুষের প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা তার কাছে সংকেতের মতো। কবিতার ভাষার যে ইঙ্গিতময়তা তা এসেছে তার গল্পসমূহে। কবিতার অনায়াস যাত্রা ঘটে তার গল্পের গৃহসমূহে। এ গ্রন্থের গল্পগুলো একই সঙ্গে অনুভব ও চিন্তা প্রধান। মানুষের বাস্তব আর স্বপ্নের ছবি।’
আগামী বছর অর্থাৎ ২০২০ এর একুশের বইমেলায় কবীর রানার পঞ্চম গল্পগ্রন্থ প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। বইটির শিরোনাম, ‘কোথায় কোথায় ঘুমিয়েছিলাম’। শিরোনামে চোখ রেখে ভাবতে হচ্ছে। সমান্তরালে উঁকি দিয়ে যায় হারুকি মুরাকামির ‘আফটার ডার্ক’। যেখানে এরি আসাই এবং মারি আসাই দুই বোন। বড়ো বোন এরি আসাই ঘুমোতে যাই বলে সেই যে ঘুমোতে গেল তারপর দুই মাস হল সে আর জাগছে না; ঘুমের মধ্যেই খাওয়া চলা ওয়াশরুমে যাওয়া। লাভ হোটেলের পরিচারিকা কোরোগির ধারণা, এরি কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সমাধান পাচ্ছে না, তাই ঘুমিয়ে আছে, সমস্যাটা নিয়ে চিন্তা করতে চায় না, সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চায়, পক্ষান্তরে দূরে থাকতে চায় কর্পোরেট লাইফ থেকে। এই যে ক্রমশ আমরা দূরে সরে যাচ্ছি, একজন আরেকজন থেকে, চেনাজানা জগতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে চাই, এই ঘুম এই শতকের রূপক হয়ে যখন আমাদের আক্রমণ করে তখন আগ্রহ জাগে কবীর রানার ঘুম ঠিক কেমন রূপক হয়ে জেগে উঠবে, কীভাবে জাদুর কাঠির আঘাতে আমাদের ব্যাতিব্যস্ত করে তুলবে, কীভাবে আমাদের চিন্তা এবং আকাঙ্ক্ষাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে।
১৯৮৭-৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীম উদ্দীন হলের বিছানায় দুই বন্ধু যে গল্পগুলো নিয়ে ক্রমাগত নিজেদের প্রকাশ করতাম, রানা তার সেই সময়ের লেখায় যে অনুভবগুলো শোনাতে থাকতো আজ এতোগুলো বছর পিছে ফেলে এসে আমি কবীরের সেই লাজুক-সন্ত নিম্নমুখো আওয়াজ, স্বগত উচ্চারণ শুনে স্মৃতি-কাতরতায় জীবন-কাতরতায় মানুষ-কাতরতায় কেবলি শিউরে উঠতে থাকলে মগ্নবোধে বুঝতে পারি মানব-ভাষার কী অপার সম্ভাবনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কবীরের গল্পের সত্ত্বায়, কবীরের গল্পের আত্মায় ও শরীরে। দীর্ঘশ্বাস আর লাজুক-হাসি মিশিয়ে কবীরের লেখা কথা বলতে থাকে আমার সাথে।
কবীরের গল্পের আবেগ লুক্কায়িত ও নিয়ন্ত্রিত। কবীর জানে কীভাবে আবেগকে কেটে ছেটে নোতুন করে জীবন দিতে হয়; কীভাবে ব্যক্তি আবেগকে গোষ্ঠী আবেগে পালটে দিয়ে চিন্তাকে লাগসই নিয়ন্ত্রণে রেখে পাঠককে ব্ল্যাকমেইল করতে হয়। সমকাল শুধু নয় বরং আগামীর পাঠককে ব্ল্যাকমেইল করার অনুভব-দর্শন কবীরের চেতনায় ক্রিয়াশীল। ফলে সঙ্গত কারণেই কবীরের গল্প শুধু প্রাত্যহিক কাহিনির ভিতর আটকে না থেকে কাহিনি থেকে নিজেকে মুক্ত করে চিন্তার জগতে পাঠককে নিয়ে যেতে বাধ্য করে না, বরং পাঠক বুঝতেই পারে না কীভাবে কীভাবে কবীরের বাকরীতির হাত ধরে হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে পাঠক হাজির হয়েছেন এক দুর্নিবার চিন্তার জগতে; যে জগৎ থেকে পাঠকের মুক্তি নেই। কেননা সেই চিন্তা পক্ষান্তরে পাঠকেরই চিন্তা; সেই চিন্তন পাঠকের অনুভবের জমজ। এইভাবে ক্রমশ কবীর রানা স্বয়ং পাঠকের চেতনার জমজ হয়ে উঠতে থাকলে কবীরকে ভালোবেসে দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে দেই অমীমাংসিত জীবনের ওপর। কবীর রানা কেন যে জীবনকে এইভাবে দেখতে শেখায়, যে জীবন স্বস্তিবিহীন, যে জীবন অসম্পূর্ণ।
আসলে মানবজীবনের যাত্রাপথ চিরকালই অসম্পূর্ণ। অথচ এই অসম্পূর্ণ যাত্রাপথের ওপর দাঁড়িয়ে সমকালের লিখিয়েরা মেধাবী লেখককে কৌশলে দূরে সরিয়ে দেয়। এইটা মানব প্রজাতির হীন সহজাত রাজনীতির অংশ। মানুষ তো রাজনীতি আশ্রিত জীব, কূটচেতনা আশ্রিত জীব। তো কবীর রানা সেই রাজনীতিতে টীকে থাকার ক্ষমতা রাখে না। বরং তার ক্ষমতা হল তার চিন্তা; যে চিন্তাসমূহ চিন্তা-প্রকাশ-জ্ঞাপক ভাষায় এসে স্থিতি লাভ করেছে। কাজেই কবীর বাস করে স্থিতিতে, মগ্নতায় আর মানবজীবনকে দেখার সভ্যতাকে দেখার কাকচক্ষু দৃষ্টির ভিতর।
কবীর রানাকে পড়েছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ মেধাবীগণ পড়েছেন। অথচ টু শব্দটি করেননি। এটা তাদের অপকৌশল; গা পোঁড়ানি অভিব্যক্তির প্রকাশ। কথিত লেখকগণ পায়ে ঠেলে এগিয়ে যেতে থাকেন মেধাবীদের। কবীর রানার মতো মেধাবীদের নিয়ে তাদের ভয়। অধিকাংশ সময় প্রথাগত গল্পের ফরমেটের ভিতর থেকে সিরিয়াস ধারার নিরীক্ষাধর্মী গল্প পাঠের যোগ্যতাই তারা রাখেন না।
আমরা জানি মেধাবী লিখিয়েদের পাঠক, সাধারণ জনগণ নয়। অথচ এই জনসাধারণকে পুঁজি করে অধিকাংশ লেখকই হয়ে ওঠেন বিখ্যাত। এই খ্যাত লেখকগণ প্রথার বাইরে হাঁটতে ভয় পান, হাঁটার যোগ্যতাও রাখেন না, প্রথার বাইরের লেখা তারা বোঝেনও না। অথচ প্রথার বাইরে স্রোতের আড়ালে থেকে সিরিয়াস কাজ যারা করছেন তাদেরকে ইনারা ভয় পান, অবজ্ঞা করেন; সিরিয়াস ধারার লেখকদের আড়ালে রাখার ক্ষেত্রে ইনারা সরব ভূমিকা রাখেন। ইনাদের অধিকাংশই আবার পেইড বুদ্ধিজীবী হওয়ার সুযোগ লাভের আশায় চোখকান খোলা রাখেন, মঞ্চবাজিতে এগিয়ে থাকেন। ইনারা হরহামেশা পণ্ডিত হিসেবে নিজেকে জাহির করতে এগিয়ে আসেন, ইনারা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকতে গিয়ে ক্রমশ চতুর, সম্মাননা-পুরস্কারের আয়োজনে এগিয়ে থাকতে গিয়ে ক্রমশ লিঁয়াজোমুখর, ইনারা বই কাটতিতে এগিয়ে থাকতে প্রয়োজনে মিডায়াকে কিনে রাখার কারুকৌশলে সেলিব্রেটি।
অথচ যে গুটিকয়েক নিরীক্ষাধর্মী লেখক, যারা স্বভাবে ও লেখায় অসামাজিক, তাদেরকে নিয়েই তাদের যতো উদ্বেগ। না পড়েই অথবা পড়ার যোগ্যতা না রেখেই জনপ্রিয় ধারার লেখকগণ তাদেরকে ড্রেনে ছুঁড়ে ফেলতে ভুল করেন না। সাধারণ জনগণ মিডিয়াতে যে লেখকদের পেয়ে থাকেন তাদের পাঠ করে থাকেন। ওই মিডিয়া-আশ্রিত লেখকগণই তাদের কাছে ভালো লেখার নমুনা, সেগুলোই বিখ্যাত। আর এগিয়ে থাকা বিশ্বমানের পাঠক যারা আছেন তারা যখন মিডিয়াতে এগিয়ে থাকা লেখকদের পাঠ করেন, সঙ্গত কারণেই তখন তারা হতাশা বোধ করেন; তারা ভাবতে বাধ্য হন যে বাংলা ভাষায় কিছু হচ্ছে না। অথচ কবীর রানার মতো এপার বাংলা ওপার বাংলা মিলিয়ে বেশ কিছু লেখক আছেন তারা আড়ালেই থেকে যান, তারা পঠিত হন না। আর আমরা পড়ুয়াগণ ভালো কিছু হচ্ছে না বলে চিৎকার জুড়ে দেই, অথচ ভালো কিছুকে সামনে নিয়ে আনার দায়িত্ব কেউ গ্রহণ করি না। বিচিত্র সমাজস্বভাব, বিচিত্র লেখক রাজনীতি। তো এখনো এই বাকোয়াজির রাজনীতির বাইরে কবীর রানার মতো লেখক আছে যাদের কিনা তথাকথিত বিখ্যাত লেখক হবার অপকৌশল মেইনটেন করার মতো রুচি নেই। অথচ কবীর রানার মতো অনেকেই আড়ালে আড়ালে কাজ করে চলেছেন। আপনি একটু আধটু খোঁজ রাখুন, একটু আধটু তাদেরকে পাঠ করুন, হতাশ হবেন না, যদি আপনার পাঠযোগ্যতা থাকে।
[ধারাবাহিক: আগামী শনিবার পাওয়া যাবে বয়ান: ০৩]
শিমুল মাহমুদ। কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক।
জন্ম ৩ মে ১৯৬৭, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পাঠ গ্রহণ শেষে ইউজিসি-র স্কলার হিসেবে পৌরাণিক বিষয়াদির ওপর গবেষণা করে অর্জন করেছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
নেশা: অধ্যাপনা। পছন্দ: পাঠগ্রহণ, ভ্রমণ ও একাকিত্ব। অপছন্দ: মঞ্চলোলুপ আঁতলামো।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘মস্তিষ্কে দিনরাত্রি’ (কারুজ, ঢাকা: ১৯৯০), ‘সাদাঘোড়ার স্রোত’ (নিত্যপ্রকাশ, ঢাকা: ১৯৯৮), ‘প্রাকৃত ঈশ্বর’ (শ্রাবণ প্রকাশন, ঢাকা: ২০০০), ‘জীবাতবে ন মৃত্যবে’ (শ্রাবণ প্রকাশন, ঢাকা: ২০০১), ‘কন্যাকমলসংহিতা’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৭), ‘অধিবিদ্যাকে না বলুন’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৯), ‘আবহাওয়াবিদগণ জানেন’ (চিহ্ন, রাজশাহী: ২০১২), ‘কবিতাসংগ্রহ : সপ্তহস্ত সমুদ্রসংলাপ’ (রোদেলা, ঢাকা: ২০১৪), ‘স্তন্যপায়ী ক্ষেত্রউত্তম’ (অচেনা যাত্রী, উত্তর ২৪ পরগণা: ২০১৫), ‘বস্তুজৈবনিক’ (নাগরী, সিলেট: ২০১৬), ‘সমূহ দৃশ্যের জাদু’ (চৈতন্য, সিলেট: ২০১৮), ‘ভাষাদের শষ্যদানা’ (বেহুলা বাংলা, ২০১৯)।
গল্পগ্রন্থ: ‘ইলিশখাড়ি ও অন্যান্য গল্প’ (নিত্যপ্রকাশ, ঢাকা: ১৯৯৯), ‘মিথ মমি অথবা অনিবার্য মানব’ (পুন্ড্র প্রকাশন, বগুড়া: ২০০৩), ‘হয়তো আমরা সকলেই অপরাধী’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০০৮), ‘ইস্টেশনের গহনজনা’ (আশালয়, ঢাকা: ২০১৫), ‘নির্বাচিত গল্প’ (নাগরী, সিলেট: ২০১৬), ‘অগ্নিপুরাণ ও অন্যান্য গল্প’ (চৈতন্য, সিলেট: ২০১৬)।
উপন্যাস: ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনী’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৭), ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনী’ (ধানসিড়ি, কলকাতা: ২০১৪), ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনি’ (চৈতন্য সংস্করণ, ২০১৬), ‘সুইসাইড নোট’ (নাগরী, ২০১৯)।
প্রবন্ধ: ‘কবিতাশিল্পের জটিলতা’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০০৭), ‘নজরুল সাহিত্যে পুরাণ প্রসঙ্গ’ (বাংলা একাডেমী, ঢাকা: ২০০৯), ‘জীবনানন্দ দাশ : মিথ ও সমকাল’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০১০), ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ধারার কবিতা’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০১২), ‘মিথ-পুরাণের পরিচয়’ (রোদেলা, ঢাকা: ২০১৬)। তিন দশক যাবৎ সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের ছোট-কাগজ: ‘কারুজ’।
জন্ম ৩ মে ১৯৬৭, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পাঠ গ্রহণ শেষে ইউজিসি-র স্কলার হিসেবে পৌরাণিক বিষয়াদির ওপর গবেষণা করে অর্জন করেছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
নেশা: অধ্যাপনা। পছন্দ: পাঠগ্রহণ, ভ্রমণ ও একাকিত্ব। অপছন্দ: মঞ্চলোলুপ আঁতলামো।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘মস্তিষ্কে দিনরাত্রি’ (কারুজ, ঢাকা: ১৯৯০), ‘সাদাঘোড়ার স্রোত’ (নিত্যপ্রকাশ, ঢাকা: ১৯৯৮), ‘প্রাকৃত ঈশ্বর’ (শ্রাবণ প্রকাশন, ঢাকা: ২০০০), ‘জীবাতবে ন মৃত্যবে’ (শ্রাবণ প্রকাশন, ঢাকা: ২০০১), ‘কন্যাকমলসংহিতা’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৭), ‘অধিবিদ্যাকে না বলুন’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৯), ‘আবহাওয়াবিদগণ জানেন’ (চিহ্ন, রাজশাহী: ২০১২), ‘কবিতাসংগ্রহ : সপ্তহস্ত সমুদ্রসংলাপ’ (রোদেলা, ঢাকা: ২০১৪), ‘স্তন্যপায়ী ক্ষেত্রউত্তম’ (অচেনা যাত্রী, উত্তর ২৪ পরগণা: ২০১৫), ‘বস্তুজৈবনিক’ (নাগরী, সিলেট: ২০১৬), ‘সমূহ দৃশ্যের জাদু’ (চৈতন্য, সিলেট: ২০১৮), ‘ভাষাদের শষ্যদানা’ (বেহুলা বাংলা, ২০১৯)।
গল্পগ্রন্থ: ‘ইলিশখাড়ি ও অন্যান্য গল্প’ (নিত্যপ্রকাশ, ঢাকা: ১৯৯৯), ‘মিথ মমি অথবা অনিবার্য মানব’ (পুন্ড্র প্রকাশন, বগুড়া: ২০০৩), ‘হয়তো আমরা সকলেই অপরাধী’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০০৮), ‘ইস্টেশনের গহনজনা’ (আশালয়, ঢাকা: ২০১৫), ‘নির্বাচিত গল্প’ (নাগরী, সিলেট: ২০১৬), ‘অগ্নিপুরাণ ও অন্যান্য গল্প’ (চৈতন্য, সিলেট: ২০১৬)।
উপন্যাস: ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনী’ (ইত্যাদি, ঢাকা: ২০০৭), ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনী’ (ধানসিড়ি, কলকাতা: ২০১৪), ‘শীলবাড়ির চিরায়ত কাহিনি’ (চৈতন্য সংস্করণ, ২০১৬), ‘সুইসাইড নোট’ (নাগরী, ২০১৯)।
প্রবন্ধ: ‘কবিতাশিল্পের জটিলতা’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০০৭), ‘নজরুল সাহিত্যে পুরাণ প্রসঙ্গ’ (বাংলা একাডেমী, ঢাকা: ২০০৯), ‘জীবনানন্দ দাশ : মিথ ও সমকাল’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০১০), ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ধারার কবিতা’ (গতিধারা, ঢাকা: ২০১২), ‘মিথ-পুরাণের পরিচয়’ (রোদেলা, ঢাকা: ২০১৬)। তিন দশক যাবৎ সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের ছোট-কাগজ: ‘কারুজ’।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।