TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

'খেয়াড়ি' 'মায়াপাশ' ও অন্যান্য কবিতা | অরবিন্দ চক্রবর্তী


খেয়াড়ি

যদি দাঁড়াই, স্ট্রিটল্যাম্প বসে পড়বে; মেয়র প্রার্থীতা নেব না এ অব্দে।

এইটুকু চাওয়া যায়, দরজা বন্ধ রেখেই ঘরের মধ্যের প্রতিঘর খুলে যাক
সবার বুকে ভালোবাসা দপ্তর আর পেন্ডুলাম, ইশারামাফিক ঝরে পড়ুক খেয়ালি বোতাম।

সেলাই করবে যে প্রগতি, তারা এখনো জনপদে নয় জনপথে দেউটি বিলায়
তাদের ফুসফুসে ভরে আছে সমবেত জ্যোৎস্নার আসবাব।

পৃথিবীর গ্রামগুলো একেকটা চোখ আর শহরকে ধরা গেল মুণ্ডু
ওরাং-ওটাং একজন, তারই জনমন বলে নাগরিক মানে দোদুল লেজ,
ছেঁটে দিলেই হলো!

এমন কাকাতুয়া পোশাকে স্ট্রেচারে দাঁড়াব কেন? বরং, তোমার পদাতিক হব।


আমার একজন একজনই আছে

সবুজ ভয় স্ক্রিপ্টে রেখে শহরের পাশ দিয়ে যাচ্ছি
আবেগের ঠিক বাম ঘেঁষে গ্রাম যায়—

একজন পরিযায়ী আলোর চোখে আঙুল তুলে
সে নদীই দেখাচ্ছিলাম—

ভয়, আজ আপনাকে খুব আদর ইচ্ছে করছে।
আদর, আজ তোকে খুব আবেগী দেখাচ্ছে।
নদী, আজ ক্যানভাসারের কথাবাক্সে ঢুকে যা।

অথচ ভয়-আদর-নদী কাউকেই তুমি লাগছে না।

রক্ত নয় জলটিলা সাজিয়ে পত্তনের খুব উঁচুতে দাঁড়িয়ে
অসুখগ্রস্ত আনন্দ, আপনাকেই বলছি—
আমার একজন তুমি আছে
আমার একজন ঘর আছে
আমার একজন সরোদ আছে
আমার একজন তুমুল হেমন্ত আছে।


মায়াপাশ

তোমাকে ভালোর মতো লাগে। এই টিপ্পনীর পাশে উড্ডীন রাধাচূড়া দেখার অভ্যাস কার কার? ইশারা তুলুন।

চাঁদ টিমটিম। আরও উচ্চে ফুটছে wonder ফুল। এমন বিকাশের তল্লাটে কী কী অলীক বিজলি পেলে? বারতাপাত্রে রাখতে পারো।

ভালোকে দেখা গেল। সুট-টাই পরে আমার শরীর নিয়ে ৯টা-৫টা করে! অর্থাৎ, এই শিল্প ব্যবসায়ী বারোহাটে ন্যাপথলিনের নামে বিক্রি করছে জুলজুল চোখ।

বয়স, তোকে যদি ১৮ দেখি গায়ে খুব আলতো পাস, ৮১ ডাকলেই আমার বন্ধু উপলের যত হাশর!

এবার বাগান-কিনারে মিনার খুঁড়ল এক বিনাশী। দেখব, সুন্দরের পক্ষ ধরে কোন পরাগায়নে ভানুফুল হলো দাউদাউ!


হারানো বলের ধারাভাষ্য

যেকোনো রাতেই তোমার স্কোয়াশ বল হারাবে এবং কোনো সুমনা এমন ঘুমঘন পরিস্থিতির মধ্যে তদন্ত করবে আঙুল। কিচ্ছু যায়আসেনার দলে যারা আমাকে পচতে দেখেছেন, তারা যদি ছাইভিড়ে সুই খুঁজে পেয়ে যান—অনুরোধ, বিচিত্র কৌতূহল মেলে দিন আর সহস্র লন্ঠন তাড়া করুন সকালবেলার দিকে।

দেখবেন, বিছানাবিধৌত রহস্য প্রহরে একজন কুসুমকুমারী আলুথালু আপেলের হয়ে নাশতাটেবিলে হেঁটে গেল এবং ভাসতেটাইপের একদল নন্টেফন্টে ডিমফাটা সূর্য আবছা টিপে দিল—ঝরল ফোয়ার—যেখানে বালিশবাহিনীর অনুমতিবিনে প্রবেশ বারণ।

ওরম গ্যাঁড়াকলে যারা এঁটেছেন, তাদের জন্য উদ্ধারকর্মী না পাঠানোই উত্তম সিদ্ধান্ত বলে ধারণায় মগ্ন আপদকালীন কর্তৃপক্ষ—দাউদাউ বিশেষজ্ঞগণও কারও শহরতলিতে টোকা দেবেন না। শুধু কাফকা নামের এক কমান্ডার শরীরতল্লাশি করবেন আর এরওর আরামেবিরামে খুঁজবেন চিৎকারসামগ্রী।

তখনও, নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ে থাকা একথোকা সর্বনাম চরিত্র হননের দায় নিয়ে তোমার আরোগ্যসদন ঘেঁষে দাঁড়াবে এবং বিরতি নামিয়ে বর্ণনা করবে রাত কেন সকল শরীরের ধিকিধিকি কুয়োতলা।


ভীমঘুম এবং স্বপ্নরাত

মানুষ নিদ্রায় গিয়েছে, আমি যাইনি।

ঔরসে বহু ফুল ফোটার প্রস্তুতি নিচ্ছে; ফলত, মানুষের ঘুমে ধরেছে স্বপ্ন।
সেই বৃক্ষশাখে আমি নাচং নাচং অথচ ফাল্গুন আসবার মতো কোনো বসন্ত রোগ
আমার হবে না।

ঢুলুঢুল চোখের মরফিয়াস, তুমি অলীক দেখো, তোমার স্মৃতিজুড়ে ফরেনসিক; কে যেন কার কফিনে পেয়েছে দীর্ঘশ্বাসের ফুলকারি।

তদ্ভাব সিদ্ধান্তে, ভাবনার চেয়ার ছেড়ে একদিন দেহের ভেতরের দেহে পর্যটন হবে প্রাণ; সমাবর্তনের দিন বহুবীজ খুলে পাওয়া হবে চম্পক।

এমন তারানা ভোর তোমার বিছানায় ঝুমকা হোক, অঘোর রাত তা চায়নি।

অরবিন্দ চক্রবর্তী। কবি।
জন্ম ১১ আগস্ট ১৯৮৬ ফরিদপুর জেলার রায়পাড়া সদরদী'তে।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: 'ছায়া কর্মশালা' (২০১৩), 'সারামুখে ব্যান্ডেজ' (২০১৬), 'নাচুকের মশলা' (২০১৮), 'রাত্রির রঙ বিবাহিত' (২০১৯)
সম্পাদিত গ্রন্থ: 'একজন উজ্জ্বল মাছ: বিনয় মজুমদার' (২০১৯), 'দ্বিতীয় দশকের কবিতা' (২০১৬), 'অখণ্ড বাংলার দ্বিতীয় দশকের কবিতা' (২০১৬)।
সম্পাদিত পত্রিকা: মাদুলি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. অরবিন্দ এই সময়ে র একজন অগ্রসর কবি প্রায় সব কবিতায় কবি শব্দকে ভিন্ন মাত্রা বা অর্থ দেয়ার চেষ্টা করেন যা কবিতা প্রেমিদের মনোযোগ দাবী করে । সবগুলো কবিতা ই অনবদ্য ।

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।