TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

সন্ন্যাসী আরণ্যক | কবিতা


 

বনবিভ্রম

(উৎসর্গ: ফরহাদ নাইয়াকে)


ঢুকে যাচ্ছি উদ্যানে—গভীর—মিস্টিরিয়াস

মিলনের অব্যর্থ বাসনা নিয়ে হরিণেরা—ছিটানো

বীজের মতো আলো আধাঁরে—অধিকন্তু আঁধারে—

বহুমুখী গাঁজার ধোঁয়ায়—পায়ের নরম নড়ায়

কাঁধে রাখে মাথা। আমি ও অন্যান্য পরহেজগার বৃক্ষরা

হাঁটি চোখে ঘাস খাওয়া দেখি—তাদের সিল্কি চুল—

তারা পারফিউম মারে—খুলে বুকের হুক নেয় ঘ্রাণ 

ওড়নার নীচে—অনির্বাণ শিখা নিয়ে—

আই থিংক ওরা নির্বাণ নির্বাণ খেলে।


চিঠি চত্বরের সামান্য সামনে বন্ধুর প্রেমিকার কবর

হ্লায় ঢুকে যায় আলগোছে—আর হাড়ে হেলান দিয়ে শোয়—সম্ভবত হেসে হেসে কথা বলে ওরা

আমিও পিছে পিছে কবরের মধ্যে ঢুকি—

বসি তার প্রেমিকার জমানো হাড়ের পাশে।


যেন কখন স্যাটাভাঙা রাগ সহ—বলা যায় ঈর্ষায়

বাহু প্রসারি কাকতাড়ুয়া হয়ে ঢুকে পড়ি 

বেজ স্ট্রাকচার সুপার স্ট্রাকচারের মধ্যবর্তী— 

স্তন আর তালুর মধ্যদেশে—আর

বোধিবৃক্ষ তলে দেই সজোর ধাক্কা।


হরিণেরা আর কত ঘাস খাবে—অন্ধকারে

এত জোয়ারে তাদের নাই ভেসে যাওয়ার ভয় 

নাইয়ার বাপ উঠানটা কুরিয়ারে পাঠায়—হৃদমাতায়

আর অবধারিত কুয়ার মধ্যে পড়ে থাকি আমি 

এখানেও হরিণেরা জল খায়—কলকল নীরবে

আমি জল দেখি মাছের ঢঙে—আর

হরিণেরা দুধে হাতে চেপে ধরে মুখ

শিখা অনির্বাণ—আশপাশ হরিণেরা ঘাসমুখে চরে

এই অন্ধকারে।



দুপুরের ধূর্ত শেয়াল


মৃদুতর এসো অনিন্দ্য রোদের বিকেল

দৃশ্যের বাইরে থেকে, বেদনার ক্ষত থেকে

মুক্ত করে তত্ত্বের তাত্ত্বিক প্রেসার—এই যে তুমি

তোমাকে চুমু খেতে দাও সরিয়ে দেবীত্বের দুর্ভেদ্য পর্দা।


পূজার ফুল, জপের তসবি—তোমাদের সীমন্তে কেবল

চিরুনিই থাক, আর থাক নাকের রেখা, চিবুকের চুম্বক। 

ভরসা দাও প্রেম, মানুষ শরীর থেকেও সরিয়ে ভিন্ন চিহ্ন

মুছে দেই তন্ত্রের তাবিজ—কালেমার ঝাড়ফুক। 


ক্লান্তি রেখে উহ্য—খুব মুখোমুখি বসবার দাও অবকাশ। 

বন্ধু শূন্য হাত, এসো হত্যার উপকরণ ফেলে; আলিঙ্গন 

নিয়ে এসো গভীর। বালিকার রান্না রান্না খেলায়

আসো আতিথ্য নিই উত্তেজিত দুপুরের ধূর্ত শেয়াল। 



পিয়ার্সিং


আমার না টাইপ একটা আস্ত ট্রেন ঢুকে যাচ্ছে ভেতর 

ভেঙে যাচ্ছি মাটির জমাট—

                প্রবল—ফেটে যাচ্ছি চাপের বেলুন 


                আর কী করার থাকে নিরাক ঠাপে

পাতাদের হাসফাস, সরে এসো—

    ট্রেনের স্ফিত বুকে—করি নিপল পিয়ার্সিং

আর বুনি ঠোঁটে নাড়াচাড়া করি—অনন্ত সন্ধ্যা।


               এই সন্ধ্যায়, এই মিস্টিক অগ্রহায়ণে

কৌশিক আঁকে মহাজাগতিক সিঁড়ির দুর্দান্ত ঘোড়া

আমি কি পারছি সরল রেখায় তুমিকে আনতে

ঢুকতে পারছি কী কারাতের পুরু ইউনিফর্ম ভেতর!


           অবরোধ, তোমার আয়ু সাতশ মেরাজ।

আসোতো সেজদার পাটি, খোলোতো নাচের পুতুল

    নিম্ন আলো পেটিকোট অভ্যন্তরে—বিঘ্নহীন!



সাপ ও ব্যাঙ বিষয়ক রচনা


প্রথমে তারা আমাকে একটা ঝাকুনি দেয়—প্রবল!

সম্ভবত আমি লেঙটা ছিলাম—চতুর্দিকে আয়না ছিল

আমাকে দেখতে—ঢুকে যাচ্ছিলাম আয়নার ভেতর।


ওরা আমাকে টেনে বের করে—পোশাক পরায়—বলে

তারা জিব্রাইল। আসছে কালাম নিয়ে।

আমি দেখি লিটমাস পেপার ওদের হাতে।


নির্ভার হয়ে পকেটে হাত ভরে দেই—পকেটে ব্যাঙ 

নাকি সাপ! নাকি সাপ-ব্যাঙ একসাথে এক পকেটে! 

হাতাই—ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে, ভীরু—


ওরা বলতে বলে ‘আমি আগুন আমিই পানি’

বলি ‘আমি সাপ আমিই ব্যাঙ’

ওরা পুনরায় বলতে বলে। পুনরায় বলি আমি

গ্রেট! ওরা বলে, পেয়ে গেছি মনসার দোসর! 

একযোগে পেটায় আমাকে—

কিজানি সাপ হালায় ঢুকে গেলো ভেতর কখন!



যখন ঝরিয়া যাবো

গ্রিলের ওপার জানাজা ফেরত কুয়াসা— এলোমেলো শ্বাস—অল্প আলো—ফ্যাকাসে স্তব্ধতা কোথাও যেন কে—প্লে করছে গ্লুমি সানডে! কখনোতো কুয়া কাটি নাই আমার ভেতর— এ কেমন খাঁ খাঁ শুন্য—হাহা প্রতিধ্বনি। কাকে মনে করা যায় এমন সন্ধ্যায় সারোয়ার ফারহানির কথা বলেছিলো— পৃথিবীর বিষণ্ণতম নারীটি—এশাও—আর তুমি তোমাকে মনে করি। তোমার ভেতর থেকে আরো আরো অজস্র তুমি ঘিরে বসো চারদিক— যেন মৃত শালিক ঘিরে পিঁপড়াদের মহাশোকসভা! ধারাবাহিক বিভ্রমে—ভেজা শিউলি পড়ছো টুপটাপ—অলক্ষ্যে—আমার উপর— ব্যথা—ব্যথা কোথায়—কোথাও নাই ক্ষতচিহ্ন —নাই প্রণয়ের গাঢ় কাতরতা। তবুও কেমন মৃত্যু মৃত্যু লাগে—যেন সামান্য টুকরো কিছু— নিয়ন্ত্রণহীন ভেসে যাচ্ছি—স্রোতে—প্রবল যেন ধূলিকণা—ভাসছি সন্ধ্যার বিস্তৃত ভেতর— মন্থর অন্ধকারে চাপা পড়ে যাচ্ছি—ধীরে—ধীরে



আজ এই মেট্রোপলিটনে


কী এক অন্তরঙ্গতা আজ এই মেট্রোপলিটনে!

        তুমি থেকে সরালে তীব্র পারফিউম

                থাকে গরম ভাতের ঘ্রাণ

                  থাকে রবীন্দ্র স্বরলিপি 

কী যে মাখোমাখো এই গন্ধ—বৃষ্টি হওয়ার সরমধারয়!


অল্প পর্দার রিক্সা—ততটুকু কম দেখা আলো অথবা দু'একটা নিরীহ কম্পন। পরিপাটি ভাঁজ শাড়ি ঈষৎ অলগা কোমর—এই অল্প হাওয়ায়। উরু সঞ্চারি সারেগামাপা নগরের নীতি বিরোধী—যেন সার্জনের সচেতন অস্রপচার। কোমর—যেথায় সান্ধ্য পাখির মেদ—রস আয়নের নিষিদ্ধ গবেষণাগার। 


উঁচু—আস্তেধীরে—ক্রমশ—বুক সীমানা 

না এসো অধিক আর যদি মরে যায় ফোমের লজ্জা!


আজ এই মেট্রোপলিটন। এই ধোঁয়াশার ভেতর 

অদ্ভুত কী যে বড় সাপের খামার। তবু বিষ তবু নীল—

ভেসে যায় যেন তার সশস্ত্র নিশ্বাস।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ