TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

ডিসক্রিপশনাল সুফী আর্ট নিয়ে পর্যায়ক্রমিক বিবরণ | পর্ব: চার | শায়লা সিমি নূর


পর্ব: চার ‘অবিকল্প জীবনাদর্শের উৎকৃষ্ট উদাহরণ’


পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী:

পবিত্র কুরআনে নবীগণের কাহিনি প্রধানত দুটি উদ্দেশ্যে আলোচনা করা হয়েছে।  মুসলমানদের ঐতিহাসিক তথ্য— জীবনাদর্শ সম্পর্কে জানাতে পারা এবং নবীদের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।


পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম বিশ্বের ঈমানি প্রেরণার জয়ধ্বনি  নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে রবিউল আওয়াল মাস …….নবীদের মধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বাপেক্ষা অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ব্যক্তিত্ব ও পদ মর্যাদায় তিনি অনন্য সাধারণ। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাহবুবে হাকিকীর নিকট সান্নিধ্যের যে মর্যাদা অর্জনে ধন্য হয়েছেন তা বর্ণনাতীত। সে সান্নিধ্য লাভের অনুরূপ ঘটনা কোনো অন্য নবীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। আল্লাহ্পাক নবীজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের রহমত-গুণের প্রতিবিম্ব বানিয়েছেন। আল্লাহপাক এরশাদ করেন— “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি”।

আল্লাহ সুবহানাতালা স্বয়ং রাসূলেপাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’এর উপর ফেরেশতাদের মেহফিলে দুরূদ ও সালাম পেশ কোরেছেন। অতঃপর, সমস্ত সৃষ্টিকে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি দুরূদ প্রেরণের আদেশ দেন।


পেইন্টিং: সৌভাগ্যের নকশা / কাঠের উপর এক্র্যালিক

এই যুগে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সঙ্গে আমাদের গোলামির সম্পর্ক দৃঢ়তর করার প্রথম পদক্ষেপ হলো, তার সঠিক পরিচয় লাভ করা। সেই পরিচয় যা ইমাম আলীকে মওলা আলী বানিয়েছে। সামগ্রিকভাবে নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবন পর্যালোচনার মাধ্যমে তা সম্ভব। আমাদের সকল প্রকার  অন্তরব্যাধির চিকিৎসা এই পরিচয় লাভের ভিতরেই নিহিত। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করবে এবং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার উদ্যোক্তা হবে, সে দুনিয়া থেকে (তওবার মাধ্যমে) ঈমানের সাথে বিদায় হবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।

পেইন্টিং: মেরাজ ও হযরত জিবরাঈল (আঃ)


মূসা (আঃ)’এর  জন্ম ও দুৰ্দশার অবসান:
মূসার জন্ম হয়েছিল তাঁর কওমের উপরে আপতিত রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞের ভয়ংকর বিভীষিকার মধ্যে। আল্লাহ তাঁকে অপূর্ব কৌশলের মাধ্যমে বাঁচিয়ে নেন……

মূসা (আঃ) ও ফেরাঊনের ঘটনা কুরআনে বারবার উল্লেখ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হ’ল, এলাহী কিতাবধারী ইহুদী-নাছারাদের পিছনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং শেষনবীর উপরে ঈমান আনার পক্ষে যৌক্তিকতা উপস্থাপন করা। উল্লেখ্য যে, পরবর্তী রাসূল দাঊদ, সুলায়মান ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) সবাই ছিলেন বনু ইস্রাঈল-এর সম্প্রদায়ভুক্ত এবং তাদের প্রতি প্রেরিত নবী। মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন এঁদের সবার মূল ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব।

মূসা (আঃ) জন্ম থেকেই প্রতিকূল অবস্থায় দিনাতিপাত করে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। তবুও এক মুহুর্তের জন্যও তিনি সত্যদ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে যাননি।  ফের’আউনের গৃহে আল্লাহ তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এবং মহান আল্লাহর নিকট সর্বাবস্থায় সাহায্য ও আশ্রয় প্রত্যাশার মাধ্যমে সত্য ও সঠিক পথে অবিচল থাকা সম্ভব হয়েছিল।

পেইন্টিং: নীলনদ থেকে ইউসুফের (আ.) হিজরত

মুসা (আ.) যখন ফেরাউনের শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় এবং মিশর থেকে তার সম্প্রদায়কে নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, তখন জিবরাইল (আ.) নাজিল হলেন এবং বললেন, আল্লাহ তায়ালার আদেশ ইউসুফ (আ.) এর ইচ্ছা পূরণ করো। ইউসুফ (আ.) মারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন যে, আমার সম্প্রদায় যখন এখান থেকে হিজরত করবে তখন যেন আমার দেহ সঙ্গে করে নিয়ে আমার বাপ, দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়। তখন মুসা (আ.) তার সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলেন যে, কে এমন আছে যিনি জানেন যে, ইউসুফ (আ.) এর কবর কোথায় দাফন করা রয়েছে? তখন এক বৃদ্ধা নারী বললেন, আমি জানি ইউসুফ (আ.) এর কবর কোথায় রয়েছে। তারপর সেই বৃদ্ধা মুসা (আ.)- কে নীল নদের তীরে নিয়ে গেলেন। এবং তখনই ইউসুফ (আ.) এর কফিনে ভরা দেহ নীল নদ থেকে বের করে তাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি নিয়ে পৌঁছে গেলেন। প্রায় চারশত বছর পর হজরত ইউসুফ (আ.) ইচ্ছা পূরণ হয় তাকে তার বাবা, দাদা ও বড়দাদার পাশেই দাফন করা হয়।

পেইন্টিং: “মূসার (আঃ)’ সোনালী হাত”

“তোমার হাত বগলে রাখ। তারপর দেখবে তা বের হয়ে আসবে উজ্জ্বল ও নির্মল আলো হয়ে, অন্য একটি নিদর্শন রূপে’। ‘এটা এজন্য যে, আমরা তোমাকে আমাদের বিরাট নিদর্শনাবলীর কিছু অংশ দেখাতে চাই’ (ত্বোয়াহা ২০/২২-২৩)।


যে সংবাদ পৃথিবীর সৌভাগ্যের জন্য বার্তা:

হজরত ঈসা (আ.) বিশ্বনবী (সা.)’র আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গিয়েছিলেন। হজরত মরিয়ম (আ.) এবং তাঁর পুত্র হজরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আর বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লিখিত মরিয়মের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল, অতঃপর উহাদিগ হতে সে পর্দা করল। অতঃপর আমি তার নিকট আমার রুহকে পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। মরিয়ম বলল, “আল্লাহকে ভয় করো যদি তুমি মুত্তাকী হও, আমি তোমা হতে দয়াময়ের শরণ নিচ্ছি।” সে বলল, “আমি তো তোমার প্রতিপালক প্রেরিত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য।” মরিয়ম বলল, “কেমন করে আমার পুত্র হবে? যখন আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই।” সে বলল, “এই রূপেই হবে। তোমার প্রতিপালক বলেছেন—ইহা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং আমি উহাকে এই জন্য সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ; ইহা তো এক স্থিরকৃত ব্যাপার।”

অতঃপর সে গর্ভে উহাকে ধারণ করল; অতঃপর তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল; প্রসববেদনা তাকে এক খর্জুর-বৃক্ষ তলে আশ্রয় লইতে বাধ্য করল। সে বলল, হায়! ইহার পূর্বে আমি যদি মরে যেতাম ও লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম। ফেরেশতা তার নিম্ন পার্শ্ব হতে আহ্বান করে তাকে বলল, “তুমি দুঃখ করো না, তোমার পাদদেশে তোমার প্রতিপালক এক নহর সৃষ্টি করেছেন। তুমি তোমার দিকে খর্জুর-বৃক্ষকে নাড়া দাও, উহা তোমাকে সুপরিপক্ক তাজা খর্জুর দান করবে। সুতরাং আহার করো, পান করো ও চক্ষু জুড়াও। মানুষের মধ্যে কাউকে যদি তুমি দেখো তখন বলো, “আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের রোজার মান্নত করেছি সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সহিত বাক্যালাপ *ন্ম যেমন বিস্ময়কর, তাঁর পুনরাবির্ভাবও হবে বিস্ময়করভাবে। তাঁর সম্পর্কে কোরআন মাজিদে স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়।  হজরত ঈসা (আ.) এর জন্মের সংবাদ বহন করে নিয়ে আসা পৃথিবীর জন্য একটি সুসংবাদ এবং এই ঘটনাকে অবলম্বন করে পৃথিবীর বহু আর্টিস্ট চিত্রকর্ম ও স্থাপনা সৃষ্টি করেছেন। হযরত ঈসা (আ.) আবারও পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এবং মুসলমানদের শেষ ইমাম ও মানবজাতির ত্রাণকর্তা হযরত মাহদী (আ.)’র সহযোগী হবেন।

পেইন্টিং: পবিত্র পুত্র দানের সুসংবাদ



পর্ব: এক পড়তে এই লেখাটির উপর ক্লিক করুন
পর্ব: দুই পড়তে এই লেখাটির উপর ক্লিক করুন
পর্ব: তিন পড়তে এই লেখাটির উপর ক্লিক করুন


শায়লা সিমি নূর। সুফী শিল্পী ও কবি। তার কবিতার বই ‘IN THE NAME OF’ গতবছর সার্ক সাউথ এশিয়ান পোয়েট্রি রেকগনিশন করেছে এ-বছর বোডলিয়ান লাইব্রেরি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-এ সংগ্রহ করা হবে। স্বত্বাধিকারী: বেগম রেস্টুরেন্ট এন্ড গ্যালারি, বেগম প্রকাশনা, বেগম এনিম্যাল কেয়ার, রাজুস রিড লাইব্রেরি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ