TopTime

আজ বঙ্গাব্দ

‘আগামীর কবিতা কিছু নন-প্যারালাল ইনডেক্স’ পর্ব: ছয় | রাহুল গাঙ্গুলী


পর্ব: ছয়


খারাপ কবিতা: কিছু ব্যক্তিগত নোটেশন 

৯০ এর মাঝখান থেকে একটি কথা ঘুরতেফিরতে থাকে যা হলো অধুনান্তিক বা পোস্ট মডার্ন। যার দিশারি হলেন সমীর রায়চৌধুরি, প্রভাত চৌধুরি ও বেশ কিছু তরুণ কবি। কবিতা পাক্ষিক কিছু অগ্রজ ও একঝাঁক নতুন কবিদের নিয়ে শুরু করে একটা মুভমেন্ট। ২০০০ সালের পর তা আরো চূড়ান্ত রুপ নেয় এবং কম্পিউটার, তথ্যপ্রযুক্তি ও ওয়েব আমাদের জীবনে ঢুকে পড়ার সাথেই এই মুভমেন্টটির একটা অন্য মাত্রা আসে, বলা হয় লিখতে হবে আপডেটেড কবিতা।

মধ্যবর্তী পত্রিকা ও তার সম্পাদক বিশ্বরূপ দে সরকার ও নতুন কিছু কবি ইদানীং বলতে শুরু করেছেন ‘খারাপ কবিতা’। যা অনেকের কাছেই আপাতত সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়। এমনকি অনেকে বলছেন খারাপ কবিতা কি কেউ লিখতে পারে। আসলে খারাপ কবিতা বা অকবিতা (যে টার্ম আমি ব্যক্তিগত জায়গায় ইউজ করে থাকি) তা হচ্ছে স্রেফ প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে। আসলে যে কোনো মুভমেন্টের একটা শ্লোগান ভিত্তিক নাম থাকলে তা ইতিহাসের দিক থেকে বোঝানো সহজ। এটা বিদেশে ও আমাদের দেশে অনেকবার ঘটেছে। এখন এই খারাপ কবিতা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে প্রভাতদা বা বিশ্বরূপদার কথা বলছি কেন সে প্রশ্ন উঠছে কেন। এ-বিষয়ে বলতে পারি বিবর্তনের ভিতর দিয়ে নিজেকে আত্ম-আবিষ্কারের কথা। গত ২৭ তারিখ বিশ্বরূপদা খারাপ কবিতা নিয়ে স্পষ্টত নিজের অবস্থান ও আমাদের অবস্থান পরিস্কার করেছেন। কী বলছেন সেটা একটু তুলে ধরলাম।

“মধ্যবর্তী জুলাই ২০১৭ সংখ্যার জন্য কবিতা মেইল করুন। ৭ দিনের মধ্যে। মনে রাখবেন অসম্পূর্ণতা, গঠনের অসাম্য এবং অসংলগ্নতাই খারাপ কবিতার নন্দনতত্ত্ব।”

আসলে সময়োচিত কবিতা বলতে দুটি দিক বলতে চাই, যা কথা বলে পেয়েছি। প্রথম দিকটি হলো শিল্প হলো বিনোদন, তাই লিখবো সেটাই যা অনেকের ভালো লাগবে। অর্থাৎ কবির ব্যক্তি ক্রাইসিস নেই। থাকলেও তা না লিখে লিখতে হবে বাছাই করা ভালো কথা। কিন্তু বাছাই করবে কে? শিল্পী নিজে না অন্য কেউ। অপরদিকে হলো শিল্প শুধুই বিনোদন নয়, আরো গভীর কিছু। প্রসঙ্গত বলা যায় অন্ধকার ঘরে মোমবাতি জ্বাললে যেটুকু জায়গা আলোকিত হয় সত্যি কি শুধুই এটুকু, বাকি যে অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশ তা কি মিথ্যে? যদি দুটো অবস্থানই আমার ৫-ইন্দ্রিয়ের যে-কোনো একটির সাথে যৌন যোগাযোগ স্থাপন করে, তৈরি করে সেতু তাহলে দুটোর কোনোটিই মিথ্যে প্রমাণিত হয় না। (যারা শুধু বিছানায় শোয়াকেই শুধুমাত্র যৌনতা বলেন তারা একটু ইতিহাস বা বায়োলজি পড়বেন।)

এই সময়ের ক্রাইসিস, তার বহুত্ববাদী অবস্থান বা আরো একটু প্রজেকশন করে আজ থেকে কিছু বছর পর কি হতে পারে, কেন সেগুলো লেখা হবে না। কেন নিউরোটিক হাতুড়ি মারা যাবে না, দুধভাতে থাকা পাঠকের কথা ভেবে।

অমিতাভদা লিখেছেন মার্কসবাদ নিয়ে, যেখানে আগে তত্ত্ব পরে প্রয়োগ। কিন্তু তারও ফান্ডামেন্টাল প্যারি কমিউনের উপর। আজ বিশ্বের যে কজন নরম বা চরম বামবাদী রয়েছেন, সোভিয়েতের পতন বা চীনের তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ারের পর কিন্তু এই বিবর্তনকেই আলোচনা করছেন। এককালের মাও-সে-তুং চিন্তাধারা হয়েছে মাওবাদ। লেনিন পর্বের সাথে আলোচিত হয়েছে রোজা লুক্সেমবার্গ বা মানবেন্দ্রনাথ রায়, তেমনই মাও বা লিন পিয়াও পরবর্তী পর্বে আলোচিত হয়েছেন গন্জালো বা ইব্রাহিম কাপাক্কায়া। সমালোচিত হয়েছেন বব অ্যাভাকিয়ান থেকে বাবুরাম ভট্টারাই বা আনোয়ার কবীর। আসলে এই ২০১৭ সালে এসে একমাত্র যেটা স্পষ্ট তা হলো বিবর্তন। এখানে কোনো দর্শনই (বাদ বা ইজম) স্থির নয়। একথা যারা মানছেন না অচিরেই মানবেন। আর না মানলেও যে সময় থেমে থাকবে তাদের জন্য তাতো নয়। সময় সবসময়ই সামনের দিকে এগোয়, পিছনে নয়। তাই কিছু পাঠকের কথা ভেবে পিছিয়ে গেলে গোটা সাহিত্যের ক্ষতি। অবশ্য পুরোটা পাঠক/পাঠিকার দোষ নয়। বাংলা সাহিত্য যখনই নতুন কিছু করতে গেছে, পুরনোকে টিকিয়ে রাখার প্রতিবারই কিছু ব্র্যান্ড খাড়া করা হয়েছে। তা সে রবীন্দ্রনাথ হোক, জীবনানন্দ হোক, শক্তি চট্টোপাধ্যায় হোক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হোক বা ৯০এ পাঠমুখো করার নাম নিয়ে ছন্দ মেলানো সুখী স্টারডম তৈরি করাই হোক। কিন্তু বাংলা সাহিত্য কতোটা এগিয়েছে বা আন্তর্জাতিক আঙিনায় কি ছাপ রাখতে পেরেছে। সমস্ত ইজমই যদি আমদানি হয়, আমাদের নিজস্বতা কোথায়? কতোটুকু?

আর এখানে যদি কবিতা পাক্ষিক বা মধ্যবর্তী যদি আপডেট বা খারাপ (বা আমার মতো কিছু নগণ্যের অকবিতা) বলা হয়, যদি নতুন কিছুর চেষ্টা করা হয় তা কি চোখে দেখা হবে?

প্রশ্নটা সকলের জন্য। আর একটি খারাপ কবিতা সকলের পড়ার জন্য। কেন খারাপ (প্রথাগত প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে) সে কথা পরে কোনো এক সময়। তবে আপনারা আলোচনা করুন, যেটার প্রয়োজন।


আমার কবিতা ভাবনা

আমার কাছে কবিতা ব্যাখা না করতে পারা শারীরিক মানসিক ও আত্মিক অনুভূতি। ব্যাখ্যা করি বটে, তবে তা একেবারে সঠিক নয়।

কবিতা সময় ও আগামীর ডকুমেন্টেশন। আগামীর রুপরেখা বা অনিশ্চিত রেখাচিত্র। হয়তো লিখতে লিখতে নিজেকে আরো আবিষ্কার করতে পারবো। জানতে পারবো প্রকৃতি মহাবিশ্ব ও সময়ের সাথে আমার সম্পর্ক।

আমার কাছে কবিতা নিছক কিছু শব্দের আঁক নয়। আমি চারপাশে যা দেখছি, শারীরিক ও চেতনা দিয়ে যা উপলব্ধি করছি, সেই উপলব্ধির সাথে নিজেকে কো-রিলেট করা বা সময়কে মাঝে রেখে নিজের করা প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেই খোঁজা, নিজেকে বহু সত্ত্বায় বিভাজিত করতে করতে নিজেকে আত্ম-আবিষ্কারের তাড়না। মানুষের সাবেকী দেখাগুলোর ভুল বোধ কে নাড়িয়ে দেওয়া। এটাই আমার লেখার মূল বিষয়।

কবিতায় দুর্বোধ্যতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যতটুকু পাঠকের সাথে মিশেছি বা কথা বলেছি - কিছু বিষয় মনে হয়েছে।

১) কবিতা দুর্বোধ্য— কারণ শব্দরূপ নতুন। তাই একথা মাথায় রাখতে হবে— কবিতায় থাকা প্রতিটা শব্দের মানে যেন জানা থাকে। আজ হাতের কাছে পাওয়া নেট জগতে গুগুল রয়েছে, এনসাইক্লোপিডিয়া আছে। তাহলে অসুবিধে কোথায়? তাহলে কি তথ্য কম জানি বলে আর জানবো না। পাঠক পরিচিত তথ্যকেই সর্বসেরা মনে করেন এবং সেই সম্পর্কিত লেখাকেই আপন করে নেন।

২) শেখার ও জানার ক্রমাগত (কনটিনিউয়াস) প্রক্রিয়া আমরা ক’জন মেনে থাকি। আমরা বিচার করি নলেজের মান বয়স নির্ভর, অভিজ্ঞতা নির্ভর নয়। এক কমবয়সী বাচ্চাও যে একটা দর্শনে বিশ্বাস করে, সেও যে কিছু বলতে পারে বা ভাবতে পারে আমরা কজন তাকে মান্যতা দিই।

৩) সিলেবাস ও ব্যাকরণ বইকে ভগবান মেনে নেওয়া— সেটিও তো কেউ কিছু যুক্তিকে রেখেই বানিয়েছিল। সেটাও যে শেষ কথা— কেন? কী তার সায়েন্টিফিক এফেক্ট। তা কি আজকেও ঠিক?

৪) কলেজে একটা বিষয় ছিল— সোসিওলজি। স্যার বলেছিলেন শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী যদি পি.এইচ.ডি. হয়, কি তার মানে? আমরা উত্তর দিতে পারিনি। উনি বলেছিলেন ফিলোজফি ইন ডক্টরেট। অর্থাৎ সর্বোচ্চ অবস্থানে ডক্টরেট ইন লিটারেচার নয়, ডক্টরেট ইন সায়েন্স বা ম্যাথামেটিকস নয়। হলো দর্শন। যার ভিতর সবকিছুই আছে। তা হলে তাকে জানতে অসুবিধে কোথায়? অঙ্কের সূত্রগুলো বা যোগ বিয়োগ গুন ভাগ বা সমস্ত নোটেশন— সবই তো দৈনন্দিনের ব্যবহারিক জীবন থেকে নেওয়া। তাহলে বলবো কেন আমি আর্টসের স্টুডেন্ট তাই ওটা কেমিস্ট্রির কবিতা তাই দুর্বোধ্য।

৫) বাঙালী বরাবরই কুপমন্ডুক ও দলবাজি প্রিয়। তাই আমরা জানার চেষ্টা করি না আমাদের পরিধির বাইরে কোথায় কি কাজ হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি আমরাই সেরা। যে কারণে কোনো বিদেশি পরীক্ষা করলে অসাম শালা, আর বাঙালী করলে ধ্যুর বাল।কী যে লিখলো সব মাথার উপর দিয়ে।

৬) কবির ব্যক্তিগত জীবন ও তার থেকে লব্ধ এক্সপেরিয়েন্স কবিতার সবচেয়ে বড়ো উপাদান। তাই তা না জেনে কবিতা বুঝতে যাওয়া ভুল। কথা বলতে হবে। জানতে হবে তাকে, তার বিশ্বাস-অবিশ্বাসকে।

৭) সামন্ততান্ত্রিক অবশেষকে বাদ দিয়ে উদার মূল্যবোধ না গড়ার চেষ্টা। যে কারণে এলিট ভাষা কখনোই সাবঅলটার্ন ভাষাকে মর্যাদা দেয় নি। ফলতঃ আমাদের শব্দভাণ্ডার বিগত ৫০ বছরে কতোটুকু বেড়েছে?

৮) শিল্প কখনো শিখবার বস্তু নয়। এটা নিজস্ব অনুভূতির প্রকাশ। রেফারেন্স চলে কিন্তু পাঠশালা কবিতায় চলে না। বিদেশে কবিতা আর্কাইভ আছে শুনেছি। সেখানে সমালোচক ও পাঠক কবির লেখা নিয়ে কাঁটাছেড়া করে। পরে তা অডিও বা ভ্যিসুয়াল-রূপে সংরক্ষিত হয়। গবেষণাকারীরা তা সংগ্রহ করতে পারেন ও কাজে লাগাতে পারেন। আমাদের দেশে তা কই।

এইসব না ভাবলে কখনোই দুর্বোধ্যতা কাটবে না। মনে রাখতে সৎ শিল্প চিরকালই নতুন পথের দিশা দেয়। পুরনো দিশায় পিছনে নিয়ে যায় না। যদি তা হয় তা কেবলমাত্র বিনোদন, সৃষ্টি নয়।


নবনির্মাণ প্রসঙ্গে:

আগে বলা হতো (আমরা সকলেই বলতাম): নির্মাণ, বিনির্মাণ, পুনর্নির্মাণ। নির্মাণ ও বিনির্মাণ ঘটে গেছে এবং এখনও ঘটছে বিনির্মাণ: এগুলো আমরা জানি। এরপর কিন্তু পুনর্নির্মাণের জায়গায় আসছে নবনির্মাণ।

প্রকৃতি আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়েছে। সমস্ত শক্তি সংরক্ষণ করার আধার দিয়েছে। আমরা যদি তার অপ্রয়োজনীয় অপব্যবহার না করে প্রকৃত ও সৎ ব্যবহার করি, উপকৃত আমরাই শুধু হবো না, হবে গোটা ইউনিভার্স।

এই আত্মস্থনের জন্য যা প্রয়োজন নিজেকে নিজের চিন্তনের ভিতর দিয়ে চেনা। এখানে i শুধু ইন্টারনেট প্রযুক্তি নয়, আমিও। আর এখানেই চলে আসে প্রকৃতি ও চলমান ঘটনার সাথে সম্পর্ক স্থাপন (চার্জড কণাদের মিলিত স্রোত), প্রাকৃতিক সম্পর্ক বলয় এবং ইউনিভারসাল রিলেশন ও তার কর্ডিনেট।

এক নতুন চিন্তনের শুরু। আগামীর জন্য, আগামীর উদ্দেশ্যে, নবনির্মাণ স্বপক্ষে।


জিরো বাউন্ডারি নিয়ে আরো কিছু কথা:

বিগত বেশ কয়েকশো বছর ও বেশ কয়েকটি দশক সাক্ষী থেকেছে বেশ কিছু ইজম বা বাদ-এর। ইজম বা বাদ সাধারণত কিছু বেস ফ্যাক্টর ও কিছু সাববেস ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে সৃষ্টি হয় ও লালিত পালিত হয়। যেমন বেস ফ্যাক্টরের উপাদান হিসেবে বলা যেতে পারে: সমসাময়িক অর্থনৈতিক ইমপ্যাক্ট, রাজনৈতিক ইমপ্যাক্ট, সময়োচিত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির প্রত্যক্ষ ইমপ্যাক্ট, ধর্মীয় ইমপ্যাক্ট, ওভারঅল ডেভেলপমেন্ট ও পরিকল্পনা ইত্যাদি।

আবার সাববেস ফ্যাক্টরগুলির উপাদান হিসেবে বলা যেতে পারে: আবহাওয়াগত ইমপ্যাক্ট, ভৌগলিকগত পরিবর্তন, আঞ্চলিক ইতিহাস, স্থানীয় সংষ্কৃতি, ভাষাগত প্রভাব, জনসংখ্যা ও খাবারের উৎস ও বণ্টন ইত্যাদি।

এখন এই সকল ফ্যাক্টরের পরিবর্তনই একটি ইজম বা বাদ থেকে পরবর্তী ইজম বা বাদ ঘরানার বিবর্তন ঘটায়। আবার এই পরিবর্তনের ডাইমেনশন যদি দেখা যায়: মূলতঃ দু প্রকার। ভৌত ও রাসায়নিক বা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ।

কখনো আবার এমনও হয় ফ্যাক্টরের কিছু পরিবর্তন হয়েছে, কিছু হয় নি, অর্থাৎ উপরে বলা দু’প্রকার পরিবর্তনের একটা ঘটেছে একটা ঘটেনি, তখন বলা যেতেই পারে: অমুক দর্শন বা ইজম বা বাদ এখনো কিছুটা প্রয়োজনীয় সমসাময়িক সময়ের সাপেক্ষে।

শিল্পের জায়গায় স্ট্রাকচার, ফর্ম ও ভার্স: ত্রয়ীর এই বিক্রিয়াযাতো পরিবর্তনকে বলতেই পারি এইভাবে

নির্মাণ >>> বিনির্মাণ >>> পুনর্নির্মাণ

আর এখানেই জিরো বাউন্ডারি উঠে আসে। জিরো বাউন্ডারি আমার কাছে কোনো ইজম বা মতবাদ নয়, বরং ভিন্ন দর্শনের প্রাথমিক স্তর, বলা ভালো প্রাক-হাইপোথেসিস বা আরো বলা ভালো, এটা একটা বিরাট মাপের চিন্তন। যদিও আই সোসাইটি ও কাব্যযোগ এই কাজ কিছুটা আগেই শুরু করেছে, তবুও বলবো একই সময়ে হয়তো কিছুটা আগেপিছে অনেকেই এই জায়গাটা নিয়ে নিজের নিজের মতো করে কাজ শুরু করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি যেমন কাজ করছি conceptual poetry বা ধারণা নির্ধারণকারী কবিতার উপর। একটা সামগ্রিক উদাহরণ নেওয়া যেতেই পারে। যেমন শিল্পীর হাতে গড়া মাটির মূর্তি। শিল্পী একই, কিন্তু একএক সময় তার হাতে গড়া মূর্তির ভিন্নভিন্ন প্রতিরূপ। আবার শিল্পী চাইলে যেমন ঈশ্বরকে প্রেয়সী বানাতে পারেন, তেমনিই শয়তানকেও সুন্দর ও স্নিগ্ধ করে দিতে পারেন। আবার বিসর্জনের পর শুধুই তার প্রাক অবস্থান ফিরে পাওয়া নয়, বরং পরবর্তী সৃষ্টির নয়া উপাদান। জিরো বাউন্ডারি এমনই নির্মাণ-বিনির্মাণ-পুনর্নির্মাণ এই ত্রয়ীর ক্রমাগত ঘটতে থাকা চেইন রিঅ্যাকশন। যা চলতেই থাকে এবং নতুন নতুন অভিমুখ সৃষ্টিতে এগিয়ে যায়।

যে কোনো চিন্তন বা মতবাদ একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে সৃষ্ট। তারপর জারণ-বিজারণ-আত্তীকরণ ইত্যাদি পর্যায়। এই প্রসঙ্গে চিন্তন ও মতবাদের পার্থক্য কিছুটা খোলশা না করলেই নয়। চিন্তন হচ্ছে প্রি-হাইপোথেসিস শুরুবাদ (base) এবং এটা ক্রমশঃ বিস্তারমুখীন। আবার মতবাদ চিন্তনের একটা গ্রহণযোগ্য স্থায়ীরূপ বা বলা ভালো পোস্ট হাইপোথেসিস পরবর্তী থিওরির এক সায়েন্টিফিক perceptional (ফলিত দৃশ্যগত) প্রতিবিম্ব। জিরো বাউন্ডারির বেস বিগত কিছু সময়ের কিছু চিন্তাভাবনা ও কিছু নয়া মাত্রার বা বলা ভালো কিছু জায়গায় বহুমাত্রিক থেকে মাত্রাহীন কবিতা।

শূন্য আবিষ্কারের পর যে কনসেপ্টটির আবিষ্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো অসীমের ধারণা। শূন্য এবং অসীম এই দ্বৈতয়ের যুগ্ম ক্রিয়া জন্ম দেয় সৃষ্টির গুঢ় রহস্য সমাধানের সংকেত। যার এখনো চলমান। অতএব যেহেতু জিরো বাউন্ডারি এখনো একটি চিন্তন ও ধারনের পর্যায়ে রয়েছে তাই এখনো তা সম্পূর্ণ দর্শন বা থিওরি বা মতবাদ বা কোনো ইজম নয়। জিরো বাউন্ডারি একটা সম্মিলিত চিন্তন যা বিবর্তনকে আত্তীকৃত করার রাস্তা দেখাতে শুরু করছে। অপরদিক থেকেও বলা যায় কোনো মতবাদ বা ইজমের সীমাবদ্ধ ফ্যাক্টর থাকে। জিরো বাউন্ডারিতে এমন কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ঠিক যেমন এখানে নিত্য ধ্রুবকের মান।


• পর্ব: এক পড়তে এই লেখাটির উপর স্পর্শ/ক্লিক করুন
• পর্ব: দুই পড়তে এই লেখাটির উপর স্পর্শ/ক্লিক করুন
• পর্ব: তিন পড়তে এই লেখাটির উপর স্পর্শ/ক্লিক করুন
• পর্ব: চার পড়তে এই লেখাটির উপর স্পর্শ/ক্লিক করুন
• পর্ব: পাঁচ পড়তে এই লেখাটির উপর স্পর্শ/ক্লিক করুন

[ধারাবাহিক: আগামী শনিবার পাওয়া যাবে পর্ব: সাত]



রাহুল গাঙ্গুলী। কবি। জন্ম তারিখ: ১০ই আগস্ট ১৯৮১, দুর্গাপুর, পশ্চিম বঙ্গে।
পেশা: সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
কিছু কথা : কোনো মহাপুরুষ হয়ে দেওয়ালে ঝুলবার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, নিজেকে আবিষ্কার তথা সময়কে আবিষ্কারের ভিতর দিয়েই যোগ ও যাপন। ভালোবাসা, প্রেম, ঘৃণা বা প্রতিবাদ ~ সময় তথা নিজের কাছে : যে কোনো সৎ সূক্ষ্ম অথবা স্থূল প্রশ্ন করার অধিকার এবং নিজের কাছেই সমাধান, সেই বিশ্বাস নিয়ে দীর্ঘ চিন্তনের প্রতিফলনে লিখে যাওয়া অনুরণিত কবিতা
প্রকাশিত গ্রন্থ:
নো ম্যানস্ ল্যান্ড’ (কবিতা পাক্ষিক) ২০১৭, ‘ব্যক্তিগত জরায়ু থেকে’ (ঐহিক) ২০১৮, ‘খাদ্য - খাদক - খাদ্য’ [অনলাইন বই] (ফেরারি) ২০১৮, ‘১ মুঠো জলীয় দূরত্ব ভেঙ্গে’ (টার্মিনার্স) ২০১৮,
কবিতাবিহীন মুহূর্তগুলো’ (তাবিক) ২০১৯,
পরিত্যক্ত ০|র খোঁজে’ (ঘোড়াউত্রা) ২০২০।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. এই লেখাটির জন্য অধীর আগ্রহে থাকি। নতুন চিন্তা তুলে ধরার জন্য লেখকের প্রতি ভালোবাসা রইল।

    উত্তরমুছুন
  2. অনেক অনেক ভালোবাসা জানাই

    উত্তরমুছুন

মন্তব্যের যাবতীয় দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় নেবে না।